অনুব্রত মণ্ডল
কলকাতা থেকে আসানসোল সংশোধনাগারে ফেরার পথে আবারও স্বমহিমায় দেখা গেল অনুব্রত মণ্ডলকে। হুগলির গুরাপের কাছে একটি ধাবায় মধ্যাহ্নভোজের পর বেশ খোশমেজাজেই কথা বললেন গরু পাচার মামলায় জেলবন্দি বীরভূমের দাপুটে নেতা। নিজের ঢঙেই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমকে বলে দিলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট তো এখনও ঘোষণা হয়নি। হলে দেখে নেবেন।’’ এত দিন পর অনুব্রতকে আবার স্বমেজাজে দেখে সংবাদমাধ্যম তাঁর কাছে ‘নতুন ডায়ালগ’-এর কোনও পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চায়। অনুব্রত বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট তো এখনও আসেনি। নতুন ডায়ালগ পঞ্চায়েত ঘোষণা হলে দেব।’’
মঙ্গলকোট বিস্ফোরণ মামলায় শুক্রবার কলকাতায় সাংসদ-বিধায়কদের জন্য নির্দিষ্ট আদালতে হাজির করানো হয় অনুব্রতকে। ওই মামলায় তথ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস ঘোষণা করা হয় তাঁকে। এর পর আদালত থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় তিনি বলেন, ‘‘সত্যের জয় হল।’’ অন্য মামলাতেও শীঘ্রই তিনি মুক্তি পাবেন কি না, তা জিজ্ঞাসা করা হলে কেষ্ট-সুলভ জবাব, ‘‘কেন? আমি কি অন্যায় কিছু করেছি নাকি? খালি দেখে যাও। কোনও অন্যায় করিনি। সবেতেই বেকসুর খালাস হব।’’ এর পরেই আসানসোলের উদ্দেশে রওনা হয় অনুব্রতের গাড়ি। পথে দুপুর গড়িয়ে যাওয়ায় গুরাপের কাছে গাড়ি থামিয়ে একটি ধাবায় তৃণমূল নেতার মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা হয়। তার পরেই সংবাদমাধ্যমের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দেন অনুব্রত।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘ফাঁকা থাকবে বিডিও অফিস। নিজে নিজেই ফাইল করবে আবার নিজে নিজেই চলে আসবে।’’ বিরোধীদের বার্তা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হলে দেখে নেবেন। আমরা চাই সুস্থ ভাবেই ভোট হোক। ভদ্র ভাবে সুস্থ ভাবে ভোট হবে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোনও গন্ডগোল হয়েছিল কি? সেই রকম ভোট হবে।’’
অনুব্রত ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, প্রায় ১২ বছরের পুরনো মঙ্গলকোট বিস্ফোরণ মামলায় মুক্তি তো বটেই, বৃহস্পতিবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে ‘কেষ্টদা’র ফুরফুরে মেজাজেই থাকার কথা। নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় কর্মীদের সামনে অনুব্রতকে ‘বীর’-এর সম্মান দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা। নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় জেলবন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম কার্যত মুখে না আনলেও অনুব্রত সম্পর্কে মমতা বলেন, ‘‘কী করেছে কেষ্ট? কেষ্ট বেচারা, শরীরটা একটু খারাপ। প্রতি নির্বাচনে ওঁকে নজরবন্দি করে রেখে দেওয়া হয়।’’ দলীয় কর্মীদের তাঁর বার্তা, ‘‘বীরের সম্মান দিয়ে ওঁকে জেল থেকে বার করে আনবেন। এই মানসিকতায় তৈরি থাকুন।’’ অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ সূত্রেরই বক্তব্য, মমতাকে পাশে পেয়ে পুরনো ‘আত্মবিশ্বাস’ ফিরে পেয়েছেন অনুব্রত। স্বাভাবিক ভাবেই ‘কেষ্টদা’র কথাবার্তায় তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে এমপি-এমএলএ আদালতের উদ্দেশে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে রওনা দেওয়ার সময় মমতার মন্তব্যের কথা তাঁকে জানানো হলে অনুব্রতের শরীরী ভাষা বদলে যেতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘‘জেলে কন্টিনিউ কেউ থাকে না। ছাড়া পায়। নিশ্চয়ই ছাড়া পাব। এ আর বলার কী আছে।’’ আসানসোল থেকে কলকাতা হয়ে আবার আসানসোল— অনুব্রতের এই সফরে যাঁরা ‘সঙ্গী’, তাঁদের একাংশের দাবি— সকাল থেকে যে অনুব্রতের মধ্যে ফুরফুরে মেজাজ দেখা গিয়েছিল, সারা দিনই সেটাই তাঁর মুখচোখে ধরা পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy