আমরি অগ্নিকাণ্ডে অভিযুক্ত তিন কর্তা সিঙ্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরসঙ্গী হচ্ছেন। আমরি-র ওই কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে লিখিত ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। গত বৃহস্পতিবার, ১৪ অগস্ট আলিপুর আদালতে আমরি-র তিন কর্তার বিদেশযাত্রার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করার সময়ে মুখ্যসচিবের স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্রটি পেশ করা হয়। সিঙ্গাপুর সফরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলে আমরি-কর্তাদের সামিল হওয়ার জন্য মুখ্যসচিব ৩১ জুলাই আমন্ত্রণ জানান।
আদালত সূত্রের খবর, আবেদনে বলা হয়, রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ওই তিন জন সিঙ্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলে সামিল হতে চাইছেন এবং সে জন্য ১৮ অগস্ট থেকে ২৩ অগস্ট তাঁরা সিঙ্গাপুরে থাকবেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আলিপুরের তিন নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সাকেত ঝা আমরি-র তিন ডিরেক্টর রাধেশ্যাম গোয়েনকা ও তাঁর ছেলে মণীশ এবং আদিত্যবর্ধন অগ্রবালকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। কাল, সোমবার ওই তিন জনের সিঙ্গাপুর রওনা হওয়ার কথা।
তবে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, আমরি-র অভিযুক্ত আরও দুই কর্তাকে সিঙ্গাপুর সফরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলে সামিল হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ওই দুই কর্তার পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা পড়েনি।
আমরি অগ্নিকাণ্ডের মামলা এখন বিচারাধীন। বেসরকারি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা লড়ছে রাজ্য সরকার।
আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর জুলাই মাসে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের দু’টি ভবন পুরোদস্তুর চালু হয়েছে, শুরু হয়েছে রোগী ভর্তি। তার কিছু দিন আগে আমরি কর্তারা নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা অনুযোগ করেন, পুরোদমে হাসপাতাল চালু করার
জন্য দমকল ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মিলছে না। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ওই দু’টি বিভাগের ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই হাসপাতাল পুনরায় চালু হয়। তবে ঢাকুরিয়া আমরি-র যে ভবনে আগুন লেগেছিল, সেটি এখনও বন্ধ।
২০১১-র ৮ ডিসেম্বর রাতে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৯১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই তিন কর্তা-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছিল।
আমরি অগ্নিকাণ্ডের দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দোষীদের কাউকে সরকার রেয়াত করবে না। এর পরেই এক এক করে আমরি-র কর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। আমরি-র ধৃত কর্তারা জামিনের আবেদন করলেও সরকার পক্ষ সবর্শক্তি দিয়ে আদালতে জামিনের বিরোধিতা করে। বস্তুত, সরকারের শীর্ষ মহলের অনড় মনোভাবের কারণেই ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল প্রায় আড়াই বছর খোলা যায়নি।
কিন্তু এর জেরে কলকাতার ব্যবসায়ী মহলের একাংশের বিরাগভাজন হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এমনকী, ঢাকুরিয়া আমরি খোলার জন্য সংস্থার সাধারণ কর্মীদের বারংবার আবেদন শুনতেও সরকার সেই সময়ে রাজি ছিল না।
তবে প্রথমে ঢাকুরিয়া আমরি-র দু’টি ভবনকে পুরোদস্তুর চালু করার ছাড়পত্র দিয়ে এবং তার পর আমরি-রই তিন কর্তাকে সিঙ্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিদলে সামিল হতে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাজ্য সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ করল বলে প্রশাসনের একটি অংশ মনে করছে।
অবশ্য কেউ কেউ এর সঙ্গে লোকসভা ভোটে কলকাতা ও আশপাশে বিজেপি-র প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজে পাচ্ছেন। ফল বিশ্লেষণ করে তৃণমূলের থিঙ্কট্যাঙ্ক-এর একটি মহল থেকে দাবি করা হয়, শহরের বাণিজ্যকেন্দ্র বড়বাজার-পোস্তা থেকে ফুলবাগান-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ব্যবসায়ীদের বড় অংশের ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে আসেনি। সিঙ্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী করা আসলে সেই ক্ষতের উপরে নতুন প্রলেপ কি না, সরকারের অন্দরেই এখন সেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, আমরি মামলায় এখন চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে আলিপুর তিন নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের আদালতে।
ওই মামলায় অভিযুক্ত ১৬ জনের প্রত্যেকে জামিনে মুক্ত হলেও তাঁদের নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। ফলে, এই তিন কর্তাকেও কলকাতা ছাড়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হয়েছে।
আমরি-র কর্তাদের তরফে আইনজীবী সেলিম রহমান শনিবার জানান, রাজ্য সরকার আমন্ত্রণ জানানোয় অভিযুক্ত তিন কর্তা সিঙ্গাপুর যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত তাঁদের বিদেশযাত্রার অনুমতি দিয়েছে। সেলিমের বক্তব্য, “আদালতের ওই অনুমতি পাওয়ার পর আমরি-র তিন কর্তা রাধেশ্যাম গোয়েনকা, মণীশ গোয়েনকা ও আদিত্যবর্ধন অগ্রবালের সিঙ্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে কোনও বাধা থাকল না।” প্রসঙ্গত, রাধেশ্যাম ও তাঁর ছেলে মণীশকে আমরি অগ্নিকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ছাড়া, কয়েক মাস ফেরার থাকার পরে উচ্চ আদালতে আবেদন করে জামিন পান আদিত্যবর্ধন অগ্রবাল।
আমরির ওই অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় জয়রামবাটির ১৪ বছরের প্রাকৃতা পাল। ওই কিশোরীর বাবা ধনঞ্জয় পাল এ দিন বলেন, “সিঙ্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যাওয়ার মতো আর কি কোনও ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি ছিলেন না?” আমরি কাণ্ডে মৃত কিশোরীর বাবার প্রশ্ন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যাঁরা সিঙ্গাপুরে ঘুরবেন, আমরি কাণ্ডের বিচারের সময়ে তাঁদের কারও বিরুদ্ধে আদালতে পুলিশ ও সরকারি আইনজীবীরা কি আর ততটা তৎপর থাকবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy