Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশের মাথায় কেষ্টর হাত, ‘বেফাঁস’ মনিরুল

হাটে হাঁড়িটা ভেঙেই দিলেন মনিরুল ইসলাম। বিরোধীরা যা বলে এসেছেন এত দিন, এ বার সেটাই শোনা গেল লাভপুরের বিতর্কিত তৃণমূল বিধায়ক মনিরুলের মুখে। প্রকাশ্য সভায় তিনি বলে দিলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের হাত বীরভূমের পুলিশের মাথায় উপরে রয়েছে!’’

জনপ্রিয়। সাঁইথিয়ায় তৃণমূলের কর্মিসভায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: অনির্বাণ সেন।

জনপ্রিয়। সাঁইথিয়ায় তৃণমূলের কর্মিসভায় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: অনির্বাণ সেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

হাটে হাঁড়িটা ভেঙেই দিলেন মনিরুল ইসলাম। বিরোধীরা যা বলে এসেছেন এত দিন, এ বার সেটাই শোনা গেল লাভপুরের বিতর্কিত তৃণমূল বিধায়ক মনিরুলের মুখে। প্রকাশ্য সভায় তিনি বলে দিলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের হাত বীরভূমের পুলিশের মাথায় উপরে রয়েছে!’’

বুধবার সাঁইথিয়া ব্লকের পুরসভা এবং ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করে তৃণমূল। হাজার দেড়েক লোকের উপস্থিতিতে কী ভাবে ভোট করতে হবে, সেই নিদান দিচ্ছিলেন মনিরুল। তখনই কথা প্রসঙ্গে মনিরুল বলেন, ‘‘বীরভূমের পুলিশ-প্রশাসন ভাল কাজ করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ পঙ্গু নয়।’’ এর পরেই তাঁর ওই মন্তব্য।

প্রত্যাশিত ভাবেই মনিরুলের মন্তব্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। তারা বলছে, একদম ঠিক বলেছেন বিধায়ক। বীরভূমে তৃণমূল আর পুলিশ—দুই-ই তো চালান জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত! এমনিতে রাঢ়বঙ্গের এই জেলায় পুলিশ নিয়ে একটা চালু রসিকতা আছে। অনেকেই বলেন, এই জেলার এসপি-র নাম কেষ্ট (অনুব্রত) মণ্ডল। কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ মনিরুল এ দিন সেই মস্করাটাই বেআব্রু করে দিয়েছেন বলে দাবি বিরোধীদের। তাঁদের বক্তব্য, প্রকাশ্য সভায় পুলিশের উপরে ‘বোম’ মারার নিদান দিয়েও পার পেয়ে গিয়েছেন এই দাপুটে নেতা। অতএব পুলিশের মাথায় যে তাঁর হাত আছে, তা আর নতুন কথা কী! ‘‘আসলে পুলিশ জানে, কেষ্ট মণ্ডলের মাথায় আছে নবান্নের হাত!’’—সরস মন্তব্য এক সিপিএম নেতার।

সম্প্রতি পরের পর কর্মিসভায় অনুব্রত বলেছেন, যে যত বেশি লিড দেবেন, তাঁর তত পুরস্কার। আর না জেতাতে পারলে বহিষ্কার। বিরোধী শিবিরের ব্যাখ্যা, এই ‘টোপে’র মধ্যে দিয়ে ভোট লুঠের দাওয়াই দিয়েছেন জেলা সভাপতি। ভোট করাতে গিয়ে পুলিশের হাতে পড়লে সভাপতিই ‘বুঝে নেবেন’, এ দিন সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন লাভপুরের বিধায়ক।

বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের মত, ‘‘বিধায়ক বলতে চেয়েছেন, ভোটে যেন-তেন-প্রকারে দলকে জেতাতে হবে। পুলিশের ঝামেলা সামাল দেওয়ার জন্য অনুব্রত আছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মির কটাক্ষ, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, পুলিশকে ব্যবহার করে কেমন ভোট করাবে তৃণমূল।’’

ঘটনা হল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও গত লোকসভায় বীরভূমের বহু বুথে ভোট লুঠের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। বিরোধী সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে দেওয়া হয়েছিল, ‘ভোট দেওয়ার দরকার নেই। ওটা পড়ে যাবে।’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসিয়ে রেখে অনুব্রত ‘নির্বিঘ্ন’ ও ‘অবাধ’ ভোট করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এক বিরোধী নেতার আশঙ্কা, ‘‘বিধানসভা ভোটেও সেই ছবিরই পুনরাবৃত্তি হবে। প্রশাসনও ফের ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকবে। মনিরুলের কথা থেকেই সেটা স্পষ্ট।’’

কালীঘাটে ‘শনিবারের বৈঠকে’ জেলার নেতাদের বেফাঁস মন্তব্য করতে বারবার নিষেধ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় দলীয় বিধায়কের মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরেই রাখতে চেয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিছু বলতে চাননি বীরভূমের পর্যবেক্ষক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে দলের এক শীর্ষ নেতা বিরক্তির সঙ্গে বলছেন, ‘‘ভোটের আগে এই ধরনের আলটপকা মন্তব্য করে মনিরুল দলেরই অস্বস্তি বাড়িয়েছেন।’’ এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না বলে জবাব এড়িয়েছেন অনুব্রতও।

আর পুলিশ?

এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি বীরভূমের ‘আসল’ পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের সঙ্গে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy