সেই প্রাসাদোপম বাড়ি। সোহরাব হোসেন। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের মধ্যে একফালি ঘরে একটি সেলাই মেশিন ছিল তাঁর সম্বল। রোজগারও ছিল সামান্য।
১০ বছরের ব্যবধানে সোহরাব হোসেন শুধু আরামবাগের আরান্ডি-১ পঞ্চায়েতের প্রধানই নন, এলাকায় শাসক দলের অন্যতম প্রধান মুখ। প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক। যেখানে কয়েক হাজার টাকা বকেয়া থাকলেও বিদ্যুতের লাইন কাটা যায় আমজনতার, সেখানে কয়েক বছর ধরে প্রায় সাত লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেননি তিনি। সম্প্রতি মাত্র এক লক্ষ টাকা তিনি শোধ করেছেন বলে দাবি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার। কিন্তু তাঁর লাইন কাটার কথা ভাবতেও পারেননি সংস্থার কর্তারা। দাপট এমনই!
আরান্ডিতে কান পাতলে সোহরাবের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, হুমকি, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো, মারধর, জমি দখল, টাকা আত্মসাৎ-সহ নানা অভিযোগ শোনা যায়। পুলিশি সূত্রের খবর, ফোনে সাহায্য চেয়ে অভিযোগ আসে প্রচুর। কিন্তু শেষমেশ তা এফআইআর পর্যন্ত গড়ায় না। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় নথিভুক্ত চারটি মামলার (মারধর ও বোমাবাজি) তদন্ত চলছে। কয়েকটি মামলায় তিনি জামিনও পেয়েছেন।
এ-হেন বছর তিপ্পান্নর সোহরাবকে আমপান ক্ষতিপূরণে দুর্নীতি এবং গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগে এই প্রথম বার শো-কজ় করেছে দল। সোহরাব উত্তরও দিয়েছেন। শাস্তি হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে গ্রামবাসীর এবং বিরোধীদের।
কেন? বিরোধীদের দাবি, ভোট উতরোনোয় সোহরাবের বড় ভূমিকা রয়েছে। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা জানা সত্ত্বেও এত দিন শাসক দল ব্যবস্থা নেয়নি। এ বার ক্ষতিপূরণ-দুর্নীতি নিয়ে হইচই হওয়ার পরে তৃণমূল তৎপর হলেও শেষমেশ সোহরাবের টিকি ছোঁয়া যাবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুন: ব্লকে আবেদন করায় ‘মারধর’ ক্ষতিগ্রস্তদের
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের দাবি, ‘‘এই শো-কজ় বিধানসভা ভোটের আগে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার পরিকল্পনা।’’ সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের ভোট এবং টাকা লুটের বাহিনী ওরা। এই শো-কজ় তৃণমূলের আই-ওয়াশ।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব অবশ্য বলেন, ‘‘শো-কজ়ের উত্তর পেয়েছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।’’ আর সোহরাব বলছেন, ‘‘বাম আমল থেকে ৪০টিরও বেশি মামলা হয়েছে আমার নামে। তিন-চারটি ছাড়া সব ক’টির নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও প্রমাণ কেউ দাখিল করতে পারেননি।”
কিন্তু পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা তো বলছেন, প্রমাণ দাখিল করবে এই বাজারে বুকের পাটা কার আছে!
ভুক্তভোগী হিয়াৎপুরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, “দলীয় কার্যালয় করার নামে দু’বছর আগে সোহরাবরা আমার ২ শতক জায়গা দখল করে। প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলায় তিন বার জেল খেটেছি। চার বার জরিমানা দিয়েছি। এখন আবার আমার জায়গাটা ফিরিয়ে দেবে বলে ৫০ হাজার টাকা চাইছে।’’ পুরশুড়ার সোদপুরের এক কাঠ ব্যবসায়ীর অভিযোগ, “বছর পাঁচেক আগে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার কাঠ নিয়েছিলেন সোহরাব। সেই টাকা এখনও দেননি। তাঁর বাড়িতে তাগাদায় গেলে হুমকি দিয়েছেন।” আরামবাগ ব্লক অফিসের এক আধিকারিক বলেন, “একটি অভিযোগের তদন্তে গিয়েছিলাম বলে গাছে বেঁধে রাখারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভয়ে পালিয়ে আসি।” সোহরাবের বিরুদ্ধে এক সময়ে পথ অবরোধও করেছিলেন পুর বাজারের ব্যবসায়ীরা।
সোহরাব অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি গরিব মানুষ। চাষবাস করে খাই। মানুষের উপকার করি। আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা।’’
এই প্রাসাদোপম বাড়ি?
শান্ত সোহরাব বলেন, ‘‘চাষাবাদ এবং তিনটি মিনি ডিপ-টিউবওয়েল থেকে সেচের জল বিক্রির আয় জমিয়ে এই বাড়ি করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy