নাজিম আহমেদের ছবিতে মালা দিচ্ছেন স্ত্রী রহিমা আহমেদ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
যখন বেঁচে ছিলেন সকলকে নিয়ে চলতে ভালবাসতেন। এখন তিনি আর নেই। তবু তিনিই সকলকে এক করে দিলেন।
তিনি নাজিম আহমেদ। মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান। তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে সোমবার শহরে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ভরা ভোট মরসুমেও কংগ্রেস-তৃণমূল-সিপিএম সব দলের নেতারা এলেন এক ছাতার তলায়। উদ্যোক্তাদের পক্ষে সোমনাথ কারক, শেখ সানিরা স্মৃতি হাতড়ে বললেন, “উনি (নাজিম) সত্যিই অন্য রকম মানুষ ছিলেন। এ রকম বর্ণময় চরিত্র পাওয়া কঠিন। ওঁর নিজস্ব রাজনৈতিক মত থাকতে পারে। তবু সব দলের নেতারাই ওঁকে ভালবাসতেন। কেউ অসুবিধেয় পড়েছে শুনলেই ছুটে যেতেন। পাশে দাঁড়াতেন। যাঁকে চিনতেন, নিবিড় ভাবেই চিনতেন। আমরা তাই দলমতের উর্ধ্বে উঠে সকলেই সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সকলে এসেছেন। ভাল লাগছে।”
অলিগঞ্জ অ্যাথলেটিক ক্লাব ও মেদিনীপুর ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স সোসাইটির পক্ষ থেকে এ দিন ডাক শ্রমিক ভবনে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এখানেই স্মরণসভা হয়। ছিলেন নাজিম আহমেদের স্ত্রী রহিমা আহমেদ, সিপিএম নেতা কীর্তি দে বক্সী, তৃণমূল নেতা সুব্রত সরকার, কংগ্রেস নেতা তীর্থঙ্কর ভকত, আরএসপি নেতা শক্তি ভট্টাচার্য, সিপিআই নেতা শেখ গিয়াসউদ্দিন প্রমুখ। কীর্তিবাবু বলছিলেন, ‘‘নাজিমদাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মানে ওঁর কর্মকাণ্ডকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। অন্য কাউকে ছোট করছি না। তবে পুরপ্রধান হিসেবে উনি মেদিনীপুর শহরের যা উন্নয়ন করেছেন, তা মনে রাখার মতো।” তৃণমূলের সুব্রতবাবুর কথায়, “উনি অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেন। আজকের দিনে ওঁর কথা খুব মনে পড়ছে।” কংগ্রেসের তীর্থঙ্করবাবু বলছিলেন, “নাজিমদা একটা ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিলেন। ওঁর মধ্যে শহরের উন্নয়নের একটা তাগিদ ছিল। নাজিম আহমেদকে স্মরণ করতে হলে ওঁর এই মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”
২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান নাজিম আহমেদ। ট্রেন লাইনে ঝাঁপ দেন প্রাক্তন পুরপ্রধান। তবে তাঁর এ ভাবে চলে যাওয়াকে কেউই যেন মেনে নিতে পারেননি। পারেননি কারণ তাঁর জীবনটাই যে ছিল বর্ণময়। তিনি সকলকে নিয়ে চলতে ভালবাসতেন। একবার কারও সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেলে সহজে তাঁকে ভুলতেন না। কাউন্সিলর হিসেবেও দলমত নয়, মানুষই ছিল তাঁর কাছে একমাত্র পরিচয়। কখনও কাউকে বকাঝোকা করলে পরে তাঁকে আদরও করতেন। ভুল করলে পরবর্তী সময় ভুল শুধরে নিতেন। পুরপ্রধান হিসেবে নাজিম সাহেবকে শহর দেখেছে এক অন্য ভাবে, অন্য রূপে। দেখেছে একজন দক্ষ প্রশাসককে, যাঁর কাছে শৃঙ্খলারক্ষা, পুর- প্রশাসনকে জনমুখী করা, সাধারণ মানুষ ও পুরসভার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোই ছিল প্রধান লক্ষ্য। তাই পুজো কিংবা ঈদকে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত করতে নিত্য নতুন উপায় খুঁজে বের করতেন। বড়দিনের সময় সান্তাক্লজ সেজে ঘুরে বেড়াতেন। এ দিন স্মৃতিচারণায় অনেকের কথাতেই উঠে এসেছে তাঁর জীবনের নানা দিক। ১৯৮১ সাল থেকে কাউন্সিলর ছিলেন নাজিম সাহেব। তিন দফায় পুরপ্রধান হন। শক্তিবাবু বলছিলেন, “মেদিনীপুরের উন্নয়ন ঘিরে তিনি স্বপ্ন দেখাতেন এবং দেখতেন। আজকের দিনে এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই কঠিন।” এলাকার অনেকেই ফুল-মালা নিয়ে সভায় এসেছিলেন। শ্রদ্ধা জানানোর সময় তাঁদের চোখ চিক্চিক্ করেছে। নাজিম সাহেবের চলে যাওয়াটা যেন এখনও মেনে নিতে পারেনি মেদিনীপুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy