ফাইল চিত্র।
ইউনেস্কোর বিশ্ব-মঞ্চে দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি শুধু বাংলা নয়, ভারতেরই গৌরব বলে শুক্রবার মন্তব্য করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সেন্ট্রাল হলে এই উদ্যাপন অনুষ্ঠানটি আখেরে পুজো ঘিরে বিভাজনের রাজনীতির দড়ি টানাটানিই প্রকট করে তুলল।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি এবং দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে ঘিরে ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানটি সাজিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক। ছিলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (অনুষ্ঠান মঞ্চে অবশ্য তাঁর সাংসদ পরিচয়টুকুই বলা হয়), সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, বিজেপি আইটি সেল-এর আহ্বায়ক অমিত মালবীয় থেকে শুরু করে বিজেপির মেজ-সেজ নেতারাও। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডাকা হয়নি। অমিত শাহ অবশ্য বলেছেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় রয়েছেন সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে সংস্কৃতি দফতরের যুগ্ম সচিব লিলি পান্ডে বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার বলার এক্তিয়ার নেই।’’ আর অমিত শাহ বক্তৃতায় বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর আমলে এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও মজবুত হয়েছে।’’
ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়দের নৃত্যানুষ্ঠানে দুর্গার নানা রূপ দেখে অমিত বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর মধ্যে নারী স্বশক্তিকরণের (ক্ষমতায়ন) আদর্শ বহু দিনই আমাদের বেদ, উপনিষদে রয়েছে।’’ তবে দুর্গাপুজো নিয়ে কোনও বিশেষ পরিকল্পনার রূপরেখা উঠে আসেনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তৃতায়।
এ দিনই কলকাতার বিভিন্ন দুর্গাপুজো কমিটির সম্মিলিত মঞ্চের তরফে প্রতিবাদ-সভায় প্রশ্ন ওঠে, দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ বড় পুজোকেই কেন ডাকা হল না!
অমিত শাহের অনুষ্ঠানে পুজো কমিটি বলতে ছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। তাঁদের কর্ণধার প্রদীপ ঘোষ কয়েক বছর হল বিজেপি নেতা। প্রদীপ পরে বলেন, ‘‘অমিতজি আমায় বললেন, উনি পুজোয় আসতে চান, কেন আমরা ওঁকে ডাকি না! আমি বলেছি, ডাকব। তবে ওঁকে আগেও ডেকেছিলাম। তখন আসেননি।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারই বলেছিলেন, শুধুমাত্র তাঁদের লাগাতার চেষ্টায় দুর্গাপুজো এই জায়গায় উঠে এসেছে। আর কারও অবদান নেই। এ দিন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের ঘনিষ্ঠ একটি মহল আবার বলেছে, কেন্দ্রই ছিল ইউনেস্কোর কাছে আবেদনের পুরোভাগে। তবে এই আবেদনের পিছনে প্রধান ভূমিকায় থাকা গবেষক, ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা গত ডিসেম্বরেই জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় আমলারা প্রথমে সামগ্রিক ভাবে ভারতের দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাঁদের বোঝাতে হয়, সৃষ্টিশীলতার উৎকর্ষ বা সমাজের নানা অংশের যোগে কলকাতার দুর্গাপুজোই অনন্য। কলকাতার পুজো স্বীকৃতি পেলেও দুর্গাপুজোর বাণিজ্যিকরণ বা পুজো নিয়ে রাজনীতির বাড়াবাড়ি নিয়ে ইউনেস্কো-র তরফে কিছু প্রশ্ন ওঠে। ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানে মালুম হল, ইউনেস্কো-স্বীকৃতির পরে পুজো নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যে টক্করই এ বার কলকাতার পুজোর নতুন আকর্ষণ।
অনেকেই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বারবারই অভিযোগ করতেন, বাংলায় দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না। এ বার কিন্তু সেই কলকাতার দুর্গাপুজোর স্বীকৃতিকে উদ্যাপন করতে হল তাঁদেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy