মাটি কাটতে ব্যস্ত মেয়েরা। কাঁকড়াঝোরে। —নিজস্ব চিত্র।
ঝুড়ি মাথায় মাটি ফেলছেন কবিতা মুড়া, সুনীতা শবর, সোমবারি মাহাতো, বিফলি মুড়ারা। সামনেই বাঁদনা পরব। শ্রম লাঘব করতে গুনগুনিয়ে গানও গাইছেন বিফলিরা—‘অহিরে বাঁদনা পরবে নাচি রে’।
বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে পুজোর সময়ে সরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে অতিথিশালা। সেই ‘কাঁকড়াঝোর গেস্ট হাউস’ চত্বরে উদ্যান তৈরি এখনও বাকি। একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কেটে বাগানের উপযোগী প্রাঙ্গণই তৈরি করছেন আমলাশোলের মহিলারা।
সেই আমলাশোল! কাঁকড়াঝোর থেকে মাত্র তিনি কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া যে গ্রামে ২০০৪ সালের জুনে অপুষ্টি আর অনাহারে পাঁচ আদিবাসী মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়েছিল তৎকালীন রাজ্য রাজনীতি। তার জেরেই বাম সরকার রাজ্য জুড়ে ৮ হাজার অনগ্রসর গ্রামের তালিকা বানিয়েছিল। ২০০৪-এর ডিসেম্বরে কাঁকড়াঝোরে সরকারি বন বাংলো মাইন ফাটিয়ে উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। তার প্রায় সতেরো বছর পরে সরকারি অর্থানুকুল্যে স্থানীয় বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে অতিথিশালা। এখন সেখানে একশো দিনের প্রকল্পে উদ্যান তৈরির কাজ চলেছে।
বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সুদীপ গিরি বলেন, ‘‘আমলাশোল ও কাঁকড়াঝোরের ৪০টি পরিবারের মহিলাদের দিয়েই অতিথিশালার বাগান তৈরি ও সৌন্দর্যায়নের (ল্যান্ড স্কেপিং) কাজ শুরু হয়েছে। দু’টি পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে শীতকালীন মরশুমি ফুলের গাছ লাগানো হবে। ১৩০০ শ্রম দিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ৩০ দিন কাজ দেওয়া হবে। পরিবারের মহিলা সদস্যরাই কাজ করবেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে একশো দিনের প্রকল্পেই মহিলাদের দিয়ে ফুলবিহীন গাছ লাগানো হবে।’’
অনাহার এখন অতীত আমলাশোলে। গ্রামেই হয়েছে রেশন দোকান, প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান, শিশুদের উদ্যান। কাঁকড়াঝোর-বেলপাহাড়ি-ঝাড়গ্রাম রুটে তিনটি বাস চলছে। কাঁকড়াঝোরে বেসরকারি একাধিক হোম স্টেও হয়েছে। পর্যটকরা রাতে থাকছেন। রাতেও গ্রামে নিরাপদে ঘুরে বেড়ানো যাচ্ছে। কাজের ফাঁকে সোমবারি, সুনীতা, বিফলিরা জানালেন, অনাহারে মৃত্যুর স্মৃতি আর মনে রাখতে চান না গ্রামের কেউই।
একই ভাবে কাঁকড়াঝোরের মঙ্গলি মুড়া, দুলি মুড়া, লক্ষ্মী মুড়ারাও জানাচ্ছেন, সন্ত্রাসের দিনগুলোকে দুঃস্বপ্নের মতোই ভুলেছেন এলাকাবাসী। কাঁকড়াঝোরে সরকারি অতিথিশালার কাছেই টিলার উপরে রয়েছে সিআরপি শিবির। তাই পর্যটকরাও নির্বিবাদে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। গাড়ি উজিয়ে চলে যান আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কের গ্রাম বগডবোয়। কেউ আবার জামিরডিহায় গিয়ে ফেরার মাওবাদী নেত্রী জবা মাহাতোর পৈতৃক ভিটেও দেখতে যান। জবার ভাই পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। জবাব মা লুলকির সঙ্গে ছবিও তোলেন পর্যটকরা।
বেলপাহাড়ির বিডিও বরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রশাসনিক বিভিন্ন দফতরের উদ্যোগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় এলাকার এই বদল সম্ভব হয়েছে। সরকারি অতিথিশালার পাশাপাশি, বেসরকারি হোম স্টেতেও পর্যটকরা থাকছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy