বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
আইনজীবীদের একাংশ তাঁর এজলাসে আসেননি। তাই তিনিই যাবেন আইনজীবীদের কাছে। তাঁদের সংগঠনের অফিসে গিয়ে এজলাসে আসার অনুরোধ জানাবেন বিচারপতি। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানালেন, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের এজলাসে বসেই বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি দুপুর দেড়টায় বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে যাব। আইনজীবীদের কাছে অনুরোধ করব। তাঁরা যেন শুনানিতে অংশ নেন।’’
গত সোমবারের পর বৃহস্পতিবার সকালে এজলাসে বসেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মাঝে মঙ্গল এবং বুধবার তিনি এজলাসে বসেননি। তবে দু’দিন পরে এজলাসে বসলেও খুব বেশি ক্ষণ সেখানে থাকেননি তিনি। ঠিক ২৪ মিনিট পর বিচারপতি উঠে যান এজলাস ছেড়ে।
বৃহস্পতিবার সকালে নিয়মমাফিক শুরু হয়েছিল আদালতের নিত্য কাজ। হাই কোর্টের ১৭ নম্বর কোর্টে বিচারপতি তাঁর এজলাসে এসে বসেন ১১টা বেজে ৩৩ মিনিটে। তবে তার পরেই বেলা ১১টা বেজে ৫৭ মিনিটে বেরিয়েও যান তিনি। সাম্প্রতিক অতীতে এত দ্রুত এজলাস ছেড়ে উঠতে দেখা যায়নি বিচারপতিকে। তাঁর এজলাসে একের পর এক মামলার শুনানি হতে থাকে। ভিড়ে ভরে থাকে এজলাসকক্ষ। বৃহস্পতিবার অবশ্য বিচারপতির কক্ষে ভিড় ছিল অনেকটাই কম। কারণ, আইনজীবীদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন না সেখানে। তালিকা অনুযায়ী প্রায় ১১টি মামলা শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল। তবে বহু মামলারই আইনজীবী উপস্থিত হননি। ২৪ মিনিটে মোট ৫টি মামলার শুনানি হয়। এর মধ্যে দু’টি মামলায় সওয়াল করেন আইনজীবী। বাকি তিনটি মামলায় মামলাকারী নিজেই নিজের হয়ে বিচারপতির কাছে সওয়াল করেন।
এর পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার যদি নির্দিষ্ট মামলাগুলির দু’পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত না থাকেন, তবে এক পক্ষের সওয়াল শুনে তিনি কোনও নির্দেশ দেবেন না। এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বিচারপতি জানিয়ে যান, দুপুর সাড়ে ১২টায় কয়েকটি মামলা ওঠার কথা রয়েছে। তখনই তিনি এজলাসে আসবেন।
পরে সাড়ে ১২টায় এজলাসে এসেই বিচারপতি জানান, তিনি আইনজীবীদের কাছে গিয়ে এজলাসে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করবেন। গত সোমবার বিচারপতির একটি নির্দেশ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল আইনজীবীদের একাংশ। তাঁর এজলাস বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীদের সংগঠন বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বব্রত বসু মল্লিক। বৃহস্পতিবার বিচারপতি বলেন, ‘‘বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বব্রত বসুমল্লিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি দুপুর দেড়টায় বারে যাব। জানার চেষ্টা করব, কেন আমার বিরুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে বার।’’
প্রসঙ্গত যে ঘটনার প্রেক্ষিতে বিচারপতির এজলাস বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বার, সেটি ঘটে সোমবার। এক আইনজীবীর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে শেরিফের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে তিনি সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিলেও আইনজীবীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিচারপতির এজলাস বয়কট করবেন বলে জানান। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বব্রত এ-ও জানিয়েছিলেন যে, যত দিন না বিচারপতি এই ঘটনার জন্য ওই আইনজীবী এবং বারের কাছে দুঃখপ্রকাশ করছেন, তত দিন এই প্রতিবাদ চলবে।
এর পর মঙ্গল আর বুধবার বিচারপতি নিজেই এজলাসে আসেননি। বৃহস্পতিবার তাঁর এজলাসে আইনজীবীদের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করার পর তিনি জানান দুপুরেই আইনজীবীদের এজলাসে আসার অনুরোধ করতে যাবেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy