আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য এই লেখায় কয়েকটা কথা বিশদে বলতে চাই। গত তিন দিন খুবই খোলা মনে এবং আনন্দের সঙ্গে বালিগঞ্জে প্রচার করছি। বিষয়টা ভীষণ উপভোগও করছি। সব রাস্তা তো বটেই, অলিগলির মধ্যেও ঢুকে পড়ছি।
বালিগঞ্জে দেওয়াল লিখন... —নিজস্ব চিত্র।
শুক্রবার দোল। সবাই নানা রঙে রঙিন। নানা রঙের আবিরে রাঙা গান ভেসে আসছে আমার গঙ্গার ধারের বাড়ির জানালা দিয়ে। মনে অনেক জানালাও খুলে যাচ্ছে। নানা রকম অনুভূতি মনের আনাচেকানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাফ-সেঞ্চুরি করা এ জীবনের খাতায় অনেক আঁকিবুঁকি আছে। স্বাভাবিক ভাবেই তার সঙ্গে নানা স্মৃতি জড়িয়ে। তাতে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, আঘাত যেমন আছে, তেমনই কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা, কিছু অভিমান, রাগ, উষ্মা, বিতৃষ্ণা, বিশ্বাসঘাতকতার স্মৃতিও আছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনুভূতিগুলো ন্যায্য ও সহজ সরল সত্য। আবার কিছু ক্ষেত্রে হয়তো তা নিছকই আবেগপ্রবণ মনের ভাবনা। কিন্তু তার সবটাই যে একান্ত ভাবে শুধু আমারই, তা হলফ করে বলতে পারি।
এমনিতেই কে কী বলছে, কী ভাবে আমাকে ‘জাজ’ করছে, তা নিয়ে কোনও দিন আমার কোনও মাথাব্যথা ছিল না। থাকলে লোকের উপদেশ শুনে ব্যাঙ্কের চাকরি ছেড়ে মুম্বই যাওয়া হত না। প্লেনে বসে হঠাৎ করে কাউকে জিজ্ঞাসা না করে রাজনীতিতে আসা হত না। আবার এক লহমায় রাগে, হতাশায়, উষ্মায় কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে, বাড়ির কারও কথা না শুনে ৫০ বছর বয়েসে নতুন করে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝাঁপ দিতাম না।
গত কয়েক মাস অনেক মানুষের অনেক কথা শুনলাম। তাঁদের নতুন করে চিনলাম। নতুন আলোয় দেখলাম। কিন্তু দিনের শেষে কিছু নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে সমৃদ্ধ হলাম। এটুকুই বলব, যাঁরা আমার পাশে ছিলেন, তাঁদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এবং যাঁরা ছিলেন না, তাঁদেরও। দু’পক্ষই আমার উপকার করেছেন।
আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য এই লেখায় কয়েকটা কথা বিশদে বলতে চাই। গত তিন দিন খুবই খোলা মনে এবং আনন্দের সঙ্গে বালিগঞ্জে প্রচার করছি। বিষয়টা ভীষণ উপভোগও করছি। সব রাস্তা তো বটেই, অলিগলির মধ্যেও ঢুকে পড়ছি। সব ধরনের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হচ্ছে। দোল সেই আনন্দকে আরও রঙিন করে তুলছে। এর আগে যে দলটা করতাম, হ্যাঁ, বিজেপি-র কথাই বলছি, সে দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলাম। ইতিহাসকে তো আর বদলাতে পারব না। তখন খুবই খারাপ লাগত, যখন আমাকে বলা হত, ‘‘ওই গলিতে যেয়ো না। ওই বুথ এলাকায় যেও না। ওখানে আমাদের কোনও ভোট নেই।’’
এ সব প্রতিনিয়ত শুনতে হত। আর সেটা প্রতি মুহূর্তে আমার শিল্পী সত্তাকে আঘাত করত।
হ্যাঁ, বিজেপি-তে থাকার সময় আমাকে দলের হিন্দুত্বের রাজনীতি, ভেদাভেদের মতাদর্শের সঙ্গে এক জন কর্মী হিসেবে মানিয়ে চলতে হত। নানা রকমের ভাষণ দিতে হত। তবে আমি কিন্তু নির্লজ্জ ভাবে আশি-বিশ বা সত্তর-তিরিশের রাজনীতি করিনি। মানুষের মধ্যে হিংসা ছড়িয়ে দেওয়ার নোংরা রাজনীতি কখনওই করিনি, এটা জোর গলায় বলতে পারি। রানিগঞ্জ নিয়ে যে বিতর্কে আমার দিকে আঙুল তোলা হয়েছিল, সে ব্যাপারে ওখানকার ইমাম সাহেব দু’দিন আগে কী বলেছেন, সেটাই আমার এই বক্তব্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।
হ্যাঁ, বিজেপি করেছি। আগেই বলেছি, ইতিহাস আমি বদলাতে পারব না। কিন্তু একটা কথা সব সময় মনে রাখি, গান গাইবার ক্ষমতা আমাকে ঈশ্বর দিয়েছেন। সেই গান বা সুর, ধর্ম এবং জাতপাতের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে যেন কখনও পথ হারিয়ে না ফেলে। অনেকে অনেক পুরনো ভিডিয়ো হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। কিন্তু আসানসোল, যেখানকার মানুষ আমাকে ২০১৪ শুধু নয়, ২০১৯-এও ২ লক্ষ ভোটে জিতিয়েছে, তারা জানে বিভেদের রাজনীতি আমি কোনও দিনই করিনি।
আমি বিজেপি ছেড়েছি কারণ, আমাকে অন্যায় ভাবে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমার প্রতিবাদ আমি পরিষ্কার ভাষায় কোনও রাখঢাক না করেই ব্যক্ত করেছি। যোগ্যতার থেকে জাতপাত, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন যাঁদের নীতি, তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন যে, আট বছরের মোদী-মন্ত্রিসভায় কোনও বাঙালিকে পূর্ণমন্ত্রী না করার অপমান শুধু আমার নয়, সমস্ত বাঙালির। আর তা আমি মাথা নিচু করে মেনে নেব না। নিইওনি। দল এবং তার নেতৃত্বের উপর সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা হারিয়ে অত্যন্ত বিতৃষ্ণা ও উষ্মার সঙ্গে আমি বিজেপি ছেড়েছি। এবং দল বদলানোর পরেও, নির্লজ্জের মতো বিজেপি-তে যারা পদ আঁকড়ে ধরে আছেন, তাঁদের রাস্তায় না হেঁটে, সাংসদ পদও এক লহমায় ছেড়ে দিয়েছি। আমার তৎকালীন সর্বোচ্চ ‘বস্’দের কথাও শুনিনি। সব কিছু ছেড়ে, রাজনীতিও ছেড়ে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে মুম্বই চলে গিয়েছি।
তখন কখনও কল্পনা করিনি যে, দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাকে বলবেন, ‘‘তুমি ভাল কাজ করো। রাজনীতি কেন ছাড়বে? বাঙালির ছেলে, বাংলার জন্য কাজ করবে।’’ ভাবিনি, এই অনুপ্রেরণা জুগিয়ে আমাকে স্বস্নেহে তৃণমূলে জায়গা দেবেন। এ-ও ভাবিনি, দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার পাশে দাঁড়াবেন। ওঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এখন দল আমাকে বালিগঞ্জে প্রার্থী করেছে। আমার দ্বিতীয় ইনিংসের একমাত্র লক্ষ্য— সকলের শান্তি এবং সংহতির জন্য আমাদের মহান বাংলার বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে তুলে ধরে হৃদয় দিয়ে কাজ করা। তা-ই করব, এ আমার অঙ্গীকার। যারা বিভেদের রাজনীতি করে, তাদের বাংলার মানুষ সর্বতো ভাবে পরিত্যাগ করেছে। করেই চলেছে। আমিও এখন ওই সঙ্কীর্ণ মানসিকতার মানুষগুলোর থেকে অনেক দূরে। আর কাছে রয়েছি আপনাদের। আমার গান যাতে আরও বেশি করে শোনেন আপনারা, দিদির নেতৃত্বে সে রকম ভাল কাজ করারই চেষ্টা করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy