দলত্যাগ আইন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। তার মধ্যেই এ বার বেসুরো বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল। বিজেপি এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। নীলবাড়ির লড়াইয়ের আগে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল থেকে আসা লোকজনকে বিজেপি মানতে পারছে না বলে এ বার অভিযোগ করলেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রস্তাব পেলে তৃণমূলে ফিরে যাওয়া নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবেন বলেও জানালেন।
তৃণমূলে ফেরা মুকুল রায়কে নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই সুনীলের সাংসদ পদ খারিজে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল। তার মধ্যেই মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন সুনীল। তাতে বিজেপি-তে গিয়ে ভুল করেছিলেন বলে কার্যত মেনে নেন তিনি। সুনীল বলেন, ‘‘তৃণমূল থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না বিজেপি। সহ্য করতে পারছে না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনেকেরই ভুল হতে পারে। সবাই সবরকম হয় না। কিন্তু সকলকে আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু বিজেপি হয়ত মনে করছে এঁদের বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।’’
ভোটের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা নেতাদের ‘ট্রয়ের ঘোড়া’ বলে সম্প্রতি উল্লেখ করেন গেরুয়া শিবিরের প্রবীণ নেতা তথাগত রায়। সেই প্রসঙ্গে সুনীল বলেন, ‘‘তথাগত যে কথাগুলো বলেছেন, তা শুনে দিলীপ বলেছেন, ভোটের আগে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা আগে বিজেপি হোন, তার পর আমরা সর্বতো ভাবে গ্রহণ করব। এই কথাগুলো অন্যায়। এ গুলো রাজনৈতিক কথা নয়। রাজনৈতিক ভাবে ভেবেছিলাম, বিজেপি বড় সাংগঠনিক দল। আগে সাংগঠনিক দল করে এসেছিলাম। কিন্তু সেই জায়গা পাচ্ছি না।’’
বাংলায় পদ্মের ভরাডুবির জন্য বিজেপি নেতাদেরই দুষেছেন সুনীল। ভোটের আগে বিজেপি নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে যে ভাবে কটাক্ষ করছিল তৃণমূল, সেই সুরে গলা মেলাতেও দেখা যায় সুনীলকে। এমনকি বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগও কার্যত স্বীকার করে নেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজ মুসলিম সমাজ একজোট। আগে মুসলিমরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। জায়গা পাননি বলেই ফিরে গিয়েছেন। পচা শামুকে পা কাটে বলে একটা কথা আছে। একটা ভোটের অনেক দাম। সেই জায়গাটা যদি সাংগঠনিক ভাবে বিজেপি ভাবত, কাজ হত। যাঁরা বাইরে থেকে এসেছিলেন, বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ছিল না তাঁদের। ভাষাগত সমস্যা ছিল। অথচ ভেবেছিলেন, ভিন্ রাজ্য থেকে এসে বাংলার মন জয় করে ফেলবেন। গ্রামের মানুষ হিন্দি বুঝবেন কেমন করে! পঞ্চায়েত স্তরে, বুথ স্তরে বিজেপি-র দুর্বলতা ছিল। শুধু মিটিং মিছিল, জনসভা করলে হয় না, মানুষের কাছে পৌঁছতে হয়।’’
অন্য দিকে, মুকুল তৃণমূলে ফেরার পর থেকেই ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু দলছুটেরই তৃণমূলে ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনিও কি তৃণমূলে ফেরার কথা ভাবছেন? প্রশ্নের উত্তরে সুনীল বলেন, ‘‘প্রস্তাব এলে আমার কোনও আপত্তি নেই।’’ কিন্তু এই প্রসঙ্গ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তৃণমূল সাসংদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল ওঁকে প্রস্তাব দিতে যাবে কেন? উনি কে? ওঁর কোনও স্ট্যান্ডার্ডই নেই। নিজের ধান্দায় বিজেপি-তে গিয়েছিলেন। ওঁর লোকসভা কেন্দ্রে তো বিজেপি হেরে ভূত হয়েছে! চুরি-ডাকাতি করা লোক। ইঁদুরের গর্তে ঢুকে রয়েছে। নিজের সুবিধার জন্য আসতে চাইছেন।’’
গত শুক্রবার সপুত্র মুকুল রায় তৃণমূলে ফেরার পর থেকেই নতুন করে তৃণমূল বনাম বিজেপি দ্বৈরথ শুরু হয়েছে। বিজেপি-র হয়ে যে কৃষ্ণনগর থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন মুকুল, সেই পদ থেকে ইস্তফা না দিয়ে মুকুল দলত্যাগ বিরোধী আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। মুকুলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শুভেন্দুর এই হুঁশিয়ারির মধ্যেই সাংসদ পদ না ছেড়ে ভোটের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী এবং সুনীলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ আইনে পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে এই দু’জনের সাংসদ পদ খারিজের জন্য আগেই চিঠি দিয়েছিল জোড়াফুল শিবির। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারির পর সেই প্রক্রিয়া দ্রুত সেরে ফেলার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
সেই পরিস্থিতিতেই বিজেপ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন সুনীল। শুধু তাই নয়, যে শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপি-তে যাওয়া, তাঁকেও একহাত নিয়েছেন সুনীল। তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু সম্পর্কে একটা কথা বলব। আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, একটাও রাখেনি। শুধু আমার সঙ্গেই নয়, অনেকের সঙ্গেই প্রতারণা করেছে। শুভেন্দু কারও ফোনই ধরে না। আমি ওর নাম নিতেই চাই না।’’
তৃণমূলে ফিরে আসার পর বর্তমানে মুকুল দলত্যাগীদের বিজেপি থেকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে সুনীল বলেন, ‘‘কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ হয়নি। তবে রাজনীতি আর সম্পর্ক আলাদা জিনিস। প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক কেরিয়ার আছে। সে রকম প্রস্তাব এলে ভাবব। তবে সে সব পরের কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy