আইএসএফের বিধায়ক-নেতা নওশাদ সিদ্দিকী এবং কংগ্রেসের কৌঁসুলি-নেতা কৌস্তভ বাগচী। ফাইল চিত্র।
দু’জনেই দুই বিরোধী শিবিরের নেতা। তাঁদের মধ্যে এক জন বিধায়ক এবং অন্য জন আইনজীবী। দেড় মাসের মধ্যে আইএসএফের বিধায়ক-নেতা নওশাদ সিদ্দিকী এবং কংগ্রেসের কৌঁসুলি-নেতা কৌস্তভ বাগচীকে গ্রেফতার করে বিপাকে লালবাজার। এতটাই যে, কলকাতা পুলিশের অন্দরের একাংশে রীতিমতো ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। কারণ, ধৃতদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ জোগাড় করতে না-পারায় আদালতে পুলিশকে যে-ভাবে অপমানিত হতে হয়েছে এবং আখেরে দুই নেতাই যে-ভাবে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, তাতে পুরো বিষয়টিকে উর্দির অপমান হিসেবেই দেখছে তারা। প্রশ্ন উঠছে, ক্ষমতাসীনদের হুকুম তামিল করতে গিয়ে পুলিশবাহিনীর সম্মান এবং আমজনতার কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বার বার এ ভাবে জলাঞ্জলি দিতে হবে কেন?
বিশেষত পুলিশের নিচু তলায় এই ক্ষোভের কারণ, এই ধরনের কাজের জন্য বাহিনীকে তিরস্কৃত হতে হচ্ছে আদালতেও। নওশাদের বিরুদ্ধে গুরুতর ধারায় মামলা করেছে লালবাজার। কিন্তু গ্রেফতারের ৪০ দিন পরেও সেই অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ জোগাড় করতে পারেননি তদন্তকারীরা। তার জেরে কলকাতা হাই কোর্টে রীতিমতো ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে পুলিশকে। হাই কোর্ট এক বারে সব মামলা থেকেই নওশাদকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। নিঃশর্তে।
নওশাদের জামিনের নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফের কোর্টে বিপাকে পড়তে হয়েছে লালবাজারকে। ‘মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান’ করা হয়েছে, এই অভিযোগে ৩ মার্চ গভীর রাতে কৌস্তভের বাড়িতে হানা দেয় বড়তলা থানা। ৪ মার্চ ভোরে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। কিন্তু ব্যাঙ্কশাল আদালত সে-দিন বিকেলেই ওই নেতাকে জামিনে মুক্তি দেয়। কৌস্তভকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ ঠিক কী তদন্ত করবে, সরকারি কৌঁসুলি কোর্টে তার সদুত্তর দিতে পারেননি। শুধু কলকাতা পুলিশ নয়, রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধেও এই ধরনের অভিযোগ আছে। অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এক গুচ্ছ মামলা করলেও হাই কোর্টে সেগুলির তদন্ত নিয়ে কার্যত কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেনি রাজ্য পুলিশ।
পুলিশের একাংশই মেনে নিচ্ছেন, বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে বার বার মুখ পুড়ছে লালবাজারেরই। শাসক দলের ‘অনুগত’ হয়ে পুলিশ মিথ্যা মামলা সাজাচ্ছে বলে বিরোধী শিবির যে-অভিযোগ তুলছে, জনমানসে তা-ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে চলেছে বারংবার। এই পরিস্থিতিতে বাহিনীর নিচু তলায় প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে কি আদৌ উর্দির সম্মান রাখতে পারছে পুলিশ? কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারা এই প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি। নিরুত্তর রাজ্য পুলিশের কর্তারাও।
বস্তুত, কৌস্তভ কাণ্ডের পরে পুলিশের ভূমিকা বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মামলার ধরন যা, তাতে পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে নোটিস পাঠানোর নিয়মও পালন করেনি বলে অভিযোগ। পুলিশের অন্দরের খবর, নিচু তলার অফিসারেরা উপর মহলের নির্দেশ পালন করেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের পদক্ষেপের ফল যে বিরূপ হতে পারে, পুলিশকর্তারা কি তা জানতেন না? বাহিনীর একাংশের দাবি, উপর মহলের অযৌক্তিক নির্দেশ পালন করলে যে বাহিনীর মুখ পুড়বে, তা জেনেবুঝেই এই ধরনের কাজ করছেন নিচু তলার কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, এতে আখেরে সরকার এবং শাসক দলেরই ক্ষতি হচ্ছে।
পুলিশের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ধর্মতলায় গোলমালের পরে যে-ধরনের ধারা দিয়ে নওশাদকে মামলায় জড়িয়ে ৪০ দিন জেলবন্দি করে রাখা হয়েছিল, তা নিয়েও বাহিনীর অন্দরে চোরা ক্ষোভ ছিল। বহু পুলিশ অফিসার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, কোনও প্রমাণ ছাড়া এ ভাবে এক বিধায়ককে আটকে রাখা অন্যায়। কিন্তু উপর মহলের নির্দেশে সেই কাজ তাঁরা করতে বাধ্য।
এই ‘বাধ্যতা’র কারণেই সম্প্রতি ভিন্ রাজ্যেও কলকাতা পুলিশের মুখ পুড়েছে বলে খবর। ঝাড়খণ্ডের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের অভিযোগে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তও শুরু হয়েছে। বাহিনীর একাংশের কথায়, বছর কয়েক আগে এক পুলিশ কমিশনারের আমলে এই ধরনের কাজ করতে হয়েছিল বাহিনীকে। তাঁর উত্তরসূরিদের আমলে সেই রীতির বদল হলেও তা পুনরায় ফিরে এসেছে। বর্তমানে বাহিনীতে না-থাকা সত্ত্বেও সেই প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনেই বাহিনীকে কার্যত ‘জোর করে’ মামলা করতে হচ্ছে কি না, উঠছে সেই প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy