অমিত শাহ। ছবি:সংগৃহীত।
দেড় কোটি ভোট পেলেই তৃণমূলকে হটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় চলে আসবে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার গড়া এতটাই সহজ। অন্তত এমনই দাবি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের। শুধু তা-ই নয়, সেই ভোট কী ভাবে আসবে, তারও পথ বাতলে দিয়েছেন তিনি। সোমবার কলকাতায় দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে তাঁর আরও নির্দেশ, তৃণমূল মারছে বলে কাঁদুনি গাইলে চলবে না। প্রয়োজনমতো প্রতিরোধ করতে হবে।
দেড় কোটি ভোট পেতে অমিত এ দিন যে হিসেব দাখিল করেছেন, তা এই রকম— খাতায়কলমে রাজ্যে দলের সদস্যসংখ্যা ৪০ লক্ষ। তাঁদের প্রত্যেকে যদি চারটি করে ভোট নিশ্চিত করতে পারেন, তা হলেই এক কোটি ৬০ লক্ষ ভোট দলের ঝুলিতে চলে আসে! যদি ধরে নেওয়া যায় ১০ লক্ষ সক্রিয় নন, তা হলেও ৩০ লক্ষ সদস্য বাকি থাকেন। তা হলেও ১ কোটি ২০ লক্ষ ভোট নিশ্চিত হয়। সঙ্গে তাঁদের নিজেদের ভোট যোগ করলে হয় দেড় কোটি। এই সরল অঙ্কের হিসাবে এগোলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার গঠন কেউ ঠেকাতে পারবে না বলেই অমিতের ব্যাখ্যা।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ওই ৪০ লক্ষ কারা? মোবাইলে মিসড কল দিয়ে গোটা দেশে সদস্য নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা করেছিল বিজেপি। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট নম্বরে মিসড কল দিলেই আপনি বিজেপির সদস্য হয়ে গেলেন। মোদী-হাওয়ায় অনেকেই সে সময় মিস্ড কল দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁদের অনেকের সঙ্গেই দল আর কোনও যোগাযোগ রাখেনি।
এই তথ্য অমিতের বিলক্ষণ জানা। সেই কারণেই এ দিন তিনি বিজেপি নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে ওই সদস্যদের চিহ্নিত করে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি, অমিতের দেওয়া আরও কাজ— প্রতি কর্মীকে অন্তত দু’টি করে বুথের দায়িত্ব নিতে হবে এবং প্রতি বুথে অন্তত পাঁচ জন করে নতুন কর্মী আনতে হবে নভেম্বরের মধ্যে।
আরও পড়ুন: নরেন্দ্রর পথেই, দাবি মোদীর
তিন দিনের কর্মসূচি নিয়ে রবিবার রাতে কলকাতায় পৌঁছেছেন অমিত। সোমবার দুপুর থেকে আইসিসিআর-এ দলের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করেন তিনি। গত এপ্রিলে রাজ্য সফরে এসে বঙ্গ নেতাদের মুখে কেবলই তৃণমূলের আক্রমণের কথা শুনেছিলেন অমিত। এ দিন বৈঠকের শুরুতেই তিনি বলে দেন, নেতারা যেন খোলা মনে জানান, এ রাজ্যে সংগঠন কেমন চলছে এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্প কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে। অধিকাংশ জেলা নেতাই তখন একের পর এক তৃণমূলের আক্রমণের কথা তুলে ধরতে শুরু করেন। এর পরই অমিত জানান, তৃণমূলের মারের কথা তিনি আর শুনতে চান না। কোথাও প্রতিরোধ হয়ে থাকলে, সেটা যেন নেতারা বলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য, জেলার সভাপতি, পর্যবেক্ষক এবং সম্পাদকরা।
জেলা নেতাদের কাঁদুনি গাওয়াকে সে ভাবে গুরুত্ব না দিয়ে অমিত বরং নেতাদের এ দিন উত্তরপ্রদেশ জেতার উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশেও সমাজবাদী পার্টির অনেক গুন্ডা ছিল বিজেপি-কে মারার জন্য। তা সত্ত্বেও বিজেপি সেখানে জিতেছে সংগঠনের জোরে। সিপিএমের হাতেও তো গুন্ডা ছিল! তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেমন করে তাদের মোকাবিলা করে সরকার গড়লেন? তিনিও মার খেয়েই ক্ষমতায় এসেছেন।’’ অমিতের বার্তা, রাজনীতি করতে হলে মার খেতেই হয়। কিন্তু মজবুত সংগঠন থাকলে এবং মানুষ চাইলে গুণ্ডামি প্রতিরোধ করে তার ফায়দা তোলা যায়।
এ সব শুনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সার্বিক উন্নয়নে রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছে। বার বার ভোটে তা প্রমাণিত। কে কী বললেন তাতে কিছু এসে যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy