দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা বিরোধী-বৈঠকে যোগ না দেওয়ার কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
ধর্মঘটের ধাক্কা বিরোধী ঐক্যে। দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা বিরোধী-বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মমতা নিজেই জানিয়েছেন এ কথা। বন্ধের নামে বামেরা এবং কংগ্রেস এ রাজ্যে গুন্ডামি করেছে বলে মন্তব্য করে বুধবার দুপুরেই তোপ দেগেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তিনি বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন যে, কংগ্রেসের ডাকা এই বৈঠকে আর যাচ্ছেন না।
বিভিন্ন শ্রমিক ও কৃষক সংগঠন গত কাল সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। বামেদের মতো কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-ও ধর্মঘটের শরিক ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কংগ্রেসের তরফে শুধু আইএনটিইউসি নয়, ছাত্র পরিষদ এবং যুব কংগ্রেস কর্মীরাও সক্রিয় ভাবে ময়দানে নেমে পড়েন ঘর্মঘট সফল করতে। সকাল থেকেই কংগ্রেস প্রভাবিত জেলা মালদহে গোলমালের খবর আসতে শুরু করে। প্রথমে মালদহ শহরের রথবাড়ি মোড়ে বাসে হামলা হয়। বেলা গড়াতেই গোলমাল ছড়ায় কালিয়াচকের সুজাপুর এলাকায়। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। তুমুল পাথরবৃষ্টি হয় পুলিশকে লক্ষ্য করে। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস-রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। পরে পুলিশের বিরুদ্ধেও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে।
সুজাপুরে জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কিছু গাড়িতে উর্দিধারীরা ভাঙচুর চালাচ্ছেন, এই রকম একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই সিপিএম এবং কংগ্রেস একযোগে আক্রমণ শুরু করেছিল রাজ্য সরকারকে। বিজেপির হয়ে কাজ করছেন মমতা, তাই পুলিশকে কাজে লাগিয়ে ধর্মঘটকে বদনাম করার চেষ্টা করছেন— এই অভিযোগ তোলেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র।
সোলিম-সোমেনদের এই আক্রমণের আগেই অবশ্য নিজের উষ্মা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাম-কংগ্রেস ‘বন্ধের নামে গুন্ডামি করেছে’ বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন। গুন্ডামি বরদাস্ত করা হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সুর আরও চড়ল মুখ্যমন্ত্রীর। বিধানসভায় তিনি জানালেন যে, বুধবার যা ঘটেছে, তার পরে কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তিনি আর যাবেন না।
সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয়ের লক্ষ্যেই দিল্লিতে ১৩ জানুয়ারি বৈঠক ডাকা হয়েছে। অন্য বিজেপি বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের মতো তৃণমূলের তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও উপস্থিত থাকার কথা ছিল সেই বৈঠকে। ১২ জানুয়ারিই তিনি দিল্লি রওনা দেবেন— এমনই জানা গিয়েছিল আগে। কিন্তু এ দিন মমতা জানিয়েছেন। বামেদের সঙ্গে মিলে যে ভাবে কংগ্রেস বুধবার বাস পুড়িয়েছে, আগুন লাগিয়েছে, তার পরে আর কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে তিনি যেতে চান না। এনআরসি-র বিরুদ্ধে তৃণমূল একাই লড়বে বলেও মমতা এ দিন মন্তব্য করেছেন।
বিরোধী ঐক্য কি ধাক্কা খেয়ে গেল তা হলে? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সনের এই ঘোষণার পরে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক শিবিরে এই প্রশ্নই ঘুরতে শুরু করেছে। সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে কংগ্রেস, বাম, এনসিপি, এসপি, বিএসপি, ডিএমকে-সহ বিভিন্ন দল পথে নেমেছে, সে কথা ঠিক। কিন্তু তৃণমূলের সুরই সবচেয়ে চড়া। নিজের রাজ্যে তিনি সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, যে ভাবে প্রায় রোজ জনসভা এবং বড় বড় মিছিলের আয়োজন করছে তৃণমূল, যে ভাবে গোটা বাংলা চষে বেড়াচ্ছেন মমতা— অন্য কোনও দলই প্রচার ততটা তীব্র করতে পারেনি। তাই সিএএ বিরোধী আন্দোলনে এই মুহূর্তে গোটা দেশে সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনিই বিরোধী দলগুলির বৈঠকে না যাওয়ার কথা ঘোষণা করায়, ঐক্য ধরে রাখা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy