সাংবাদিক বৈঠকে।—নিজস্ব চিত্র।
সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআইয়ের কাছে নানা তথ্য ফাঁস করছিলেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার ইঙ্গিত প্রকাশ্যেই দিচ্ছিলেন তৃণমূলের আসিফ খান। বুধবার সেই তৃণমূল থেকেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা জানিয়ে শাসক দলের নেতাদের উপরে আরও চাপ বাড়ালেন তিনি। তৃণমূলকে কার্যত দুর্নীতিগ্রস্ত দল আখ্যা দিয়ে বললেন, সিবিআই তদন্তে ক্লিনচিট না মিললে, তৃণমূল কংগ্রেসের কলঙ্ক মুছবে না।
তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ২০০৮ সাল থেকেই তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন আসিফ। ২০০৯-এ সরাসরি তৃণমূলে যোগ দেন। বড় মাপের নেতা না হলেও মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন আসিফ। উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের পর্যবেক্ষকও হয়ে হন। সিবিআই সূত্র বলছে, দলের একাংশের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হতো। ফলে সারদার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ সম্পর্কে অনেকটাই অবহিত তিনি।
তদন্তকারীদের দাবি, তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই জেরা করা হয়েছিল আসিফকে। কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত কয়েক জন নেতার নামও তদন্তে জানান তিনি। সোমবারই সল্টলেকে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে এমন ইঙ্গিত আসিফও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে নানা জায়গায় ঘুরেছি। যা দেখেছি, যা শুনেছি, যা বুঝেছিসব সিবিআইকে বলেছি।” দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ইঙ্গিত করে বলেন, “নিজেই নিজেকে ক্লিনচিট দিলে হবে না। সিবিআইয়ের ক্লিনচিটটাই আসল।” অভিযোগের সুর আরও এক ধাপ চড়িয়ে সারদাকে মদত দেওয়ার পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারকেই কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এ দিন নিজের পার্ক সার্কাসের বাড়িতে বসে আসিফ বলেন, সাধারণ মানুষ কারও আশ্বাসেই সারদায় টাকা রেখেছিল। কিন্তু কার আশ্বাসে? উত্তর এড়িয়ে আসিফের জবাব, “আমার সঙ্গে যদি প্রধানমন্ত্রীর ছবি বেরোয়, তা হলে আমার উপরে লোকের একটা বিশ্বাস জন্মাবেই।”
সিবিআই তদন্ত নিয়ে শাসক দলের মনোভাবকেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। বলেছেন, “প্রচুর মানুষের টাকা লুঠ হয়েছে। তার তদন্ত হচ্ছে। সিবিআই তো কারও শত্রু নয়। অসম-ত্রিপুরাতেও শাসক দলের অনেককে জেরা করা হচ্ছে।” অনেকে প্রশ্ন করছেন, এ সব জানা থাকলে এত দিন দল ছাড়েননি কেন আসিফ? কেলেঙ্কারিতে দল জড়িয়ে যাওয়াতেই কি নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইছেন তিনি? কার্যত নিজেকে বাঁচানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। আসিফ বলেন, “বহু গরিব প্রতারিত হয়েছেন। সেই কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই দলে থাকলে মানুষ ভাল ভাবে নেবে না।” কিন্তু মানুষের মনোভাব বুঝতে দেড় বছর সময় লাগল কেন, তার জবাব যদিও আসিফ দেননি।
অনেকে বলছেন, বছর খানেক আগে থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল আসিফের। সেই সূত্রেই সিবিআইকে নানা তথ্য দিয়েছেন। আসিফ এ দিন বলেন, “গত বছরের সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশের পর্যবেক্ষকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। তার পর থেকে মুকুল রায়ের সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। আজ থেকে তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।” এ দিন সাংবাদিক বৈঠকেও গোছা গোছা ফাইল নিয়ে এসেছিলেন তিনি। যদিও সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন একটি ফোন আসার পরে আর ফাইলপত্র ঘাঁটেননি তিনি।
সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, সারদা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার চাপেই আসিফ সাময়িক ভাবে সারদার অধীনে থাকা ‘কলম’ পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে ‘কলম’ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ‘আজকের কলম’ নামে একটি খবরের কাগজ চালু করেন। সে সময় তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতা আসিফের পত্রিকার অফিসে গিয়েছিলেন। মাস কয়েক আগে অবশ্য ‘আজকের কলম’ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও আসিফ এ দিন দাবি করেছেন, তিনি কোনও দিনই ‘কলম’-এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাঁকে সংবাদমাধ্যমের ব্যবসার সঙ্গে জড়াতে কেউ চাপ সৃষ্টিও করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy