প্রতীকী ছবি।
দূষণে জেরবার হয়ে প্রতিবাদ করে জনতা। কখনও তাতে কাজ হয়। কোথাও পুরো, কোথাও আংশিক। আবার কোথাও বহু প্রতিবাদেও কাজ না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এক সময় বীরভূমের বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভরে যাওয়া ছাই-পুকুর (অ্যাশ পন্ড) থেকে ছাই উড়ে এবং বর্জ্য-জল চন্দ্রভাগা নদীতে মিশে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল এলাকাবাসীর। ২০১৫-১৬ নাগাদ প্রতিবাদে অবরোধ-বিক্ষোভ হয়। মামলা হয় কলকাতা হাই কোর্টের গ্রিন বেঞ্চে। ২০১৮ সাল নাগাদ দ্বিতীয় ছাই-পুকুর হওয়ার পরে, সমস্যা মেটে।
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণের প্রতিবাদে নব্বইয়ের দশকে গঠিত হয় ‘কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’ নামে অরাজনৈতিক সংগঠন। কমিটির আন্দোলনের জেরে অন্তত দশ বার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করে। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় ছাই জমে বুজতে বসা মেচেদা-বাঁপুর খাল, দেনান খাল, মেদিনীপুর ক্যানাল সংস্কার করতে। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শুধরেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই বাংলাদেশে রফতানি করা হয়। বাংলাদেশ থেকে নদীপথে আসা বার্জ ছাই নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, কয়েক বছর আগেও রাস্তায় ও বার্জ থেকে নদীতে ছাই পড়ে দূষণ ছড়াত। এলাকার মহিলারা রাস্তা অবরোধ করেন। বিক্ষোভ-অবস্থান করেন এলাকাবাসী। এখন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাইপের মাধ্যমে নদীর ঘাটে বার্জে ওই ছাই বোঝাই করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নদীতে দূষণের সম্ভাবনা নেই, বলে মানছেন স্থানীয় পরিবেশবিদ স্বপ্নময় ঘোষ। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড়শো-দু’শো ছাই বোঝাই ডাম্পার এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছে। রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় ডাম্পার থেকে ছাই মাটিতে পড়ছে। কারও হুঁশ নেই।’’ পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী, রাস্তায় যেখানে ছাই পড়বে তা ধুয়ে সাফ করতে হবে। কিন্তু পুরসভা তাতে তেমন উদ্যোগী নয় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তবে বজবজ পুরসভার এক কর্তা গৌতম দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকায় হয়তো সব সময় ছাই পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। কিন্তু পুরসভা এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে।’’ পুজালি পুরসভার প্রশাসনিক প্রধান তাপস বিশ্বাসও বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকলেও, থাকতে পারে। নজরদারি আরও জোরদার করতে হবে।’’ বজবজ এলাকায় দূষণ-চেতনা বাড়াতে স্থানীয় পরিবেশ সংগঠন দূষণকে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে রেখে প্রতি বছর বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে। সেখানে বহু চিকিৎসক ও পরিবেশবিদ যান। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নানা পরামর্শ দেন তাঁরা। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার দাবি, বজবজের কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত এলাকাভিত্তিক দূষণ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
হুগলির ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ নিয়েও এলাকাবাসীর বিস্তর হইচইয়ের পরে, সেখানে ছাই ওড়া বন্ধে নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে জমানো ছাই গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সব ক্ষেত্রে ঠিকঠাক ঢাকা না দেওয়ার অভিযোগ এখনও রয়েছে। একই ধরনের অভিযোগ মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা এবং সাগরদিঘির বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই পরিবহণ নিয়েও। দূষণ সমস্যার মোকাবিলায় ওই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া এলাকায় গাছ লাগানোতে জোর দেওয়া হোক, দাবি এলাকাবাসীর। দু’টি দাবিকেই মান্যতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার কৌশিক দত্ত এবং ফরাক্কার জনসংযোগ আধিকারিক তাবিনা ওফাকিউ। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ছাই ও কয়লার গুঁড়ো ছড়ানোর অভিযোগে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে এলাকার জমিহারা কমিটি। সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই থেকে এলাকার কদমদা জোড়ের (ছোট নদী) জল-দূষণ হওয়ার অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে তাঁদের দাবি, প্রশাসনের তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দূষণের অভিযোগে স্থানীয় চাষিরা প্রায়ই আন্দোলনে নামেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নানা সময় সরব হয়েছে। গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিমাই মাজি বলেন, “তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ-সমস্যা নিয়ে বাম আমল থেকে লড়ছি। রাজ্যে দল ক্ষমতায় আসার পরে, সে লড়াই জোরদার হয়েছে। তবে সমস্যা এখনও মেটেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy