ছবি: সংগৃহীত।
ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সাম্প্রতিক অশান্তি, শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জেরে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং দুই সহ-উপাচার্য। তাঁরা আপাতত নিরস্ত হলেও পদত্যাগ করলেন ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ডিন অমিতাভ দত্ত। উপাচার্যকে দেওয়া পদত্যাগপত্রে ইস্তফার কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত ও স্বাস্থ্যের কথা লিখেছেন তিনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানাচ্ছে, এক ছাত্রনেতার ব্যবহারে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েই ইস্তফা দিয়েছেন অমিতাভবাবু। ৭ ডিসেম্বর তিনি স্থায়ী ডিনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
‘‘ওঁর পদত্যাগপত্র পেয়েছি। আমি ওঁকে অনুরোধ করব, উনি যেন পদত্যাগ না-করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। তা বলে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যায় না,’’ বলেন উপাচার্য।
এর আগে বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদের চেয়ারপার্সনের ব্যবহারে অপমানিত হয়ে মাসখানেকের মধ্যে পরপর পদত্যাগ করেন দু’জন ডিন। ভর্তিতে অস্বচ্ছতা, পরীক্ষার ফল ঘোষণায় দেরি, ফলাফলে অসঙ্গতির অভিযোগে যাদবপুরে কিছু দিন ধরেই ছাত্র আন্দোলন চলছে। বার বার পড়ুয়ারা ঘেরাও করেছেন সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন এবং অন্যদের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদের (ফেটসু) চেয়ারপার্সন অরিত্র মজুমদার সোমবার বেশি রাতে অমিতাভবাবুকে ফোন করে ভর্তি ও পরীক্ষার ফলপ্রকাশের প্রক্রিয়া জুমস সংস্কারের জন্য গড়া দ্বিতীয় কমিটির ‘রেজোলিউশন’ চান। উপাচার্যকেও ফোন করে একই দাবি করেন। উপাচার্য তাঁকে জানান, তিনি বিষয়টি দেখেন না। আর ডিন জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্বাক্ষরের পরে রেজিস্ট্রারই বিষয়টি প্রকাশ করবেন। অভিযোগ, উপাচার্য ও ডিনের সঙ্গে অত্যন্ত অমার্জিত ব্যবহার করেন অরিত্র। মঙ্গলবার সকালে উপাচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের দুই শতাংশ সেরা বিজ্ঞানীর অন্যতম অমিতাভবাবু।
অরিত্র জানান, অমিতাভবাবু এই কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন না। ‘‘এত দিন ধরে কর্তৃপক্ষ যে-সব বিষয় নিয়ে জট পাকিয়ে রেখেছেন, তাতে স্যর (অমিতাভবাবু) কেন, যিনিই আসুন, চাপে পড়বেন। উনি হয়তো সেই চাপে পড়েছেন। এবং তার থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যাগুলো মেটাতে চাই। যা করা হয়েছে, ছাত্রস্বার্থেই করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে পালিয়ে যেতে চাইছেন।’’
আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের ব্যবহার নিয়ে বারে বারেই প্রশ্ন উঠছে। উপাচার্যকে যখন-তখন ফোন করে বা অনলাইনে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় প্রশ্ন করা হচ্ছে, ‘এত টাকা মাইনে পেয়েও বাড়িতে বসে থাকছেন কেন’, কেন ‘কথার খেলাপ’ করছেন ইত্যাদি। অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের বৈঠকের কথা এক ছাত্রের ফেসবুকে লাইভ করে দেওয়া হয়েছে। চিরঞ্জীববাবুকে খোলা আকাশের নীচে ঘেরাও করে রেখে তা-ও লাইভ করা হয়েছে ফেসবুকে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার সময় গোপনে তা রেকর্ড করে অন্যত্র শোনানো হচ্ছে।
পড়ুয়াদের একাংশের এই আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবির প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। বার বার ঘেরাওয়ের জেরে শিক্ষক সমিতি (জুটা) উপাচার্যকে জানিয়েছিল, তারা আর মুখোমুখি বসে জুমস কমিটির বৈঠকে করবে না। অনলাইনে বৈঠক হলে তাতে যোগ দেবে। তার পরেও অনেক শিক্ষক অবশ্য ক্যাম্পাসে গিয়ে জুমস কমিটির বৈঠক করেছেন। তবু ফের ঘেরাও হয়েছে। ঘেরাওয়ের জেরে চিরঞ্জীববাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্যাম্পাসের বৈঠকে ভোর সাড়ে ৪টে পর্যন্ত থাকতে হয়েছে উপাচার্যকে এবং তার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনিও। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পড়ুয়াদের অনুরোধ করেছিলেন, ঘেরাওয়ের পথ বর্জন করা হোক। তার পরেও সোমবার অরিত্র যে-ভাবে উপাচার্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা নিয়ে আপত্তি উঠেছে।
ক্যাম্পাস সূত্রের খবর, জুটা-র প্রতিনিধিরা এ দিন ফেটসু নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থসারথি রায় বলেন, ‘‘অমিতাভবাবু অত্যন্ত অভিজ্ঞ, কুশলী শিক্ষক। উনি ডিনের পদ ছাড়লে চূড়ান্ত ক্ষতি বিশ্ববিদ্যালয়েরই। আমরা চাইব, তিনি যেন পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেন।’’ শিক্ষক সংগঠন আবুটা-র পক্ষে গৌতম মাইতি বলেন, ‘‘যাদবপুর অভূতপূর্ব নৈরাজ্যের সম্মুখীন। কিছু পড়ুয়া পরীক্ষা ও ফলপ্রকাশের পদ্ধতি সংক্রান্ত গোপন বিষয়ে অনৈতিক হস্তক্ষেপ করছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy