শিলিগুড়ির দুর্ঘটনাস্থলে ঘাতক সেনার ট্রাক। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
খাস শিলিগুড়ি শহরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাথে উঠে পড়ল সেনার একটি ট্রাক। তার বেসামাল ধাক্কায় এক জন মারা গিয়েছেন, ৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর। ভেঙেছে রাস্তার পাশের বেশ কয়েকটি ঝুপড়ি দোকান, গাড়ি এবং কয়েকটি মোটরবাইকও। শেষ পর্যন্ত একটি খাবার দোকানের সামনে ময়লা ফেলার দু’টি ভ্যাটে ধাক্কা দিয়ে থামে ট্রাকটি। চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হিলকার্ট রোড ধরে মহানন্দা সেতু পেরিয়ে শিলিগুড়িতে ঢোকার পরে এয়ারভিউ মোড় থেকে বর্ধমান রোড চলে গিয়েছে জলপাইগুড়ির দিকে। জলপাইগুড়ির দিক থেকেই আসছিল ট্রাকটি। ওই রাস্তায় জনবহুল ঝঙ্কার মোড়ের ঠিক আগে বাঁ দিকে একটি শপিং মল রয়েছে। তার সামনে এসেই শুক্রবার বিকেলে বেসামাল হয়ে যায় ট্রাক। ফুটপাথে উঠে পড়ে রাস্তার ধারের একটির পর একটি ঝুপড়ি দোকান, দাঁড় করানো বাইক, গাড়ি, পথচারীদের ধাক্কা দিতে থাকে বেশ বড় ও ভারি ট্রাকটি।
এই ঘটনায় মারা গিয়েছেন লালু রায় (৪৮)। তাঁর বাড়ি কাছেই মহারাজা কলোনিতে। পুরানো বস্তা কেনাবেচার ব্যবসা করেন। কাজের পর বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর গায়ের উপরে উঠে যায় ট্রাকটি। আর যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের কেউ শপিং মলে এসেছিলেন। কেউ রাস্তায় ধারে দাঁড়িয়ে রিকশা, অটোর অপেক্ষা করেছিলেন। আহত রঘুবীর রায় বলেন, ‘‘ট্রাকটি যেন দৈত্যের মতো গায়ে এসে পড়ল। নড়ার সময়ই পেলাম না।’’ তাঁদের বক্তব্য, ট্রাকটি বেশ জোরেও চলছিল।
ট্রাকটি আসছিল সেনার হাসিমারা ছাউনি থেকে। যাচ্ছিল ব্যাংডুবি। চাল্লাচ্ছিলেন ধর্মেশ্বর রাভা, তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক সেনাকর্মী। সেনাবাহিনীর ৩৩ কোরের মুখপাত্র কর্নেল আকাশ বজাজ বলেন, ‘‘ধর্মেশ্বর সেনাকর্মী নন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক মাত্র।’’ পুলিশের পাশাপাশি সেনাও তদন্ত শুরু করেছে। তিনি জানান, গাড়ির যন্ত্রাংশের কোনও সমস্যা হয়েছিল কি না, তা-ও সেনা খতিয়ে দেখছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। যদিও ডাক্তারি পরীক্ষার পরে সে প্রমাণ মেলেনি বলে পুলিশ জানায়। ধর্মশ্বের বলেন, ‘‘অনেকখানি কাঁচা সুপারি খেয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছিলাম।’’ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন, কাঁচা সুপুরি বা তাম্বুল খেয়ে নেশা করা অনেকের অভ্যাস।
দুর্ঘটনার পরেই অবরোধ শুরু হয়। ওই শপিং মল-সহ এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। উত্তেজিত বাসিন্দারা জানান, মলটির সামনে দিনরাত ভিড় থাকে। ঘটনাস্থলের কাছেই স্কুলবাসের স্টপেজও। গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড়ও রয়েছে। কিন্তু উৎসব বা অনুষ্ঠান ছাড়া সেখানে ট্রাফিক পুলিশ সেখানে থাকে না। জোরে গাড়ি চলাচল করলেও কেউ দেখার নেই।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, ঝঙ্কার মোড়ের আগে জলপাই মোড় এলাকায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে চালক ও তাঁর সহযোগী খাওয়াদাওয়া করেন। সেখানকার বাজার থেকে পান ও প্রচুর কাঁচা সুপারিও খান। তারপরেই গাড়িটি চালাতে শুরু করেই বেসামাল হয়ে পড়েন চালক। সহযোগী তাঁকে রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করাতে বললেও তিনি তা পারেননি। টালমাটাল অবস্থায় কিলোমিটার খানেক এগিয়ে এসে মলটির কাছে গিয়ে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি চালক।
ঘটনার পরপরই আহতদের সুচিকিৎসা এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে অন্তত দু’ঘন্টা ওই রাস্তায় দফায় দফায় অবরোধ শুরু হয়। ধর্মেশ্বরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী ধর্মেশ্বর এবং তাঁর সহকর্মীকে উদ্ধার করে বহুতল শপিং মলটির ভিতরে একটি দোকানের পাশে ঢুকিয়ে রাখেন। পরে বিরাট পুলিশ বাহিনী এসে তাঁকে উদ্ধার করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy