Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Amartya Sen

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতির মিলিত সাধনাতেই আস্থা

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও এ দিন শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে জোর দিতে অমর্ত্যের কথা থেকে পাওয়া প্রেরণার কথা বলেছেন।

আলিপুর জেল মিউজিয়ামে একটি আলোচনাসভায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

আলিপুর জেল মিউজিয়ামে একটি আলোচনাসভায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ০৫:৪৫
Share: Save:

বই, সাহিত্য, আড্ডা, আলোচনা বা তর্কাতর্কি— শনিবার সন্ধ্যায় এমন কয়েকটি শব্দ নিয়েই মশগুল ছিলেন অমর্ত্য সেন। আলিপুর জেল মিউজ়িয়ামের অনুষ্ঠানে এমন কয়েকটি শব্দের মধ্যেই বলা যায় বাঙালির সাংস্কৃতিক চিহ্ন খুঁজলেন তিনি।

অমর্ত্যের কথায়, ‘‘আড্ডা এখন ভারতের অন্য অঞ্চলে গিয়েছে। আড্ডা আমাদের নিজেদের জিনিস ভাবতেই পারি। এর মধ্যে একে অপরের মধ্যে যোগাযোগ হয়, এটা গর্বের! সভ্যতা, সাহিত্যের মধ্যেও যোগাযোগের দিক আছে।’’ ভারতে বহুত্বের চর্চার জন্যও এই ধরনের আড্ডা, পড়াশোনা, আলোচনাই গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে সাব্যস্ত করলেন অমর্ত্য।

সামাজিক সঙ্ঘবদ্ধতা এবং সম্প্রীতি নিয়ে সক্রিয় মঞ্চ ‘নো ইয়োর নেবর’-এর অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতায় ‘চেয়ার ফর দ্য রিডার’ বলে মোমিনপুর, বারাসত, পান্ডুয়ার মতো নানা এলাকায় একটি পড়ার পরিসর তৈরির চেষ্টারও উদ্বোধন হল অমর্ত্যের হাত ধরে। ঠিক ছকে-বাঁধা গ্রন্থাগার নয়। বই পড়া, আলোচনার মঞ্চ। সেখানে সংখ্যালঘুর বিষয়ে অজ্ঞতাও হটানো হবে। এই উদ্যোগটির প্রাসঙ্গিকতা থেকেই তাঁর দাদামশায় ক্ষিতিমোহন সেন কথিত হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনার গুরুত্ব মেলে ধরলেন অমর্ত্য।

এর পাশাপাশিই এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ভারতের ইতিহাস একসঙ্গে কাজ করার ইতিহাস। যুক্ত সাধনার উপরে জোর দেওয়ার কারণ আছে। সহিষ্ণুতাকে বড্ড বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ছোটরা কুশিক্ষা না-পেলে পার্থক্যকে পাত্তা দেয় না। সব থেকে জরুরি একসঙ্গে কাজ করা। সেটা শিক্ষা, স্বাস্থ্য অন্য কিছুতেও হতে পারে।’’

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও এ দিন শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে জোর দিতে অমর্ত্যের কথা থেকে পাওয়া প্রেরণার কথা বলেছেন।

ইতিহাসের পাতা থেকে সমকালে, বা নিজের পারিবারিক কিসসায় যুক্ত সাধনার নানা ফলিত প্রয়োগের কথা শুনিয়েছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ। বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশটাকে এক ধর্মীয় করার একটা চেষ্টা চলছে, তা এড়ানোর জন্য এটা করা দরকার।’’ সংস্কৃত থেকে ফার্সিতে যিনি প্রথম উপনিষদ অনুবাদ করেন সেএই দারাশুকোর মায়ের নামে দেশের সব থেকে বিখ্যাত একটি বাড়ি তাজমহল! এ কথা শুনিয়ে অমর্ত্যের টিপ্পনী, ‘‘শুনলাম যাঁরা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে চাইছেন, তাঁরা বলেন, তাজমহলের সঙ্গে মুসলমানের যোগই নেই।’’

আলি আকবর এবং রবিশঙ্করের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম গুলিয়ে যাওয়া থেকে ১৯৭১-এর সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রীতির গল্পেও মুখর ছিলেন অমর্ত্য। শেষ করলেন ক্ষিতিমোহন সেনের দাদা অবনীমোহনের প্রাণের বন্ধু এক ঢাকাইয়া মৌলানার গল্পে। অবনীমোহন ও সেই মৌলানা একসঙ্গে হুঁকো খেতেন। এক বার জনৈক হিন্দু পুরোহিত তাঁর সঙ্গে হুঁকো খেতে গররাজি হলে মৌলানা বোঝান, ‘‘আমরা কিন্তু দু’জনে একই পেশায়। দু’জনেই নিজের ধর্মের অজ্ঞদের মাথায় হাত বুলিয়ে রোজগার করি।’’

সহাবস্থান, সমন্বয়ে আস্থার মতো সরস ভঙ্গিটিও এই সন্ধ্যার সঞ্চয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amartya Sen Culture West Bengal Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE