হাঁসড়ার জনসভায় অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরাকে কেন্দ্র করে বারবার রক্ত ঝরেছে এলাকায়। পাড়ুইয়ের মাখড়ায় দলের সেই ঘরছাড়াদের এ বার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রামে ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেললেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল!
শাসকদলের দাপুটে নেতার এই হুঙ্কারের পরেই ফের তেতে উঠেছে পাড়ুই। বিরোধী এবং প্রশাসনের একাংশের আশঙ্কা, আলোচনার মধ্যে সমস্যার সমাধানে না গিয়ে অনুব্রত ফের পাড়ুইয়ে দু’দলের সংঘর্ষের আশঙ্কাকেই বাড়িয়ে দিলেন। রবিবার বিকেলে পাড়ুইয়ের হাঁসড়া গ্রামে দলের ‘সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সভা’য় অনুব্রত বলেন, ‘‘যারা বিজেপির কথায় চলছেন, মারপিট করছেন, পরিণাম খুব খারাপ হবে!’’ নেতার হুঁশিয়ারি, ‘‘লেবু কচলাতে কচলাতে তেতো হয়ে যায়, বন্ধু। তখন পাশে কেউ থাকবে না। প্রশাসনও ছেড়ে কথা বলবে না!’’ অনুব্রতর দাবি, ‘‘এসপি-র, এসডিপিও-র সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। গ্রামছাড়ারা দু’দিনের মধ্যেই ঘরে ফিরবেন!” কিন্তু, কী ভাবে, স্পষ্ট করেননি অনুব্রত।
১৮ মে ঘরছাড়াদের মাখড়ায় ফেরাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। সংঘর্ষ, বোমাবাজিতে উত্তেজনা ছড়ায় আশপাশের গ্রামেও। বোমার ঘায়ে জখম হন তিন জন। গত অক্টোবরেও তৃণমূলের ওই ঘরছাড়াদের ফেরানোর চেষ্টা হয়েছিল। তখনও সংঘর্ষে নিহত হন তৃণমূলের দু’জন এবং বিজেপির এক কর্মী। বাম আমলেও কেশপুর-গড়বেতা বা নন্দীগ্রাম-খেজুরি পর্বে এমন বহু ঘটনা ঘটত। বিজেপি প্রভাবিত মাখড়ায় দলীয় সমর্থকদের ঘরে ফেরাতে গিয়ে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, কর্মী-সমর্থকদের গ্রামে ফিরতে দিচ্ছে না বিজেপি। বিজেপির পাল্টা দাবি, ঘরছাড়াদের ফেরানোর নামে এলাকা দখলের চেষ্টাই করছে তৃণমূল।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার দাবি, ‘‘বিজেপির সন্ত্রাসে যাঁরা দীর্ঘদিন গ্রাম ছেড়ে রয়েছেন, তাঁদের ফেরানোয় দোষের কী?’’ আড়ালে জেলা বিজেপির নেতারাও মানছেন, এর মধ্যে দোষের কিছু নেই। কিন্তু তাঁদের মতে, এর জন্য নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদ্ধতি রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে এ কাজ করা উচিত বলে মত পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একাংশেরও।
অনুব্রতর হুঙ্কারের পর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে বলেই আশঙ্কা করছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ঘরছাড়াদের জোরজবরদস্তি ফেরাতে গেলে পাড়ুই ফের অশান্ত হবে।’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও অভিযোগ করেন, ‘‘মাখড়ায় এই ধরনের ঘটনা ঘটবে, আর মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলবেন ‘সব সাজানো’। ফলে পুলিশ-প্রশাসন কিছু করবে না।’’
এই চাপান-উতোরে সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। গত বছর মাখড়ায় নিহত বিজেপি কর্মী তৌসিফের বাবা শেখ আসগর আলি ও নিহত তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেলের স্ত্রী তফিজা বিবি একই সুরে বলছেন, ‘‘গাঁয়ে আর খুনখারাপি চাই না। আমাদের মতো আর কারও ঘরের কোল আঁধার হোক, সেটাও চাই না।’’
যাঁদের উপর তাঁরা ভরসা করছেন, সেই পুলিশ-প্রশাসনের কী বক্তব্য? ফোন করেও সাড়া মেলেনি বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের। উত্তর মেলেনি এসএমএস-এরও। দু’বার ফোন কেটে দিয়েছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীও।
তবে, অনুব্রতকে এ দিন কিছুটা সুর নরমও করতে দেখা গিয়েছে। মাঝে একবার তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা বিজেপি করবেন, তাঁরা একশো বার বিজেপি করবেন। আমরা তো বারণ করিনি। বিজেপি করুন, কিন্তু বোম বারুদ নিয়ে নয়।’’ কেষ্ট মণ্ডলের এই মিঠে সুরে অবশ্য ভুলতে নারাজ বিজেপি। দলের বীরভূম জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা বলেন, ‘‘সামনে এক কথা বলা আর আড়ালে গিয়ে উল্টো কাজ করা তৃণমূলের স্বভাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy