প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ কর্মজীবনের পরে পেনশন আদায়ের জন্য রীতিমতো যুদ্ধে নামতে বাধ্য হন অনেকেই। তবে তাঁর লড়াইটা ছিল পেনশনের টাকা কাটার বিরুদ্ধে। ৪২ বছর ধরে যে-সরকারি সংস্থায় কাজ করেছেন, সেই রেলের বিরুদ্ধেই তাঁকে লড়াইয়ে নামতে হয় ৮২ বছর বয়সে। আট বছরের লড়াই শেষে, ৯০ বছরে পৌঁছে জিত হয়েছে তাঁর। সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (ক্যাট) বা কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল মঙ্গলবার রায় দিয়েছে, ভোলানাথের পেনশন থেকে কেটে নেওয়া এক লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে দু’মাসের মধ্যে।
সাড়ে তিন যুগ চাকরি করার পরে ভোলানাথ যখন পেনশন নিয়ে নিশ্চিন্তে দিনযাপন করছিলেন, সেই সময়েই এক দিন বিনা মেঘে বাজ পড়ে মাথায়। দেখা যায়, পেনশন থেকে টাকা কেটে নিয়েছে ব্যাঙ্ক। শুরু হয় আইনি লড়াই। চাকরিতে ঢুকেছিলেন ১৯৫২ সালে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার পুরো নাম ছিল ভোলানাথ সরকার। কিন্তু চাকরির সময় বলা হয়, ও-সব সরকার-টরকার চলবে না। তাই ৪২ বছর ধরে শুধু ভোলানাথ নামেই চাকরি করেছি। ৪২ বছর চাকরির পরে পূর্ব রেল থেকে শান্টিং মাস্টার হিসেবে অবসর নিই।’’
অবসরকালীন টাকা থেকে ভোলানাথ বাড়ি তৈরি করেছিলেন আগরপাড়ায়। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তত দিনে। স্ত্রী, তিন ছেলে, বৌমা, নাতি-নাতনিদের নিয়ে সুখেই চলছিল সংসার। নিয়মিত পাচ্ছিলেন পেনশন। কিন্তু ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আচমকাই পেনশন থেকে টাকা কাটতে শুরু করে ব্যাঙ্ক। দৌড়ঝাঁপ করে জানতে পারেন, রেল নাকি হিসেব করে দেখেছে, ১৯৯৪ থেকেই ‘ভুল’ করে তাঁকে বেশি পেনশন দেওয়া হচ্ছিল। ভোলানাথের প্রশ্ন, বেশি পেনশন যে আসছে, সেটা বুঝতে ২০ বছর লেগে গেল?
২০১৬-য় ক্যাটে মামলা করেন ভোলানাথ। মামলা চলাকালীনই বছর তিনেক আগে দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী স্ত্রী মায়ারানি মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে রেল তাঁর মামলা নিয়ে যায় কলকাতা হাই কোর্টে। কিন্তু সেখান থেকে মামলা ফেরত পাঠানো হয় ক্যাটে। ভোলানাথের আইনজীবী কল্যাণ সরকার বলেন, ‘‘রেল সত্যিই ভুল করে ভোলানাথকে বেশি পেনশন দিয়েছিল। রেলের টনক যখন নড়ে, তত ক্ষণে অনেক বাড়তি টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ ওই আইনজীবী জানান, সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও সরকার বা সংস্থা যদি ভুল করে বেশি পেনশন দিয়েও ফেলে, তা ফেরত নেওয়া যাবে না। কোনও অবস্থাতেই প্রাপকদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেওয়া যাবে না।
দু’মাসের মধ্যে টাকা ফেরতের দিন গুনছেন নবতিপর ভোলানাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy