রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ। গ্রেফতার রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়। যিনি এখন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সর্বভারতীয় স্তরের গুরুত্বপূর্ণ প্রচারক। দিল্লির করোলবাগ এলাকা থেকে সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় তাঁকে তিন বার গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেছেন বলেও সরশুনা এলাকার বাসিন্দা ওই ৪৫ বছরের বিজেপি নেত্রী অভিযোগ করেছেন। তবে শুধু অমলেন্দুবাবু নন, বিজেপি নেত্রীর অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে শিব প্রকাশ, দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়দের মতো শীর্ষ বিজেপি নেতাদেরও।
বেহালা থানায় দায়ের করা অভিযোগে কী জানিয়েছেন বিজেপি নেত্রী? তিনি জানিয়েছেন, অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েক বছর ধরেই মেলামেশা করছিলেন। অমলেন্দুবাবু তাঁকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং অনেক বারই তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগকারিণীর দাবি। এই সময়ে তিনি তিন বার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন এবং প্রতি বারই চাপ সৃষ্টি করে গর্ভপাত করাতে তাঁকে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ সরশুনা এলাকার বাসিন্দা ওই নেত্রীর। তবে অমলেন্দুবাবু তাঁকে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করেননি এবং সম্প্রতি সব যোগাযোগ ছিন্ন করে দিয়েছিলেন বলে পুলিশকে ওই বিজেপি নেত্রী জানিয়েছেন।
দলীয় কাজে অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি অন্য রাজ্যেও যেতেন বলে নেত্রী জানিয়েছেন পুলিশকে। বাইরে গেলে তাঁরা একসঙ্গেই থাকতেন। দলীয় কাজকর্ম মিটে যাওয়ার পরেও কোথাও কোথাও তাঁরা বেশ কয়েক দিন থেকে যেতেন। সেই এলাকা ঘুরে দেখতেন, মন্দিরে পুজো দিতে যেতেন। দাবি অভিযোগকারিণীর।
আরও পড়ুন: ‘... তুই শিগগিরি বাড়ি ছাড়, শোভনকে বলেছিলেন দিদি’: বিস্ফোরক বৈশাখী
গত মাসে, অর্থাৎ অগস্টেও তিনি অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিল্লি গিয়েছিলেন বলে ওই বিজেপি নেত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন। অগস্টের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত তাঁরা সেখানে ছিলেন বলে ওই নেত্রীর দাবি। তার পর থেকেই আর অমলেন্দুবাবু তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখছিলেন না বলে তিনি পুলিশকে জানান। ফোন করলে ধরছিলেন না, এসএমএস-এর জবাব দিচ্ছিলেন না, কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। দাবি বিজেপি নেত্রীর।
শুধু পুলিশের কাছে নয়, সংবাদমাধ্যমের কাছেও মুখ খুলেছেন সরশুনা এলাকার বাসিন্দা ওই বিজেপি নেত্রী। তিনি জানিয়েছেন, অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় তাঁকে খুবই ভালবাসতেন এবং সেই ভালবাসার কাছেই তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শুধু তাঁকে নয়, তাঁর ছেলেকেও অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় খুবই স্নেহ করতেন বলে বিজেপি নেত্রী জানিয়েছেন। তবে ছেলে প্রথমে অমলেন্দুবাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা জানতেন না বলে তাঁর দাবি। জানার পরে তাঁর ছেলে অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এই সম্পর্কের সামাজিক তথা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি চান। জানিয়েছেন বিজেপি নেত্রী। স্ত্রী হিসেবে সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি দিতে তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে করবেন বলেও অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় সে সময়ে প্রতিশ্রুতি দেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওই নেত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সামাজিক স্বীকৃতির পথে অমলেন্দুবাবু আর হাঁটেননি এবং অগস্টের ৮ তারিখের পর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। বিজেপি নেত্রীর দাবি অন্তত এমনই।
আরও পড়ুন: বাগড়ি মার্কেটের ভবিষ্যৎ কী? ফিরহাদকে ঘিরে বিক্ষোভ
অভিযোগের ভিত্তিতে অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। খবর মেলে, তিনি দিল্লির করোলবাগ এলাকায় রয়েছেন। কলকাতা পুলিশের একটি দল দিল্লি যায়। সোমবার সেখান থেকেই অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ শুধু অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নয়। অভিযোগপত্রে বিজেপির সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশেরও নাম রয়েছে। কলকাতার একটি হোটেলে ২০১৬ সালে শিব প্রকাশ তাঁর শ্লীলতাহানি করেছিলেন বলে অভিযোগকারিণীর দাবি। দলীয় স্তরে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁকে শাসানি দেওয়া, গর্ভপাতের জন্য চাপ দেওয়া, অমলেন্দু-শিব প্রকাশদের ‘কুকর্মে’ সহায়তা করা— এমন নানা অভিযোগ এনে এফআইআর-এ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং আরএসএস নেতা বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়ের নামও জুড়ে দিয়েছেন ওই নেত্রী। পুলিশ তাই এ বার শিব প্রকাশ, দিলীপ, সুব্রত, বিদ্যুৎদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
বিজেপি-র জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এ রাজ্যে অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে দিকে নজর নেই কারও। সরকারের প্রধান কাজ, কী ভাবে বিজেপিকে অপদস্থ করা যায়। মিথ্যা মামলা চাপিয়ে বিজেপিকে কালিমালিপ্ত করা যাবে না। বিজেপিকে এ ভাবে অপদস্থ করে শাসক দল নিজেদের বিনাশ ডেকে আনছে।’’ কিন্তু, অভিযোগকারীণী তো তাঁর দলেরই? রাহুলের দাবি, ‘‘দলে ছিলেন একটা সময়ে। এখন দলের কেউ নন।’’
ওই মহিলার অভিযোগ সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু বলেন, ‘‘কমপক্ষে দেড় বছর ওঁর সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। আমি রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর উনি আমায় বলেছিলেন, উনিই আমাকে ওই দায়িত্বে বসিয়েছেন। অতএব, আমিও যেন তাঁকে বড় দায়িত্ব দিই। তখনই আমি বুঝেছিলাম, ওঁর ভাবনায় গোলমাল আছে। তার পর থেকে আমি ওঁর সঙ্গে দূরত্ব রেখেই চলতাম।’’ দিলীপবাবুর চ্যালেঞ্জ, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ওঁর কোনও অভিযোগ থাকলে সামনে এসে বলুন। আমি জবাব দিতে তৈরি আছি। আসলে সবই চক্রান্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy