মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
চা বলয়ের আদিবাসী ও অন্য শ্রমিকদের কাছে টানতে এর মধ্যেই একাধিক ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যে রয়েছে ছ’টি চা বাগান অধিগ্রহণ। তাই নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে গেরুয়া শিবির। এ বারে জঙ্গলমহলের আদিবাসী এবং কুড়মি ভোটের জন্যও ঝাঁপাল রাজ্যের শাসক ও প্রধান বিরোধী দল। এক দিকে শালপাতা সংগ্রহকারী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য, অন্য দিকে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আমন্ত্রণ পেলেন জঙ্গলমহলেরই মেয়ে এবং কুড়মিদের আন্দোলনের অন্যতম এক নেতার কন্যা পিঙ্কি মাহাতো।
লোকসভা ভোট আসন্ন। তার আগে তিন বিধানসভা নির্বাচনে আদিবাসী ভোটের বড় অংশ গেরুয়া বাক্সে গিয়েছে বলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা অন্য। ২০১৯ সালে আদিবাসী ভোট বিজেপি পেলেও, ২০২১-এ তা অনেকটাই তৃণমূলের দিকে ফেরে। সামগ্রিক ভাবে আদিবাসী ও জনজাতি ভোটে এ বার নজর দুই দলেরই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, চা বলয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণাগুলিও সেই লক্ষ্যেই। একই ভাবে জঙ্গলমহলেও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে শালপাতা সংগ্রহকারী শ্রমিকদের নিয়ে সভা করে চলেছে। তৃণমূলের এই শ্রমিক সংগঠনের দাবি, গত এক বছর ধরে এই শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা যোজনায় অন্তর্ভুক্ত করতেই এই কর্মসূচি হচ্ছে।
জঙ্গলমহলে জনজাতিদের অন্যতম জীবিকা শালপাতা সংগ্রহ। সেই শালপাতা সংগ্রহকারী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা যোজনায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে সরব হয়েছে গেরুয়া শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘও। তবে ‘আনঅর্গানাইজড সেক্টর ওয়াকার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড’-এর তালিকায় শালপাতা সংগ্রহকারীরা নেই। ফলে, এ রাজ্যের ৩২ লক্ষ শালপাতা সংগ্রহকারী শ্রমিককে অসংগঠিত শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়া হয়নি।
আইএনটিটিইউসি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি মহাশিস মাহাতোর কথায়, ‘‘শ্রম দফতরের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে উদ্যোগী হয়েছি। তার আগে প্রতি এলাকায় সভা করে শালপাতা সংগ্রহকারীদের সমস্যা জানা হচ্ছে।’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শালপাতার দর বৃদ্ধি করেছেন, মনে করান মহাশিস। কিন্তু ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের অভিযোগ, থার্মোকল ও কাগজের উপর প্লাস্টিক ল্যামিনেশন করা থালা-বাটির রমরমায় শালপাতার চল কমছে। শালপাতা সংগ্রহের মজুরি বাড়েনি। শ্রমিকেরা সেই তিমিরেই।
২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে ডাক পেয়েছেন ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পঞ্চম সিমেস্টারের ছাত্রী পিঙ্কি মাহাতো। এই সুযোগ পেয়েছেন রাজ্যের আট জন। বছর কুড়ির পিঙ্কির বাড়ি সাঁকরাইলে। তাঁর বড় পরিচয়, আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের নেতা অনুপ মাহাতোর মেয়ে। ফলে, এ ক্ষেত্রেও ঢুকে পড়েছে রাজনীতির চর্চা।
অজিতপ্রসাদ মাহাতোর নেতৃত্বাধীন আদিবাসী কুড়মি সমাজকে নিয়ে অন্য কুড়মি সংগঠনগুলি একযোগে আন্দোলনে যাবে— এই ঘোষণার পরে অনুপ সরে এসে একা তাঁর সংগঠনের কর্মসূচি করছেন। মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়িতে হামলায় অন্য কুড়মি নেতাদের সঙ্গে অনুপও গ্রেফতার হন। পরে সবাই জামিন পান। তবে চার্জশিট থেকে একমাত্র অনুপের নাম বাদ গিয়েছে। তা হলে কি অনুপ-কন্যার দিল্লি-যাত্রার সুযোগের পিছনে কুড়মি আবেগ স্পর্শ করার রাজনীতিই সক্রিয়? অনুপ বলছেন, ‘‘এনএসএস থেকে পিঙ্কি এই সুযোগ পেয়েছে। এবং সেটা নিজের যোগ্যতায়।’’
অজিত মাহাতো নিজে ইতিমধ্যে দিল্লি ঘুরে এসেছেন। বিভিন্ন রাজ্যে নিজ নিজ জাতিসত্তার দাবিতে আন্দোলনকারী নানা সংগঠনগুলিকে এক সুতোয় বাঁধতে চাইছেন অজিতরা। সেই লক্ষ্যে লোকসভা ভোটের মুখে, আগামী মার্চ মাসে পুরুলিয়ায় তিন দিনের বড় সমাবেশ করতে চলেছেন তাঁরা। তার রণকৌশল তৈরি করতে দিল্লিতে বিভিন্ন কুড়মি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন অজিত। সেখানে বিজেপি, জেডিইউ তো বটেই, বিজেডির সাংসদও ছিলেন।
একজোট হয়ে কি তাঁরা কোনও দলের সঙ্গে সমঝোতা করবেন? অজিতের জবাব, ‘‘যদি কোনও দল আমাদের দাবি তাদের ইস্তাহারে রাখে, আমাদের বিষয়টি ভাবে, আমরাও সেই দলের কথা ভাবতে পারি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy