Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Sundarbans

বন কমছে সুন্দরবনে, বিপর্যয়ে বাঁচাবে কে

শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করাই নয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার ক্ষেত্রেও দুই ২৪ পরগনার বনাঞ্চলের ভূমিকা অপরিসীম।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকেও রক্ষা করে এই সুন্দরবন। ফাইল চিত্র।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকেও রক্ষা করে এই সুন্দরবন। ফাইল চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ১০:৩০
Share: Save:

সামগ্রিক ভাবে গত দু’বছরে বনাঞ্চল বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এবং সেই বৃদ্ধির তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের শুষ্ক জেলাগুলি। ফরেস্ট সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা বন সর্বেক্ষণের এই তথ্য আশা জাগাচ্ছে ঠিকই, তবে বাড়াচ্ছে আশঙ্কাও। কারণ, সম্প্রতি প্রকাশিত বন সর্বেক্ষণের রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বনাঞ্চল কমেছে। সামান্য, তবে বনাঞ্চল কমেছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। ওই দু’টি জেলাতেই সুন্দরবন রয়েছে। সেখানকার বাদাবন সামুদ্রিক ঝড়ঝাপ্টা সামলাতে ঢালের কাজ করে। তাই বনাঞ্চল কমে গেলে সেই ঢাল দুর্বল হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা অনেক পরিবেশবিদের।

এক দশক আগের আয়লা হোক বা গত বছরের শেষে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করেছিল সুন্দরবনের বনাঞ্চল, আরও নির্দিষ্ট করে বললে সেখানকার ম্যানগ্রোভ-প্রাচীর। শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করাই নয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার ক্ষেত্রেও দুই ২৪ পরগনার বনাঞ্চলের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সেখানে বনাঞ্চল কমে যাওয়াটা খুবই সমস্যার বলে মনে করছেন বনকর্তাদের অনেকে।

বন দফতর সূত্রের দাবি, গত দু’বছরে রাজ্যে বনসৃজন বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলাগুলিতে। তার ফলে বনাঞ্চল বেড়েছে। ২০১৭ সালের তুলনায় বাঁকুড়ায় বৃদ্ধির হার সর্বাধিক, ১৫.৫৮ শতাংশ। তার পরেই রয়েছে পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর। জঙ্গলমহলের বাইরে বনাঞ্চল বেড়েছে বর্ধমান আর বীরভূমেও। উত্তরবঙ্গের তরাইয়ে, জলপাইগুড়ি জেলাতেও ৫.৪০ শতাংশ বনাঞ্চল বেড়েছে। রাজ্যের বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ওই এলাকায় বনকর্মী ও আধিকারিকেরা প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছেন। তার সুফল মিলেছে।’’

প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার মতো পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকায় বনাঞ্চল বাড়ল না কেন বা বাড়ানো গেল না কেন? তা হলে কি ওই সব এলাকায় সে-ভাবে বনসৃজনে নজরই দেওয়া হয়নি বা হচ্ছে না?

‘‘ওই এলাকায় প্রায় চার হাজার বর্গকিলোমিটার অরণ্য রয়েছে। তার মধ্যে দুই বর্গকিলোমিটার উপগ্রহ-চিত্র ধরে পরিমাপ করা হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে, বনাঞ্চলের পরিমাপের মধ্যে কোনও গলদ আছে,’’ বলছেন রাজ্যের বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা।

বন দফতর সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক কালে এ রাজ্যের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় অরণ্য পাতলা হয়ে গিয়েছে। উপগ্রহ-চিত্রে দেখলে তাকে অনেকটা মানুষের মাথায় চুল পাতলা হয়ে টাক বেরিয়ে আসার মতো মনে হয়। সেটাই সম্ভবত উপগ্রহ-চিত্রে ধরা পড়েছে। সেই সঙ্গেই অবশ্য বন দফতরের অন্দরে স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে যে, ওই অঞ্চলে কাজকর্মে নজরদারি আশানুরূপ হয়নি। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে বন দফতরের কাজকর্মে সে-ভাবে নজর দেওয়া হয়নি। মাস কয়েক আগে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন মন্ত্রী হয়ে কাজে গতি এনেছেন। ২০২১-র সমীক্ষায় তার প্রতিফলন ধরা পড়তে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Natural Disaster Deforestation Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy