Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Ayodhya Ram Mandir Inauguration

চাঁদা, ট্রেন, ইতিহাসের মোড়কে মন্দির-পালা

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সূত্রের দাবি, অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মাণে উত্তরবঙ্গ থেকে ‘সহায়তা’ পাওয়া গিয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। রাম মন্দির ট্রাস্টের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে এই অর্থ।

bjp

—প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায় , বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়
জলপাইগুড়ি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:০৬
Share: Save:

অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনকে ঘিরে এ রাজ্যেও আবেগ ও উন্মাদনার আবহ তৈরিতে কোনও খামতি রাখছে না গেরুয়া শিবির। তাদের দাবি, এই প্রচেষ্টায় সাড়াও মিলছে ভাল। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে আর্থিক ‘সহায়তা’ও চোখে পড়ার মতো।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সূত্রের দাবি, অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মাণে উত্তরবঙ্গ থেকে ‘সহায়তা’ পাওয়া গিয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকা। রাম মন্দির ট্রাস্টের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে এই অর্থ। সূত্রের বক্তব্য, বছর দুয়েক আগে থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করা শুরু হয়েছিল। কুপন থেকে রসিদ—সবেতেই চাঁদা তোলা হয়েছিল। অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধন হতে চলেছে জানুয়ারিতে। উত্তরবঙ্গের একাধিক বিশিষ্ট জনকে রাম মন্দির দেখতে আমন্ত্রণও জানাচ্ছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

মন্দির দর্শনে নানাবিধ ব্যবস্থা করা ছাড়াও রাম মন্দির আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণ করাতেও উদ্যোগী হয়েছে গেরুয়া শিবির। শুধু সাময়িক আয়োজনে সীমাবদ্ধ না থেকে রাম মন্দির আন্দোলনের আবেগের সঙ্গে মানুষকে জুড়তে চাইছেন সঙ্ঘ নেতারা। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকেই রাম মন্দির দর্শনের জন্য পৃথক দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। বাংলার ‘ভক্ত’দের রাম মন্দির দর্শনের জন্য ৬ ফেব্রুয়ারি দিনটি ধার্য হয়েছে। ওই দিন রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারা তো বটেই, গোটা রাজ্য থেকে কর্মী-সমর্থকদের বিশেষ ট্রেনে অযোধ্যা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা স্থির হয়েছে। এই নিয়ে সম্প্রতি আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। সূত্রের খবর, জলধর মাহাতো আরএসএসের পক্ষে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, রাম মন্দির আন্দোলন পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাচীনতম আন্দোলন। আন্দোলন কেন শুরু হয়েছিল, দাবি কী ছিল, কতটা ছড়িয়েছিল, কারা প্রাণ দিয়েছিলেন, সে সব নিয়ে বিস্তারিত প্রচারের কথাও বলা হয়েছে।

সূত্রের খবর, রাম মন্দির দর্শনে বিজেপি নেতারা গেলেও মন্দির-আবহের থেকে দলীয় ছোঁয়াচকে পৃথক রাখতে বলেছে সঙ্ঘ। বিজেপি নেতা-কর্মীরা প্রচারের পুরোভাগে থাকলেও কোনও রকম দলীয় পতাকা, উত্তরীয় ও অন্য প্রচার সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে এই মন্দির-প্রচার করা যাবে না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্দির-প্রচারে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ভূমিকা হবে স্বেচ্ছাসেবকের। মন্দির উদ্বোধনের আগে বাড়ি বাড়ি প্রচারের পাশাপাশি মন্দির উদ্বোধনের দিনও তাঁদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে হবে। মহিলা কর্মীরা তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালাবেন, শঙ্খ বাজাবেন। এ ছাড়া, এলাকার প্রতিটি মন্দিরে রামায়ণ পাঠ, রাম নাম সংকীর্তন ও প্রসাদ বিলির বন্দোবস্ত করতে হবে। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘রাম মন্দির আন্দোলন চির কালই ছিল বৈদেশিক আক্রমণের ক্ষত চিহ্ন মুছে ফেলে জাতির আত্মমর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই। মোট ৬৭টা যুদ্ধ ও সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের মৃত্যুর উপরে দাঁড়িয়ে ২২ জানুয়ারি তার প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে। যারা এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভাজনের রাজনীতির জন্ম দিতে চেয়েছিল, আজ তারা জনবিচ্ছিন্ন। বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রতিটি বিজেপি কর্মীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।’’

উত্তরবঙ্গের খবর, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ১০, ৫০ এবং ১০০ টাকার কুপন ছাপিয়ে চাঁদা তুলেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। জলপাইগুড়ি জেলা থেকে চাঁদা উঠেছে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা। জলপাইগুড়ি শহর থেকেই চাঁদা উঠেছে প্রায় ন’লক্ষ টাকা। জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি চাঁদা উঠেছে ময়নাগুড়ি বিধানসভায়— প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। শুধু শিলিগুড়ি থেকে চাঁদা উঠেছে চার কোটি টাকার কাছাকাছি। মালদহ এবং কোচবিহার থেকেও কোটি টাকার বেশি করে চাঁদা উঠেছে বলে সূত্রের খবর। পরিষদের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু গুহের বক্তব্য, ‘‘জলপাইগুড়ি জেলা থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। সকলে মিলে যে চাঁদা দিয়েছেন, তা দিয়েই রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ থেকেও ভাল সাড়া মিলেছে।” পরিষদ সূত্রেই বলা হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে ছাড়াও সরাসরি অনেকে চাঁদা দিয়েছেন ট্রাস্টকে। তার হিসেব পরিষদের কাছে নেই।

পরিষদ সূত্রের খবর, মন্দির উদ্বোধনের পরে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা থেকে বিশেষ ট্রেন দেওয়া হবে অযোধ্যা যাওয়ার। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে অযোধ্যা যাওয়ার প্রথম বিশেষ ট্রেনে প্রায় হাড়াই হাজার জনকে নিয়ে যাওয়া হবে। লোকসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গ থেকে প্রায় লক্ষ বাসিন্দাকে অযোধ্যা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের। সেই সূত্রেই ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ দেখছে বিরোধীরা। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের মতে, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে ধর্মীয় প্রচার শুরু করেছে সঙ্ঘ পরিবার। ধর্ম নিজের-নিজের। তার পরেও কৌশলে প্রচার চলছে। রাজ্যবাসী তাতে বিভ্রান্ত হবেন না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy