ফাইল ছবি
মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের সরকারের সূর্যাস্ত হয় কি না সময় বলবে। তবে উত্তর-পূর্বকে ‘কংগ্রেসমুক্ত’ করার পরে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার ভাগ্যাকাশের সূর্য এ বার উত্তর-পূর্ব ছাড়িয়ে দেশের রাজনৈতিক আকাশে উদয়ের পথে। সৌজন্যে মহারাষ্ট্রের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সঙ্কট। ‘অপারেশন কমল’।
বুধবার সকাল ৬টা ৪০-এ চার্টার্ড বিমানে সুরাত থেকে অসমে উড়িয়ে আনা হয় বিক্ষুব্ধ শিবসেনা বিধায়কদের। রাতের মধ্যেই এসে পৌঁছেছেন আরও পাঁচ জন।
কিন্তু মহারাষ্ট্রের আশেপাশে ‘কমলশাসিত’ রাজ্যের অভাব নেই। তার পরেও, কেন গুয়াহাটি? প্রশ্নের উত্তরেই নিহিত রয়েছে দেশের রাজনীতিতে হিমন্ত-উত্থানের বীজ। মহারাষ্ট্রের সরকার ফেলতে বিজেপি যে ‘অপারেশন কমল’-এর কথা বলছে, তেমন ‘অপারেশনে’ হাত পাকিয়ে ফেলেছেন নিজে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে আসা হিমন্ত। গুয়াহাটিতে হোক বা কাজিরাঙায় হোক, হোটেল-রিসর্টে বিধায়কদের রেখে সরকার ভাঙাগড়ার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত উত্তর-পূর্ব ভারত। দীর্ঘদিন ধরে, গোটা ব্যাপারের প্রধান মস্তিষ্ক, কুশলী ছিলেন হিমন্ত নিজে।
অমিত শাহ ‘কংগ্রেস-মুক্ত উত্তর-পূর্ব’ গড়ার জন্যে হিমন্তেই আস্থা রেখেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই গড়ে দিয়েছিলেন নর্থ-ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। হিমন্তও সেই ‘স্বপ্ন’ সফল করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই নাগাল্যান্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সরকারের বিধায়কদের ভাঙিয়ে বিজেপি জোট সরকার গড়ে। মণিপুর, মেঘালয়ে একক বৃহত্তম দল হয়েও সরকার গড়তে পারেনি কংগ্রেস। ২০১৬ সালে, অরুণাচলে আস্ত পিপিএ সরকারকে রাতারাতি বিজেপি সরকারে পরিণত করার ভেলকি হিমন্তই দেখিয়েছিলেন। হিমন্তকে ত্রিপুরার ভোটেও বিজেপি কাজে লাগিয়েছিল। কাজেই উত্তর-পূর্বে দল ভাঙানোর ‘খেলায়’ হিমন্তের মুনশিয়ানা প্রতিষ্ঠিত। আবার অসমে গত বছরের বিধানসভা ভোটের পরে ‘কিংমেকার’-এর ভূমিকায় থেকে ক্লান্ত হিমন্ত যে ভাবে নিজের দলের সঙ্গেই ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’-এর তাস খেলে শেষ পর্যন্ত নিজের মুখ্যমন্ত্রী পদ নিশ্চিত করেছেন— তা-ও কূটনীতির কপিবুকে কাবিল-এ-তারিফ!
তবে এই প্রথম সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে হিমন্তকে এত বড় ভূমিকায় দেখা গেল। তা-ও মহারাষ্ট্রে মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে। এত দিন জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির হয়ে এই ভূমিকায় দেখা যেত খোদ অমিত শাহকে। তাঁর সঙ্গে হিমন্তের ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। কিছু দিন আগে হিমন্ত এক সভায় শাহকে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বলে অভিহিত করায় বিপুল বিতর্কও বাধে। কিন্তু তার পরেও হিমন্তের উপরে যে দলীয় নেতৃত্বের বিশ্বাস অটল, তার প্রমাণ মিলল।
উত্তর-পূর্বকে বেছে নেওয়ার আরও একটি কারণ হল, এই অঞ্চলে কংগ্রেস বা অন্য বিরোধীদের অস্তিত্বই কার্যত আর নেই। গুয়াহাটিকে ঘাঁটি করে শিবসেনার বিধায়কদের রাখলে বিরোধীদের পক্ষে সেখানে বিক্ষোভ দেখানো বা বিধায়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না। এই আশঙ্কা বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, হরিয়ানা বা মধ্যপ্রদেশেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না।
কংগ্রেস থেকে ভাঙিয়ে আনা হিমন্ত-ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের বৃত্ত, যাকে অসমে ‘দাদা ব্রিগেড’ বলা হয়, তাঁদেরই একাংশ রয়েছেন শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়কদের খাতিরদারিতে। সেই দলের সুশান্ত বরগোঁহাই, পীযূষ হাজরিকারা অবশ্য বলছেন, পরিচিত বিধায়কেরা বেড়াতে এসেছেন। তাই আপ্যায়ন করছেন মাত্র। এ দিকে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার দুর্গ বানিয়ে ফেলা হোটেলের ভিতরে কী চলছে, সে ব্যাপারে বাইরে কিছুই জানা যাচ্ছে না।
কংগ্রেসের অভিযোগ, ভিন্ রাজ্যের বিধায়কদের আপ্যায়নে ব্যস্ত সরকার। কিন্তু রাজ্যের বন্যাদুর্গত মানুষকে দেখার সময় তাদের নেই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা বলেন, ‘‘হিমন্তের নেতৃত্বে রাজনৈতিক চুরি চলছে। এতে রাজ্যের মানসম্মান নষ্ট হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের সঙ্গেও অসমের সম্পর্ক খারাপ হতে বাধ্য।”
খোদ হিমন্তবিশ্ব কী বলছেন? “বন্যার সময়ে পর্যটন বন্ধ থাকে। হোটেল খালি থাকে। এই সময়ে রাজনৈতিক কারণেও যদি কোনও হোটেলে একসঙ্গে ৪০টি ঘর বুক হয়, অনেক পর্যটক আসেন, তবে রাজ্যের লক্ষ্মীলাভ! এর ফলে বন্যার সময়েও যে অসমে পর্যটন সম্ভব— সেই বার্তাই যাবে! মোট কথা, হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলতে নেই।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy