প্রায় তলানিতে এসে ঠেকা কুয়োর জল সংগ্রহ। পুরুলিয়ার মানবাজার-২ ব্লকের খাওয়াই গ্রামে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।
কোনও গ্রামের নাম কাটাচুয়া, কোনওটির বালিচুয়া। স্থানীয়দের কথায়, চুয়া মানে জানেন তো? কুয়ো। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ির এই নামগুলিই সম্ভবত এলাকার মূল সমস্যার দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে। জলসঙ্কট। যা তীব্র হয় গ্রীষ্মকালে। এই গরমের গা ঘেঁষেই এ বারে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগেই স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এই সঙ্কট মিটবে কী ভাবে?
ঝাড়গ্রাম তো বটেই, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়াও বাদ যায়নি এই সঙ্কট থেকে। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের কাড়রু গ্রামের বাসিন্দারা নলকূপের দাবিতে সম্প্রতি রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। প্রশাসন নলকূপ বসিয়েছে। বান্দোয়ান পঞ্চায়েতের কেন্দবনি ও রাহামদা গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, গরম পড়লেই নলকূপে নোংরা জল বেরোয়। এই জেলারই মানবাজার ২ ব্লকের ধান্দার বাসিন্দারা নলবাহিত জলের সংযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ধারা খুবই সরু। সম্প্রতি সেখানে বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন বিক্ষোভের মুখে পড়েন। অযোধ্যা পাহাড়তলির আড়শা ব্লকের কাঞ্চনপুরের বাসিন্দাদের দাবি, বছর দুয়েক আগে সংযোগ দেওয়ার পরে কিছু দিন জল মিলেছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে জল আসা বন্ধ।
পুরুলিয়া জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে অবশ্য খবর, ২০২০ সালে জেলায় জলস্বপ্ন (জলজীবন মিশন) প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। পাঞ্চেত জলাধার থেকে ১০৯৫টি মৌজায় এবং মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে ৫২৭টি মৌজায় নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে প্রশ্ন, এতেও সমস্যাটা মিটেছে কি?
বাঁকুড়ার রানিবাঁধের গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ শেষ। কিন্তু সেই অঞ্চলের ভগীরথ মাঝি, নবকুমার মাহাতোদের অভিযোগ, “গ্রামে জলস্তর মাটির অনেক নীচে। প্রশাসন এলাকায় পাইপলাইন বসানোর আশ্বাস দিলেও তা হয়নি।’’ রানিবাঁধেরই সিন্দুরপুর গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় দাস, পরিতোষ মাহাতোরা আবার জানান, তিন-চার বছর আগে গ্রামে লাইন বসে। কিন্তু নিকাশি নালা তৈরির সময় পাইপ নষ্ট হওয়ায় জল সরবরাহ হয়নি। বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, “পাইপ লাইন বসানো হলেও যে সব এলাকায় জল যাচ্ছে না, সেগুলি আমরা চিহ্নিত করেছি।’’
গ্রীষ্মে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকে সবচেয়ে পানীয় জলের সমস্যা হয়। পাথুরে এলাকায় ভূগর্ভস্থ জল সহজে পাওয়া যায় না। ব্লকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দু’টি জল প্রকল্প রয়েছে। তারাফেনি নদীর জল শোধন করে ৪২টি মৌজায় সরবরাহ করা হয়। শিলদায় পানীয় জলের দাবিতে কিছু দিন আগেই পঞ্চায়েত প্রধানকে ঘিরে বিক্ষোভ, পথ অবরোধও হয়েছে। গরমে জলস্তর নেমে গেলেএই এলাকায় পানীয় জলের গাড়ি পাঠাতে হয়।
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, গত এক দশকে জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলোয় পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা গিয়েছে। জল জীবন মিশনে গ্রামভিত্তিক জল প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি জলের ট্যাপ দেওয়ার কাজ চলছে। ঝাড়গ্রাম শহরে বছর সাতেক আগে যে নদী ভিত্তিক জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, তা এখনও শেষ হয়নি।
পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে মেদিনীপুরেও সম্প্রতি অবরোধ হয়েছিল। পরিস্রুত জল না মেলায় অনেক এলাকায় পুকুরের জল ব্যবহারের ফলে অসুখ হয়। তাতে মৃত্যুও ঘটে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ফি বছর গরমে কেশপুর, মেদিনীপুর সদর-সহ একাধিক ব্লকে জলকষ্ট দেখা দেয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গ্রীষ্মে জলস্তর নেমে যাওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। তবে দ্রুত পদক্ষেপও করা হয়।’’ কিছু এলাকায় গরমে যে জলের চাহিদা পূরণ করা কঠিন, তা তিনি মেনে নেন। জেলার বেশিরভাগ জনপদেই নলবাহী জল সরবরাহের সুবিধা নেই। জেলায় ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের কাজ চলছে। জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র বলেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।’’
প্রতিবেদক: প্রশান্ত পাল, কিংশুক গুপ্ত, বরুণ দে ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy