অনুদানের টাকা খরচের হিসেব না-দিলে পরের বছর থেকে বরাদ্দই বন্ধ হয়ে যাবে বলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে হুমকি দিয়েছে ইউজিসি। প্রায় একই রাস্তায় হেঁটে রাজ্য সরকার এ বার জানিয়ে দিল, তাদের দেওয়া টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ না-করলে কলেজগুলির পরবর্তী আর্থিক বছরের সাহায্য আটকে দেওয়া হবে।
‘টাকা দিই, তাই হিসেবও চাই’— এই সুর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি এবং রাজ্য সরকারকে মিলিয়ে দিচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, শিক্ষামন্ত্রী বরবারই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সরকারি অর্থ যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে বলছেন। সেই নির্দেশ কলেজগুলি মানল কি না, এ বার তা দেখার সময় এসেছে বলে মনে করছে উচ্চশিক্ষা দফতর। তা-ই দফতর থেকে এই মর্মে কড়া ভাষায় নির্দেশ গিয়েছে রাজ্যের সব কলেজে।
সম্প্রতি উচ্চশিক্ষা সচিব বিবেক কুমারের জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, কলেজের বাড়ি তৈরি, বাড়ি সংস্কার, আসবাবপত্র কেনা, বই-জার্নাল কেনা–সহ বিভিন্ন খাতে চলতি আর্থিক বছরে যে-টাকা দেওয়া হয়েছে, তা খরচ করতে না-পারলে আগামী আর্থিক বছরে সংশ্লিষ্ট কলেজ আর আর্থিক অনুদান পাবে না। ওই নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, বেশ কিছু কলেজ টাকা খরচের ব্যাপারে রীতিমতে গড়িমসি করছে। এই মানসিকতা মোটেই কাম্য নয়। বছরের শেষে অর্থ ব্যবহৃত না-হওয়ার এই ধরনের উদাহরণ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে কলেজগুলিকে দেওয়া টাকার যথাযথ ব্যবহার না-হলে আগামী বছর সংশ্লিষ্ট কলেজকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে না।
সম্প্রতি ইউজিসি-ও এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুদানের টাকা খরচের সবিস্তার হিসেব-সহ দিল্লিতে তলব করেছে। সেই হিসেব দাখিল না-করলে সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে তারা।
সেপ্টেম্বরে উচ্চশিক্ষা দফতর রাজ্যের সব কলেজকে ২০০৫-’০৬ থেকে সব আর্থিক বছরে সরকারি অনুদানের খরচের হিসেব দিতে বলেছিল। নভেম্বরে শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার সম্মেলন, অতি সম্প্রতি সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির অনুষ্ঠান-সহ সর্বত্রই সরকারি অর্থের সদ্ব্যবহারের উপরে এবং ঠিক সময়ে তার হিসেব পেশের উপরে জোর দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিধানসভাতেও রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি।
সরকার যে বারবার এ ভাবে টাকার হিসেব চাইছে, সেটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার হরণের চেষ্টা বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তবে শিক্ষামন্ত্রীর বরাবরের যুক্তি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চলে সরকারের দেওয়া অর্থে৷ সেই টাকা জনসাধারণের৷ সরকার তাই সেই অর্থের হিসেব নিতে দায়বদ্ধ। এটাকে মোটেই স্বাধিকার হরণ বলে না।
এই নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের টানাপড়েনের মধ্যেই নতুন নির্দেশিকা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন অনেক কলেজের কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক জন কলেজ-অধ্যক্ষ জানান, চলতি আর্থিক বছরের পাওয়া সব টাকা খরচ করা যায়নি। আগামী বছরের টাকা না-মিললে কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগে আছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy