খান্দি মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।
সকালে বেরিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে দুবরাজপুর উপ-ডাকঘরে পৌঁছনো। সেখান থেকে সাইকেলে দিনভর ঘুরে ডাকঘরে সাইকেল রেখে হেঁটে বাড়ি ফেরা। খান্দি মুর্মুর এই রুটিনের ব্যতিক্রম হয়নি বৃহস্পতিবারও। তিনি জানতেনও না ৩ জুন দিনটা ছিল বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস। তাঁর মতো অনেকের কাছেই অবশ্য প্রতিটা দিনই সাইকেলের, কারণ তাঁদের জীবন সংগ্রামের সঙ্গী সাইকেল।
বীরভূমের দুবরাজপুরের আদিবাসী প্রধান মাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা খান্দি গ্রামীণ ডাক সেবকের কাজ করেন। তাঁর স্বামী বালক মুর্মুও ছিলেন ডাক সেবক। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্মের পর হঠাৎই অসুখে ভুগে মারা যান বালক। সেই সুযোগ নিয়ে তাঁকে ভিটে থেকে উচ্ছেদের চেষ্টাও হয়েছিল বলে খান্দির অভিযোগ। কিন্তু, তিন সন্তান, অনটন ও চাপের কাছেও দমে যাননি খান্দি। ইতিমধ্যে ডাক বিভাগ থেকে স্বামীর কাজটি পান তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কাজটা করার জন্য সাইকেল শিখে নিই।’’ তারপর থেকে ১৮ বছর সাইকেলই তাঁর জীবন যুদ্ধের সঙ্গী।
ছুটির দিন ছাড়া রোজই রান্না সেরে সকাল সাড়ে নটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন খান্দি। হেঁটে দুবরাজপুর উপ-ডাকঘর পৌঁছে সাইকেলে ডাক নিয়ে ৯ কিলোমিটার দূরে মেটেলা শাখা ডাকঘরে দিয়ে আসেন। ফের ডাক নিয়ে এসে দুবরাজপুরে পৌঁছে বাড়ি ফেরেন। করোনা পরিস্থিতিতেও কাজ বন্ধ হয়নি। এ দিনও কাজ করেছেন মধ্য চল্লিশের খান্দি। তাঁর কথায়, ‘‘সাইকেল চালাতে শিখেছিলাম বলে কাজটা পেয়েছিলাম। সেই কাজ করেই তিন সন্তানকে বড় করেছি।’’
নতুন যে তরুণীরা এই চাকরিতে এসেছেন, তাঁরা স্কুটিতেই স্বচ্ছন্দ। কিন্তু খান্দিদের মতো দু’চার জন মহিলা ডাক সেবকের ভরসা সাইকেলই। ডাক বিভাগের অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট (সিউড়ি মহকুমা) সুদীপ্ত রক্ষিত বলছেন, ‘‘ওঁরা সকলেই ডাক বিভাগের অনুগত কর্মী। সাইকেল নিয়েই এই অবস্থাতেও পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy