মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহ।
নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে বিজেপি-র বড় অস্ত্র যে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি, সে ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। কিন্তু তা আরও খোলসা করে দিলেন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্যে এসে অমিত শাহ। দু’দিনের রাজ্য সফর সেরে শুক্রবার কলকাতা ছাড়ার আগে অমিত দাবি করলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানেই যাবেন, সেখানেই তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনতে হবে। তবে অমিতের দাবি, সেই স্লোগান বিজেপি তুলবে না। তুলবেন বাংলার মানুষ। একই সঙ্গে এক নতুন দাবিও করলেন অমিত। বললেন, ‘‘বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধর্মীয় স্লোগান নয়।’’ তবে অমিতের এই বক্তব্যকে সহজ করে দেখছে না তৃণমূল। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যে কেউ ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতেই পারেন। শ্রীরামের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে, তাঁকে বাধা দিতে বা বিরক্ত করতে যদি কেউ ওই স্লোগান দেয় তবে আমরাও তার প্রতিবাদ জানাব।’’
শুক্রবার কলকাতায় একটি সর্বভারতীয় সংবাদগোষ্ঠীর আলোচনা চক্রে যোগ দিয়েছিলেন অমিত। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ কোনও ধর্মীয় স্লোগান নয়। এটা বাংলায় তোষণের বিরুদ্ধে আক্রোশের প্রকাশ।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, সময় অনুযায়ী স্লোগানের প্রেক্ষিত এবং অর্থ বদলে যায়। অমিত বলেন, ‘‘এক সময় ‘বন্দেমাতরম’ ইংরেজের বিরুদ্ধে স্লোগান ছিল। এখন সেটাই দেশবন্দনার স্লোগান। অযোধ্যায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের যে অর্থ ছিল, এখানে সেটা নয়।’’ দুইয়ের মধ্যে অনেক ফারাক বলে দাবি করে অমিত বলেন, ‘‘এটা এখন বাঙালি জনতার স্লোগান।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে যেখানে যাবেন, সেখানেই তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ শুনতে হবে। আমি মনে করি তাতে ওঁর খারাপ লাগা উচিত নয়।’’
রাজ্যে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। অতীতে অনেক বারই মমতাকে উদ্দেশ্য করে ওই ধ্বনি ওঠা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ গত ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিাল চত্বরে। সেদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ শুনতে হয়েছিল মমতাকে। তার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তৃতা না দিয়েই পোডিয়াম ছেড়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে ডেকে এনে ‘বেইজ্জত’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন মমতা।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলেও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনে ক্রুদ্ধ মমতা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আবার কিছুদিন আগে কোচবিহারে তাঁকে লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ায় কোনও প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেননি মমতা। কিন্তু ভিক্টোরিয়ায় তিনি প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছেন।
এর পর সেটাকেই ‘অস্ত্র’ বানিয়ে নিয়েছে বিজেপি। রাজ্য নেতারা তো বটেই, বাংলায় সফরে এসে অমিত কিংবা জেপি নড্ডা বারবার প্রশ্ন তুলছেন, ওই ধ্বনিতে কেন অপমানিত বোধ করেন মমতা। সরাসরি না বললেও সেই আক্রমণের ইঙ্গিত শোনা গিয়েছিল হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গলাতেও। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বাংলার মানুষের ফুটবলপ্রেম সুবিদিত। আমি তাই ফুটবলের ভাষায় বলছি, তৃণমূল একটার পর একটা ফাউল করেছে। অপশাসনের ফাউল, দুর্নীতির ফাউল, মানুষের টাকা লোটার ফাউল। মানুষ সব দেখেছে। তাই বাংলার মানুষ তৃণমূলকে রামকার্ড দেখাতে চলেছে।’’
এ বার অমিতের ইঙ্গিতে স্পষ্ট যে, বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি বিজেপি-র বড় অস্ত্র হতে চলেছে। মমতাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলার জন্য যেন ছাড়পত্রই দিয়ে গেলেন অমিত। তবে দায় এড়ানোর রাস্তাও খোলা রেখেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘নেতা স্লোগান তৈরি করেন না। স্লোগান বানায় জনতা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy