Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Mukut Mani Adhikari

ফুলবদলের চাপ নিয়েই ময়দানে ফের মুকুটমণি

মুকুটের ছেড়ে যাওয়া আসনে তাঁর ছেড়ে আসা দল এ বার যাঁকে প্রার্থী করেছে, সেই মনোজকুমার বিশ্বাস আমজনতার কাছে ততটা পরিচিত নন।

Mukut Mani Adhikari

মুকুটমণি অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

সুদেব দাস
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৬:৩১
Share: Save:

ভোটে ভোটে মরসুম বদলায়।

এই তো সে দিন, তীব্র তাপপ্রবাহ। তার মধ্যেই লোকসভার ভোটের লাইন পড়েছিল। বর্ষা আসতে না আসতে ফের ভোট রানাঘাট দক্ষিণে। সেই কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী দল বদলে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন যে!

ভিজতে ভিজতে চায়ের দোকানে ঢুকে ভোটের চর্চা শুনে এক প্রৌঢ় ফুট কাটলেন, ‘‘ভোট দিয়ে আর কী হবে? যিনি ক’বছর আগে বিজেপির বিধায়ক ছিলেন, তিনিই এখন তৃণমূল প্রার্থী!’’ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে এক জন আবার বলে উঠলেন, ‘‘শুনছি নাকি জিতলে মুকুটমণি বিজেপিতে ফিরে যাবেন?’’

মুকুটের ছেড়ে যাওয়া আসনে তাঁর ছেড়ে আসা দল এ বার যাঁকে প্রার্থী করেছে, সেই মনোজকুমার বিশ্বাস আমজনতার কাছে ততটা পরিচিত নন। আরএসএস থেকে শুরু করে ক্রমশ বিজেপির সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠেছেন বেথুয়াডহরি সাহাপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের এই ইংরেজি শিক্ষক। বর্তমানে তিনি রাজ্য বিজেপির অন্যতম সম্পাদক। লোকসভা ভোটে রানাঘাট কেন্দ্রের ইনচার্জও ছিলেন তিনিই। তবে তাঁর বাড়ি কৃষ্ণনগরে, ফলে তাঁর নাম ঘোষণার পরেই ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছিল। এই কেন্দ্রে জিততে গেলে তাঁকে মতুয়া ভোটেই ভর করতে হবে, মুকুটমণি নিজে যে সম্প্রদায়ের অন্যতম ‘মুখ’।

আরও এক জন আছেন ভোটের ময়দানে। তিনি সিপিএমের তরুণ প্রার্থী অরিন্দম বিশ্বাস। তিনিও স্কুলশিক্ষক। দলের এরিয়া কমিটির সদস্য তো বটেই, ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও বটে। তবে ফুলের এই চত্বরে কাস্তের বাজার এখন তেমন নেই।

ভোটারদেরও যে খুব উৎসাহ আছে তা নয়। রানাঘাট শহর থেকে চূর্ণীর সেতু পেরোলেই আনুলিয়া গ্রাম। রাস্তার পাশে কল থেকে জল নিচ্ছিলেন বছর পঞ্চাশের এক মহিলা। ভোটের কথা শুনেই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলেন। পাড়ার দোকানি বলে দিলেন, ‘‘ভোট দিতে হয় দেব, ওই পর্যন্তই।’’

রানাঘাট ১ ও ২ ব্লকের মোট ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও একটি পুর এলাকা নিয়ে এই কেন্দ্র। লোকসভা ভোটে ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩টিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। একমাত্র পুর এলাকা কুপার্সেও তা-ই। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধান। গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী মুকুটমণি, ফল উল্টে দিতে গেলে তাঁকে অন্তত ওই ব্যবধানটুকু ঘোচাতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশভাগের পর উদ্বাস্তু স্রোতের অন্যতম সাক্ষী কুপার্স। সেখানকার বাসিন্দা সুজয় বিশ্বাস কলকাতায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। বললেন, ‘‘ভোট তো দিয়েছিলাম গত বারেও। কিন্তু সাধারণ মানুষ কী পেল?’’

কুপার্স শহর ছাড়িয়ে নোকারি ফুল বাজার এলাকা। ফুলচাষিদের মুখেও এক কথা: ২০১৬ সালে জয়ী সিপিএম বা গত বার জয়ী বিজেপি প্রার্থী, ভোটের পরে কারওরই দেখা মেলেনি। তা হলে কি এ বারে বদলে যাবে ফুল? শুনে মুচকি হাসেন ফুলওয়ালারা।

এই কেন্দ্রের ভোটারদের বড় অংশ মতুয়া। ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪— তাদের বড় অংশ তৃণমূল বিমুখ। তবে এ বারে মুকুটকে প্রার্থী করা নিয়ে তৃণমূলেই মতানৈক্য। আবার বিজেপির মনোজ রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বিরোধী শিবিরের লোক হিসেবে পরিচিত। এই দুই প্রার্থীর কেউ এই বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাও নন। শুধু সিপিএম প্রার্থীই স্থানীয় বাসিন্দা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামেরা কিছুটা মাথাও তুলেছেন। ফলে ভোট কেটে অরিন্দম অন্য কারও যাত্রাভঙ্গ করতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mukut Mani Adhikari BJP TMC Ranaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE