কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের বৈঠক শেষে (বাঁ দিক থেকে) বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। শনিবার নবান্নে। পিটিআই।
গরু পাচার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। এ নিয়ে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক স্তরে যথেষ্ট তাল ঠোকাঠুকিও চলেছে। শনিবার পূর্বাঞ্চল কাউন্সিলের বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল রাজ্য সরকার। রাজ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অন্য একাধিক রাজ্য থেকে এ রাজ্য হয়ে গরুর যাতায়াত চলছে। সেই দায় একা পশ্চিমবঙ্গের ঘাড়ে চাপানো অনুচিত। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ দিনের বৈঠকে বকেয়া টাকা, বিএসএফ-এর পরিকাঠামো, জলবণ্টন, বাঁধ ব্যবস্থাপনা-সহ একাধিক বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের সমন্বয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
গরু, কয়লা পাচার নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্তের প্রেক্ষিতে অতীতে বারবারই বিএসএফ, সিআইএসএফ-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য। এ দিন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এ রাজ্য দিয়ে গরু যাতায়াতের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্য থেকে থেকে বাংলার সীমানায় গরু আসে। ফলে চাপ বাড়ে রাজ্যের সীমানায়। মুখ্যসচিবের প্রশ্ন, অন্য রাজ্যও এই দায়িত্ব নেবে না কেন? শাহ রাজ্যকে জানান, বিষয়টি ভেবে দেখবে কেন্দ্র। সূত্রের দাবি, এ দিন বিএসএফ এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের উপর বিশেষ জোর পড়েছিল। সীমান্তে অসাধু কাজকর্ম রুখতে বিএসএফ-এর ভূমিকা যে সর্বাগ্রে রয়েছে, এ দিন তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছে রাজ্য।
গত বছরই পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব এবং অসমে বিএসএফের কাজের পরিধি বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। তা নিয়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভাবে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিল তৃণমূল ও রাজ্য। সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ একবার উঠলেও, তা দীর্ঘায়িত হয়নি। বিএসএফের এক্তিয়ারের প্রশ্নে কেন্দ্র-রাজ্যের অতীতের চাপানউতোরের আঁচও ছিল না এ দিন। বরং বিএসএফের পরিকাঠামো বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। বাংলাদেশের সঙ্গে রাজ্যের প্রায় ২০২১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকার সুরক্ষায় বিএসএফ অন্তত ১৩টি সেক্টোরাল অফিস তৈরি করতে চায়। তার এক-একটিতে দরকার ৫০ একর জমি প্রয়োজন। রাজ্যের দাবি, অত জমি পাওয়া মুশকিল। কারণ, মানুষকে বুঝিয়ে সেই জমি কিনতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য জমির সীমা শিথিল করে পাঁচ একর করা হয়েছে। ফলে বিএসএফ ক্যাম্পের জমির পরিমাণ ভেবে দেখা দরকার। তবে জমি জোগাড় করার পাল্টা অনুরোধও মুখ্যমন্ত্রীকে করেছেন শাহ। ওই সীমান্ত এলাকার অনেকটা অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া গেলেও কিছু অংশ অসমাপ্ত। সম্প্রতি রাজ্যকে জমি জোগাড়ের অনুরোধও করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা।
এ দিন পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়ন তহবিল (বিআরজিএফ), একশো দিনের কাজ, আমপান-সহ একাধিক ক্ষেত্রে বকেয়া প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার ব্যাপারেও সওয়াল করেছে রাজ্য। বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে একটি কমিটির প্রস্তাব করেন মমতা। তা মেনে নেন শাহ।
মশানজোড় ও তেনুঘাট জলাধার নিয়ে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে দাবিদাওয়া মেটাতে দু’রাজ্যের যৌথ কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিভিসি জলাধারের নাব্যতা নিয়ে মমতার দাবির প্রেক্ষিতে যাচাই করানোর আশ্বাস দিয়েছেন শাহ। মহানন্দার ব্যারেজের জল ভাগ নিয়ে বিহার-পশ্চিমবঙ্গের যৌথ কমিটি তৈরির ব্যাপারে সম্মতি মিলেছে। গঙ্গা-পদ্মা ভাঙন রুখতে মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রের কাছে যে সুসংহত পরিকল্পনা এবং অর্থের দাবি করে আসছেন, তা-ও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।
এ দিনের বৈঠকে ছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, অর্থমন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরী, ওড়িশার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তুষারকুমার বেহরা এবং বনমন্ত্রী প্রদীপকুমার আমাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy