কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুক্রবার পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট নিয়ে বিরোধীদের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলছিল। হঠাৎই সেখানে একটি প্রস্তাব দেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান বিচারপতিকে কল্যাণ বলেন, ‘‘ওঁদের বলুন তো, সব প্রার্থীর নাম জমা দিতে। সোমবারই সেই নাম জমা পড়ুক।’’
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিরোধীদের জনস্বার্থ মামলার শুনানির মধ্যে কল্যাণের ওই বক্তব্যে বিরোধীদের প্রতি খানিকটা রাজনৈতিক কটাক্ষ ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, কল্যাণ পেশায় আইনজীবী হলেও তিনি তৃণমূলের প্রথম সারির সাংসদও। আর পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে জল্পনা শুরু হওয়ার পর থেকেই শাসক তৃণমূল বলে আসছে, পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের সমস্ত আসনে প্রার্থী দেওয়ারও ক্ষমতা নেই। তাদের সেই সংগঠনই নেই। বস্তুত, বৃহস্পতিবারেই তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘প্রার্থী দিতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রীকে বলুন। বা সরাসরি আমাকে ফোন করুন। আমি মনোনয়ন জমা দেওয়ানোর ব্যবস্থা করিয়ে দেব!’’ ফলে অনেকেই মনে করছেন, মামলার সওয়াল করতে উঠে কল্যাণ বিরোধীদের ৫০ শতাংশ প্রার্থীর নাম জমা দিতে বলে তাদের পরোক্ষে খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন।
শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ওই জনস্বার্থ মামলাটি ওঠে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্টের বিরোধিতা করে পাঁচ দফা অভিযোগ জানিয়েছিলেন মামলাকারীরা। যার মধ্যে মূল অভিযোগ ছিল প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে। বিরোধীরা বলেছিলেন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় অত্যন্ত কম। এতে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে অসুবিধা হবে। ২০১৮ সালেও এই সমস্যা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন মামলাকারীরা। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জিও জানানো হয়েছিল। কল্যাণ সে প্রসঙ্গেই প্রধান বিচারপতিকে কিছু পুরনো তথ্য জানান। যা নিয়ে বিজেপি আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর এক প্রস্ত কথা কাটাকাটিও হয়।
প্রধান বিচারপতিকে কল্যাণ বলেন, ‘‘ধর্মাবতার! একটা জিনিস আপনাকে জানানোর ছিল। এর আগে পুরসভা ভোটের মামলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের আর্জি করা হয়েছিল। কিন্তু তা মঞ্জুর হয়নি।’’ বিজেপির আইনজীবী সেই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, ‘‘এটা সঠিক তথ্য নয়। তা ছাড়া ওই মামলার তো নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে।’’ কল্যাণ তখন বলেন, ‘‘তা হলে ধর্মাবতার, আমি কি একটা পরামর্শ দিতে পারি?’’ প্রধান বিচারপতি মাথা নেড়ে সম্মতি দেওয়ার পর কল্যাণ বলেন, ‘‘ওঁদের বলুন সব প্রার্থীর নাম জমা দিতে। সোমবারই সব প্রার্থীর নাম আসুক!’’ বিজেপির আইনজীবী তখন বলেন, ‘‘সব কিছুতে রাজ্য মন্তব্য করছে কেন? নির্বাচন তো ওরা পরিচালনা করছে না!’’ কল্যাণ পাল্টা বলেন, ‘‘আপনারা যখন আদালতে এসেছেন, তা হলে দিন না প্রার্থীদের লিস্ট! কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নাম জমা দিতে বলুন!’’
কল্যাণের প্রস্তাব মঞ্জুর করেননি প্রধান বিচারপতি। কিন্তু তৃণমূলের আইনজীবী-সাংসদের ইঙ্গিত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, তা হলে কি পরোক্ষে বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন কল্যাণ? পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের মোট ৩৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩,২৮৩টি আসনে প্রার্থী দিতে হবে বিরোধীদের। এই বিপুল সংখ্যক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে সমস্যার কথা আগেও তুলেছেন বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ৮ জুলাই এক দফায় পঞ্চায়েত ভোট হবে জানিয়ে কমিশন বলেছিল, মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে ৯-১৫ জুনের মধ্যে। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বিজেপি-সহ রাজ্যের অধিকাংশ বিরোধী দল। তাদের অভিযোগ ছিল, মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য অত্যন্ত কম সময় বরাদ্দ হয়েছে। মোট নির্বাচনী ক্ষেত্র দেখলে কেন্দ্রপিছু মনোনয়নের জন্য গড়ে ৩৯ সেকেন্ড সময় দেওয়া হয়েছে বলে দাবি। বিরোধীদের বক্তব্য, এই সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা কী করে মনোনয়ন জমা দেবেন! আর বিরোধীদের আশঙ্কা, ২০১৮ সালের মতো এই পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বহু প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন না!
কিন্তু আদালতে কল্যাণ যা বলেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, তিনি মনে করছেন, তিন দিনের মধ্যে বিরোধীরা ৫০ শতাংশ প্রার্থীর তালিকা জমা দিতে পারবেন না। কারণ, তাঁদের অত প্রার্থীই থাকবে না। ফলে প্রার্থীপিছু মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য কম সময় বরাদ্দ করার যে কথা বলা হচ্ছে, তার খুব ‘তাৎপর্য’ নেই। বিরোধীদের সেই ‘প্রস্তুতি’ও নেই। কল্যাণের প্রস্তাব শুনে প্রধান বিচারপতির মৃদু হেসে বলেন, ‘‘সে সবের প্রয়োজন নেই।’’
তবে পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য ৫ দিনের সময়সমীকে ‘কম’ বলেই অভিমত দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে মনোনয়ন থেকে ভোটগ্রহণ— পুরো সময় বরাদ্দ অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে করা হয়েছে। মনোনয়নে সময় খুব কম দেওয়া হয়েছে। ভোটের নির্ঘণ্ট পুনর্বিবেচনা করা উচিত। তবে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকারের উপরেই ছেড়েছে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy