কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের বাইরে বক্তৃতা দিচ্ছেন ঐশী ঘোষ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐশী ঘোষের সভা ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশীকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ঢুকতে না দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেটই বৃহস্পতিবার বন্ধ করে দেওয়া হল। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে সভা করলেন ঐশী।
এই সভার আয়োজক ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেভ অটোনমি, সেভ দ্য ইউনিভার্সিটি ফোরাম’। ফোরামের পক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থিব বসু জানান, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরোধিতা, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আক্রমণ-সহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বক্তৃতা করার কথা ছিল ঐশীর। কিন্তু উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘বহিরাগত’কে নিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সভা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বিরোধী। তিনি জানিয়েছেন, উদ্যোক্তারা এই সভার অনুমতিও নেননি। পার্থিববাবুর পাল্টা বক্তব্য, সভা যে করা হবে, তা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘উপাচার্য যা বলছেন, তা তথ্যনির্ভর নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বারবারই এসেছেন। সভায় অংশ নিয়েছেন। নিকট অতীতে শাসক দলের নেতারা এসে সভা করেছেন।’’ তাঁর যুক্তি, ঐশী এক জন ছাত্রী। দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী। তাঁকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেওয়া কোনও যুক্তিযুক্ত কাজ নয়।
বন্ধ ফটকের বাইরে সভা করার পরে কলেজ স্ট্রিটের বিদ্যাসাগর মূর্তি থেকে শ্যামবাজারে নেতাজি মূর্তি পর্যন্ত নাগরিক মিছিলে যোগ দেন ঐশী। ‘আমার এই দেশেতেই জন্ম, যেন এই দেশেতেই মরি’ লেখা ব্যানার নিয়ে ঐশীর সঙ্গে মিছিলে ছাত্র-যুবদের পাশাপাশি হাঁটেন তরুণ মজুমদার, চন্দন সেন, অনীক দত্ত প্রমুখ বিশিষ্ট জন। বামপন্থীদের পাশাপাশি যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরাও। মিছিলের পিছন দিকে ছিলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, অশোক ঘোষের মতো বাম নেতারা। মিছিলে ভিড় হয়েছিল ভালই। বিধান সরণি ধরে হেদুয়া, হাতিবাগান হয়ে মিছিলের পথে অনেক মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন ঐশীকে দেখার জন্য। কলকাতার মানুষকে ঐশী ধন্যবাদ জানান এই লড়াইয়ের পাশে থাকার জন্য।
কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।
তার আগে নিজেদের ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-পড়ুয়া-কর্মীদের সভা করতে না দেওয়ায় ফোরামের সদস্যেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ গেটের সামনে পার্থিববাবু-সহ অন্যেরা বসে পড়েন। ওঠে ‘আজাদি’ স্লোগান। কুটার সভানেত্রী ঈশিতা মুখোপাধায় বলেন, ‘‘এই ভাবে গেট বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে জেলখানা বানানো আগে কখনও হয়নি!’’ প্রথমে কলেজ স্ট্রিটের দিকের গেটের একটি ছোট অংশ শুধু খোলা রাখা হয়েছিল। তা দিয়ে পড়ুয়া, শিক্ষাকর্মী এমনকি শিক্ষকদের হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হচ্ছিল। পরে তা-ও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে যেমন কেউ ঢুকতে পারছিলেন না। ভিতরেও আটকে পড়েন অনেকে।
তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা নিয়ে এমন কাণ্ড প্রসঙ্গে ঐশী বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার, তর্ক-বিতর্কের জায়গা। তা যদি রুদ্ধ হয়, তা হলে ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা হয়।’’ তিনি জানান, দেশের এই সময়ে পক্ষ বাছতেই হবে। ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পর্যুদস্ত করতেই হবে। গেটের বাইরে আয়োজিত সভায় ঐশী বলেন, ‘হিন্দু-হিন্দু-হিন্দুস্তানের নামে দেশ ভাগ করা চেষ্টা চলছে। আগে কখনও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আর আজহারউদ্দিনের মধ্যে ভাগ হয়নি। আজ তা হতে চলেছে। সময় এসেছে, বিজেপি-আরএসএসের চোখে চোখ রেখে বলতে হবে তোমাদের রাজনীতি মানছি না। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত এবং বাংলাকে ভাগ হতে দেব না।’’
ক্যাম্পাসে ঐশীকে বাধা দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও বেধেছে। বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবু বলেন, ‘‘বাম মতাদর্শকে ভয় পায় বলে বিজেপি-আরএসএসের গুন্ডাবাহিনী ঐশীকে আক্রমণ করেছে। আর বাংলায় দুর্গাপুর, কলকাতায় ঐশীর মিছিল-সভায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপি আর তৃণমূলে কোনও তফাত নেই।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘ঐশীকে ঢুকতে দিল কি দিল না, তাতে বাংলার রাজনীতিতে কিছু যায় আসে না। এ রাজ্যে বিরোধী একমাত্র বিজেপি। কংগ্রেস-সিপিএম রাজ্যের শাসক দলের গৃহপালিত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy