তাঁর প্রিয় শান্তিনিকেতনে আর ফিরবেন না ‘মানিদা’। শিল্পী কে জি সুব্রমনিয়ন। বুধবার গুজরাতের বডোদরার বাড়িতে জীবনাবসান হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। কেরলের এই শিল্পীর স্মৃতি হিসেবে শান্তিনিকেতনের কলাভবনে এবং মাস্টারমশাই নন্দলাল বসুর বাড়িতে রয়ে গেল তাঁর তৈরি ম্যুরাল। শেষ বার শান্তিনিকেতনে এসে সেখানকার বাড়িটিও বিশ্বভারতীকে দান করে গিয়েছিলেন শিল্পী।
অবন ঠাকুর, নন্দলাল বসু ও বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের পর কে জি সুব্রমনিয়নই সেই বিরল শিল্পী, যিনি ছবি আঁকার পাশাপাশি ছোটদের জন্য ছবি লিখেছেন ও গল্প এঁকেছেন, লিখেছেন শিল্প নিয়ে প্রবন্ধ, তৈরি করেছেন কাঠ ও ধাতুর কুটুমকাটামে অজস্র ভাস্কর্য-অবয়ব, ডিজাইন করেছেন টেক্সটাইল্স। সমান তালে করে গিয়েছেন শিক্ষকতাও।
১৯২৪ সালে কেরলের এক তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম, চেন্নাইয়ের প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি পড়তে পড়তে গাঁধীর ডাকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে ছ’মাসের জেল। তত দিনে ছবি আঁকতে শুরু করেছেন তিনি। অতঃপর নন্দলাল বসুর ডাকে শান্তিনিকেতনে ছাত্র হওয়া। শিক্ষক হিসেবে আরও পেলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও রামকিঙ্কর বেজকে। এর পরে ষাটের দশকে নিজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন বডোদরায়। আটের দশকে ফেরা তাঁর শিক্ষাজীবনের কলাভবনে, সেখানেই আমৃত্যু ‘প্রফেসর এমেরিটাস।’
তাঁর শিল্পকলা তাই সব জায়গা থেকে পাথেয় সংগ্রহ করে তৈরি করে নেয় নিজস্ব ভাষা ও আঙ্গিক। একইসঙ্গে তাতে মিশে যায় রামকিঙ্করের ঘরানায় লোকজীবনের গতিমত্তা, বিনোদবিহারীর মতোই শক্তিশালী তুলির আঁচড়। পুরোটা আবার দেশীয় শিক্ষকদের অবদান নয়। পিকাসো, মাতিসের ঘরানাকেও তিনি মিশিয়ে দিয়েছিলেন হরেক ছবিতে। চিনা ক্যালিগ্রাফির আঁচড়ও দুর্লক্ষ্য ছিল না। সুব্রমনিয়নের ছবি তাই একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ও ভারতীয়। রাজনীতির কেরল লাইন-বেঙ্গল লাইন বিভাজন সেখানে ছিল না।
এ দিন শিল্পীর প্রয়াণের খবরে শোকের ছায়া নামে কলাভবনে। সন্ধ্যায় কলাভবনের চাতালে তাঁর স্মরণসভায় যোগ দেন বিশিষ্ট শিল্পী যোগেন চৌধুরী, কলাভবনের অধ্যক্ষ তথা ‘মানিদা’র ছাত্র দিলীপ মিত্র, অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy