খানাকুলের বন্দিপুর এলাকায় জলমগ্ন চাষের জমি। বৃহস্পতিবার। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
গঙ্গা তাঁদের বাড়ি গিলেছে সোমবার রাতে। সেই থেকে খাতায়কলমে তাঁদের আশ্রয় ত্রাণ শিবিরে। খাতায়কলমে, কারণ তিন দিন পেরিয়েও সে শিবিরে ত্রাণের ছিটেফোঁটা পৌঁছয়নি বলেই অভিযোগ মুর্শিদাবাদ জেলার শমসেরগঞ্জের নতুন শিবপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। অবশ্য সে গ্রামও এখন আর নেই। ভাঙনে তা মানচিত্র থেকে কার্যত হারাতে বসেছে।
৫৩টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছিল নতুন শিবপুর। কিছুই নেই ভয়াল ভাঙনে। ভিটেহারা ৪৮টি পরিবারের ঠাঁই হয়েছে বাসুদেবপুর জুনিয়র বেসিক স্কুলে। সেখানেই বসে লতা মণ্ডল বৃহস্পতিবার ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘‘নামেই সরকারি ত্রাণ শিবির। কিন্তু, কোথায় ত্রাণ?’’ স্থানীয় প্রতাপগঞ্জ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মহম্মদ রফিক শেখও অসহায়। বলছেন, ‘‘যাঁরা ত্রাণ শিবিরে আছেন, ব্লক অফিস থেকে তাঁদের নাম লিখে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনও ত্রাণ আসেনি। কোথা থেকে দেব খাবার?’’
ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভের এই ছবিটা অন্যত্রও রয়েছে। হুগলির খানাকুল ২ ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত ছাড়া আরামবাগ মহকুমার সর্বত্রই বন্যার জল নেমে গিয়েছে। রেশন দোকান চালু হলেও সরকারি ত্রাণে চাল ও গোখাদ্যের দাবি উঠেছে। ত্রিপল চেয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই আছে। খানাকুল ২ এলাকায় ১৬টি ত্রাণ শিবিরে ৫৫০ জন দুর্গত আছেন। ১১টি পঞ্চায়েতে চালের বরাদ্দ মিলেছে ৫০০ কুইন্টাল। ত্রিপল দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার। জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি জানান, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ত্রিপল, চাল-সহ যাবতীয় ত্রাণ সামগ্রী দফায় দফায় পাঠানো চলছে।
বানভাসি ঘাটালের বিভিন্ন জায়গায় জ্বর-সর্দির প্রকোপ বাড়ছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ডায়রিয়া ও চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ ও পানীয় জলের পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য শিবিরের দাবিতে সরব হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ইতিমধ্যে ঘাটালে ‘দুয়ারে ডাক্তার’ পরিষেবা চালু করেছে প্রশাসন। তবে সব জায়গায় সেই সুবিধা মিলছে না বলেই অভিযোগ।
তবে, সব কিছুকে ছাপিয়ে বিপুল ক্ষতির মুখে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চাষবাস। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ধাক্কা এখনও সামলানো যায়নি। তারই মধ্যে অতিবৃষ্টি ও তার জেরে বন্যা পরিস্থিতিতে পশ্চিম মেদিনীপুরেই প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি প্রায় ৪৭৫ কোটি টাকার। জমি থেকে জল নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। একই হাল ‘শস্যগোলা’ পূর্ব বর্ধমানে। সেখানে ১২টি ব্লকের ৩৪৫টি মৌজায় আমন ধান চাষ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি জেলা কৃষি দফতরের। বৃহস্পতিবার আউশগ্রাম ১ ব্লকের দু’টি মৌজার চাষিরা ব্লক কৃষি দফতরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, যথেষ্ট ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মৌজার নাম তালিকায় রাখা হয়নি। নদিয়ার দক্ষিণাঞ্চল জুড়েও জল জমে বেসামাল চাষাবাদ। বিশেষ করে আনাজের। ফের যদি বৃষ্টি হয়, তাতে পাট পচানো ছাড়া বাকি সব ধরনের চাষেরই সমস্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা।
ক্ষতিপূরণের কী হবে? এক কৃষি আধিকারিক বলেন, ‘‘অনেকেরই শস্যবিমা করা রয়েছে। তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। ক্ষয়ক্ষতির বিশদ তালিকা করে রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে। সরকার যেমন ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করবে, সেই মতো দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy