সভাপতি বদল হলেও দায়দায়িত্বের হাতবদল হচ্ছে না। বিজেপির শীর্ষপদে জগৎপ্রকাশ নড্ডার উত্তরসূরি শীঘ্রই বেছে নেওয়া হবে। যাঁকেই বেছে নেওয়া হোক, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ‘দেখভাল’ আগের মতোই করবেন অমিত শাহ। নয়াদিল্লিতে শাহের বাসভবনে মঙ্গলবার বিকেলে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং পশ্চিমবঙ্গের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়কে নিয়ে ওই বৈঠক করেছেন শাহ। বৈঠক নিয়ে সুকান্ত বা মালবীয়, কেউই মুখ খুলছেন না। কিন্তু বিজেপি সূত্রের দাবি, আলোচনা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়েই। কারণ, সুকান্ত যেমন বিজেপির রাজ্য সভাপতি, তেমনই মালবীয় বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-পর্যবেক্ষক। বিজেপি সূত্রের খবর, অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গ বিজেপির চেহারা কেমন হতে চলেছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে শাহের বঙ্গ সফর নিয়েও। জানা যাচ্ছে, চলতি মার্চ মাসের শেষ দিকে শাহ পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারেন।
‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির কারণে শাহকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বিজেপির সভাপতি পদ ছাড়তে হয়েছিল। কারণ, ২০১৯ সালের মে মাসেই তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু বিজেপিতে সকলেই জানেন, তাঁর উত্তরসূরি নড্ডা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই শাহের সিলমোহর ছাড়া নেননি। অদূর ভবিষ্যতে নড্ডার উত্তরসূরির আমলেও সেই বন্দোবস্তই যে বহাল থাকবে, সেই ইঙ্গিতও বিজেপির অন্দরমহলে স্পষ্ট। সাংগঠনিক রদবদল থেকে নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই বা রণকৌশল নির্ধারণ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই— সব ধরনের সিদ্ধান্তে শাহই সংগঠনে ‘সক্রিয়’। তবে অধিকতর রাজনৈতিক গুরুত্বের রাজ্যগুলিতে শাহের সক্রিয়তা আরও বেশি। সেখানে সংগঠনের খুঁটিনাটির খোঁজও তিনি নিয়মিত রাখেন। পশ্চিমবঙ্গ সেই গোত্রে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গ দেখভালের দায়িত্ব শাহ বরাবর নিজের হাতেই রেখেছেন। যে কারণে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব দিল্লিতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাহি দরবারেই নিজেদের অভাব-অভিযোগ জানিয়ে আসতেন। রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে দিল্লির সঙ্গে কোনও আলোচনা থাকলে শুভেন্দু অধিকারী বা সুকান্ত সর্বাগ্রে শাহের কাছেই সময় চাইতেন। একান্তই শাহকে না পাওয়া গেলে নড্ডার কাছে যেতেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, সেই ধারাবাহিকতাই বজায় থাকবে। অন্তত ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত শাহই বঙ্গ বিজেপির দেখভাল করবেন।
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শাহ। ২৯ জানুয়ারির সেই বৈঠকও শাহের বাসভবনেই হয়েছিল। বিজেপি সূত্রের দাবি, সেই বৈঠকেও পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রদবদল নিয়ে কথা উঠেছিল। শাহ সে দিন জানিয়েছিলেন, দিল্লির বিধানসভা ভোট মিটিয়ে বাংলায় ‘মনোনিবেশ’ করবেন। দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পরেই শাহ বঙ্গ বিজেপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। সেখানেই শাহের পশ্চিমবঙ্গ সফরের সময় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, মার্চ মাসের শেষে এ রাজ্যে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। চূড়ান্ত দিনক্ষণ পরে ঘোষণা করা হবে।