বিয়ের আসরে পারমিতা ও সুরিন্দর। নিজস্ব চিত্র।
বাবা-মায়ের স্নেহ, ভালবাসা বোঝেননি কখনও। কে বা কারা তাঁকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে অনাথ আশ্রমে রেখে গিয়েছিলেন, তা-ও জানেন না। জ্ঞান হওয়া ইস্তক বুঝেছিলেন, তিনি ‘অনাথ’। ভেবেছিলেন, এ ভাবেই কাটবে জীবন। কিন্তু সে জীবনেই বইল বসন্ত-বাতাস। আসানসোলের অনাথ আশ্রমে মানুষ সেই পারমিতা চললেন মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে, নিজের ঘর বাঁধতে। বুধবার রাতে কলকাতার রাজারহাটে পারমিতার বিয়ে হয় ইনদওরের যুবক সুরিন্দর মোহের সঙ্গে।
আশ্রমের মেয়ের বিয়ে, তাই গত কয়েক দিন ধরেই ছিল প্রস্তুতি। আসানসোল থেকে কনে-বেশে পারমিতাকে পাঠানো হয় রাজারহাটে। প্রায় ৫০ জনের উপস্থিতিতে বিয়ে হয়। প্রথমে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে, পরে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ছিল খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও। মেনুতে ছিল পোলাও, রাধাবল্লভি, মাছ, দই, মিষ্টি, রাবড়ি প্রভৃতি।
আসানসোলের আশ্রমটির দুই কর্ণধার সাহারা মণ্ডল এবং সেরিনা মণ্ডল বৃহস্পতিবার জানান, ২০১৬-য় বর্ধমানের একটি অনাথ আশ্রম থেকে পারমিতাকে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়। তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর। সাহারা বলেন, “কিছু দিন আগে কয়েক জনের সূত্রে পারমিতার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে। আমরা খোঁজখবর করে নিশ্চিত হওয়ার পরে, এই বিয়েতে মত দিই।”
জানা গিয়েছে, ভারতীয় রেলের এক আধিকারিকের সূত্রে ওই প্রস্তাব এসেছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক আগে রেলের আসানসোলের ডিআরএম পদে কর্মরত ছিলেন। মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে তাঁর দেশের বাড়িতে মায়ের দেখভালের কাজে যুক্ত সুরিন্দর। আসানসোলের ডিপোপাড়ার বাসিন্দা, সমাজকর্মী মিলি মজুমদারের সঙ্গে ওই রেলকর্তার স্ত্রী প্রথমে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, সুরিন্দর অনাথ আশ্রমের কোনও মেয়েকে বিয়ে করতে চান। মিলি বলেন, “আমি ওঁর অনুরোধে ছবি পাঠাই। ওঁরা পারমিতাকে পছন্দ করেন।”
চার হাত এক হওয়ায় খুশির হাওয়া আশ্রমে। রেলের ওই কর্তার স্ত্রী বলেন, “সুরিন্দর আমাদের পরিবারেরই এক জন। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানিয়েছি। বাড়িতে মেয়ে এল। আমাদের মন ভরে গিয়েছে।” আর সুরিন্দর বলছেন, “আমার স্ত্রী কোথায় মানুষ হয়েছেন, সেটা বড় কথা নয়। সবার আশীর্বাদে আমরা নতুন পথ চলা শুরু করলাম।” খুশিতে উজ্জ্বল পারমিতাও। বলেন, “এমন দিনও আসতে পারে ভাবিনি! আশ্রমের দিদিদের কথা কোনও দিন ভুলব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy