মানিকতলা উপনির্বাচনে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা, নেই কোন ভোটারদের চাপ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
বাংলায় ভোটের চেনা ছবিরই পনরাবৃত্তি হল উপনির্বাচনে! দিনভর উঠে এল বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ, বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলার অভিযোগ। চার বিধানসভা কেন্দ্রের এই উপনির্বাচনে সরাসরি ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়েছে বিরোধীরা। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, বিরোধীরাই ‘পায়ে পা দিয়ে’ অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করেছে!
লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের এক মাসের সামান্য বেশি ব্যবধানে বুধবার উপনির্বাচন ছিল রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা ও মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে। উপনির্বাচনে সাধারণত বাড়তি সুবিধা থাকে শাসক দলের। বিরোধীদের আশঙ্কা ছিল, উপনির্বাচনে ‘ভোট লুটে’র চেষ্টা হবে। ভোটের দিন কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, জেলার তিন কেন্দ্র তো বটেই, খাস কলকাতার মানিকতলা বিধানসভা এলাকাও অভিযোগের বাইরে থাকেনি। শুধু মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই ৮৯টি বুথু পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপি। বাগদারও পাঁচটি বুথে ফের ভোটের দাবি করেছে তারা। বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথ থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চার কেন্দ্রেরই নানা এলাকা থেকে।
হেমতাবাদে এ দিন দলীয় নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে শিলিগুড়ি যাওয়ার পথে রায়গঞ্জে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘যেখানে যেখানে ভোট হয়েছে, সর্বত্র তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী সন্ত্রাসের ভোট করেছে। রায়গঞ্জে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও বুথে ঢুকে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী ও পুর-প্রতিনিধিরা ভোট লুট করেছে। বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ ও কলকাতার বুকে মানিকতলাতেও তৃণমূল গুন্ডামি করেছে।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারলে সর্বত্র বিজেপি জিতবে।” এজেন্টদের বুথ থেকে বার করে দেওয়া ও শাসক দলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগে ভোট চলাকালানীই রানাঘাটে মহকুমা শাসকের দফতরে সিপিএম বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘এই উপনির্বাচন আবার প্রহসন হয়েছে! কিছু দিন আগেই যারা জনাদেশ নিয়ে বাংলায় সব চেয়ে বেশি আসন পেল, তাদের এত গা-জোয়ারি করতে হবে কেন? তার মানে তারাই (তৃণমূল) বুঝিয়ে দিচ্ছে, মানুষের উপরে তাদের আস্থা নেই! আগের ভোটের ফল হিসেবে যা দেখা যাচ্ছে, সেটাই প্রকৃত চিত্র নয়।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ও বলেছেন, ‘‘বাংলায় টাকা খরচ করে নির্বাচন করার দরকারটা কী আর! একই প্রহসন যখন বারবার পুনরাবৃত্তি হবে! সর্বগ্রাসী তৃণমূল সবটা লুট করে নিলেই ঝামেলা চুকে যায়!’’
‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’ মঞ্চের সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘চারটে কেন্দ্রের উপনির্বাচনও অশান্তি ছাড়া করা গেল না। বিভিন্ন জায়গায় বিরোধীদের মারধর, ভাঙচুর, এমনকি চলল গুলিও। ভোট-কেন্দ্রের ৫০ মিটারের মধ্যে তৃণমূলের গুন্ডারা জমায়েত করে মিছিল করছে। কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনো তৎপরতা দেখা গেল না। কী দরকার গণতন্ত্রের নামে এই প্রহসনের!’’
তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘মানিকতলা-সহ রাজ্যের চারটি কেন্দ্রে উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে। তৃণমূল উন্নয়নের উপরে দাঁড়িয়ে ভোট করেছে। তৃণমূলের কোনও রকম অশান্তি করার প্রয়োজন নেই। হারের অজুহাত তৈরি করে রাখতে কোথাও বিজেপি পায়ে পা দিয়ে প্ররোচনা তৈরি করার চেষ্টা করেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তার পরেও তৃণমূল কর্মীরা যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছেন। বাকি জায়গায় বিজেপির গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের ফলে কিছু জায়গায় অশান্তি হয়েছে। যার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। সব মিলিয়ে ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ।’’
মানিকতলার ভোট নিয়ে দফায় দফায় এ দিন প্রতিবাদ করেছে বিজেপি। ভোট মিটতেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে গিয়ে ৮৯টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে, বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ ও গত লোকসভায় কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়। তৃণমূলে বিরুদ্ধে বুথ দখল, ছাপ্পা ও লুটের অভিযোগে ফুলবাগান থানার সামনে ধর্নাও দিয়েছে বিজেপি। সব চেয়ে বেশি ২২টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি উঠেছে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। আবার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণের মায়ের কাছে ভোটার স্লিপ না পৌঁছনোয় তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে ভোট দিতে সাহায্য করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডের নির্বাচনী এজেন্ট অনিন্দ্য কিশোর রাউতকে। সার্বিক ভাবে অবশ্য কত বুথে পুনর্নির্বাচন চায় তারা, সেই হিসেব এ দিন রাত পর্যন্ত দেয়নি বিজেপি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় রাখার দায়িত্বে থাকা রাজ্য বিজেপির নেতা শিশির বাজোরিয়ার বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনই তো হয়নি! তার আবার পুনর্নির্বাচন কী? তবে সব জায়গা থেকে এখনও চূড়ান্ত সংখ্যা এসে পৌঁছয়নি।’’
লোকসভা ভোটের মতোই মানিকতলা-সহ একাধিক কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে কুণালের ব্যাখ্যা, ‘‘মানিকতলার সঙ্গে বাকি জায়গার পার্থক্য আছে। মানিকতলা সাধারণ মানুষ যাঁরা কল্যাণের করা মামলার জন্য তিন বছর বিধায়ক পাননি, পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যাঁরা কল্যাণকে ওই এলাকায় তিন বছর দেখেননি, তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy