শাহি ক্ষোভের মুখে দিলীপ। ফাইল চিত্র
তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিজের দলকেই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। সে কারণে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির উপরে ক্ষুব্ধ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে সিবিআই তদন্ত নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন দিলীপ, তা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ‘অনাস্থা’-রই শামিল। বস্তুত, সিবিআই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘পার্সোনেল’ (কর্মিবর্গ) মন্ত্রকের আওতাভুক্ত। দিলীপ সিবিআইকে তুলোধনা করার পাশাপাশি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর প্রশংসা করেছেন। যে সংস্থা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীন। পুরো বিষয়টিই বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব তথা কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘অস্বস্তি’-তে ফেলেছে।
তার পরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কড়া পদক্ষেপের মনোভাব দেখিয়েছেন। ইতিমধ্যেই রবিবার দিলীপ ঠিক কী কী বলেছিলেন, তা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানতে চেয়েছেন দলের শীর্ষনেতৃত্ব। দিলীপের বক্তব্যের ভিডিয়ো ছাড়াও তাঁর বক্তব্যের হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদও চাওয়া হয়েছে বলে সোমবার বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে দিলীপ তার পরেও থামেননি। সোমবারেও তিনি তাঁর বক্তব্যে অনড় থেকেছেন। আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিজের রবিবারের বক্তব্যের সমর্থনে কথা বলেছেন। ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। সূত্রের খবর, সেই বক্তব্য নিয়েও খোঁজখবর শুরু করেছেন দলের শীর্ষনেতৃত্ব।
দিলীপ কী বলেছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার পাশাপাশি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাও আলাদা করে রিপোর্ট চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। রাজ্য দলের কাছে একই বার্তা পাঠিয়েছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষও। সকলেই যে দিলীপের রবিবারের মন্তব্যে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন, তা দিলীপকে জানানো হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। তবে এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, অতীতে দলকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য দিলীপকে বহু বার সতর্ক করা হয়েছে। সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েও মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। এ বার আর তাই দিলীপকে আলাদা ভাবে কিছু না জানিয়ে সরাসরি রাজ্য দলের থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
রবিবার দিলীপ যে মন্তব্য করেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সোমবার আবার একই কথা বলেছেন। তবে বিজেপি নেতৃত্বের অসন্তোষ বেশি করে রবিবারের মন্তব্যের জন্য। কারণ, দিলীপ ওই কথাগুলি কলকাতায় বলেছেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠানে। তাই শুধু দল নয়, আদতে দিলীপ কেন্দ্রীয় সরকারকেও অস্বস্তিতে ফেলেছেন বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। কারণ, বিজেপি যেমন এই তদন্ত আদালতের নির্দেশে হচ্ছে বলে দূরত্ব রাখার পথ নিয়েছে তেমনই গেরুয়া শিবির বরাবর দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় সরকার তদন্তকারী সংস্থাকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করে না। এই দুই নীতিকেই দিলীপের মন্তব্য ধাক্কা দিয়েছে বলে বিজেপির একাংশ মনে করছে। অন্য দিকে, দল ও সরকারকে আক্রমণের হাতিয়ারও পেয়ে গিয়েছে বিরোধীরা।
বিরোধীদের মুখে ‘বাংলায় সিবিআই সেটিং’ অভিযোগ নতুন নয়। সিপিএম এবং কংগ্রেসের আক্রমণের জবাব দিতে হয় বিজেপিকে। এ বার সেই কথাই দিলীপের মুখে শোনা গিয়েছে। রবিবার দিলীপ বলেছিলেন, “আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত হলেও কোনও কাজ হচ্ছিল না। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলায় সিবিআইয়ের সঙ্গে সেটিং চলছিল। সিবিআইয়ের কোনও কোনও আধিকারিক বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। সেটা বুঝতে পেরেই রাজ্যের বিভিন্ন মামলার তদন্ত ইডিকে দিয়েছে কেন্দ্র।”
সেখানেই না থেমে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘সিবিআইয়ের একটি অংশের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের ‘সেটিং’ হয়ে গিয়েছিল বুঝতে পেরেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক।’’
প্রসঙ্গত, সিবিআই কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রকের অধীন। যে মন্ত্রক রয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদীর হাতে। আর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অর্থমন্ত্রী অর্থাৎ, নির্মলা সীতারামনের অধীন। যদিও বিজেপি শিবিরের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দু’টি সংস্থার পরিচালনাই দেখেন অমিত শাহ। এ ক্ষেত্রে মোদীর পাশাপাশি শাহকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন দিলীপ।
বিষয়টি সামনে আসার পরেও সোমবার দিলীপ কলকাতায় বলেছেন, ‘‘সিবিআই কার, তাতে আমার কিছু এসে যায় না। সিবিআই দেশের একটা সংস্থা। তাদের বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ন্যায় পাইনি। ইডি প্রমাণ করেছে তারাই সবচেয়ে বিশ্বস্ত এজেন্সি।’’ বিজেপির অনেকে মনে করছেন, এটা বলে দিলীপ পরোক্ষে এটাই বুঝিয়েছেন যে, মোদীর অধীনস্থ সিবিআইয়ের পরিবর্তে সীতারামনের ইডিতেই বেশি ‘আস্থা’ রাখেন তিনি। তাই সোমবারের মন্তব্যের পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নতুন করে দিলীপের উপরে ‘অনাস্থা’ দেখান কি না সে জল্পনাও তৈরি হয়েছে রাজ্য বিজেপিতে।
প্রসঙ্গত, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বাংলায় বিভিন্ন তদন্তে সিবিআই তেমন ‘সক্রিয়’ নয় বলে অতীতেও প্রশ্ন তুলেছিলেন দিলীপ। বিভিন্ন প্রসঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বকেও বার বার অস্বস্তিতে ফেলার অভিযোগ উঠেছে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতির বিরুদ্ধে। সেই আবহেই গত মে মাসে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘তদন্ত নয়, রেজাল্ট চাইছে মানুষ।’’ সেই সবের প্রেক্ষিতে গত ৩১ মে দিলীপকে ‘সেন্সর’ করে গেরুয়া শিবির। সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দিলীপকে মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিছু দিন দিলীপ চুপচাপ ছিলেনও। কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যে করেছেন, ফের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রুষ্ট। আরএসএসের প্রচারক দিলীপ বিজেপিতে আসার পরে বড় সময় রাজ্যের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর মুখে লাগাম পরাতে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মরিয়া, তা বোঝা গিয়েছিল মে মাসের চিঠিতেই। কারণ, বিজেপির রীতি অনুযায়ী দিলীপের মতো প্রবীণ নেতাদের প্রকাশ্যে চিঠি না পাঠিয়ে আড়ালে মৌখিক ভাবেই সতর্ক করা হয়। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, বার বার বলা সত্বেও দিলীপ সতর্ক হচ্ছেন না। ফলে এ বার কড়া মনোভাব দেখাতে পারেন শাহ, নড্ডা, সন্তোষরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy