হাতুড়ে চিকিৎসকদের জমায়েত। সোমবার, শহরে। — নিজস্ব চিত্র
তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও কেন সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে কলকাতায় জড়ো হলেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েক হাজার হাতুড়ে ডাক্তার। তাঁদের প্রশ্ন, গ্রামগঞ্জে বহু মানুষকে চিকিৎসার মূল পরিষেবা দেন তাঁরাই। তার পরেও তাঁদের মূল স্রোতে আনার ক্ষেত্রে সরকারের এমন টালবাহানা কেন?
সরকারি তরফে হাজার চেষ্টাতেও গ্রামে ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানো যায়নি। তাই বাধ্য হয়েই জেলায় হাতুড়ে চিকিৎসকদের অস্তিত্ব মেনে নেয় স্বাস্থ্য দফতর। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সেই নীতিতে এখনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। ফলে বহু ক্ষেত্রে তাঁরা কাজটা করেন কিছুটা লুকিয়েচুরিয়ে। রাজ্য সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেয়, দফায় দফায় বিভিন্ন জেলায় হাতুড়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে রাজ্যে এমন প্রায় দু’লক্ষ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা জানানো হয়। যদিও এখনও তার প্রাথমিক কাজই শুরু হয়নি।
এ দিন ধর্মতলায় ওই জমায়েতের ডাক দেয় হাতুড়ে ডাক্তারদের সংগঠন ‘পল্লি চিকিৎসক সংযুক্ত সংগ্রাম কমিটি’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুশল দেবনাথ বলেন, ‘‘বহু বছর ধরে এই দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আমরা একাধিক চিঠি দিয়েছি। আমাদের প্রশ্ন, সরকারি সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে তার প্রয়োগ হচ্ছে না কেন? আমাদের প্রশিক্ষণ দিলে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ছবিটা পুরোপুরি বদলে যাবে। সরকারি হাসপাতালের চাপ কমবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, যেখানে ডাক্তারের খুবই অভাব, সেখানেও প্রশিক্ষিতদের কাজে লাগানো যাবে।’’
জমায়েতে আহ্বায়ক সংগঠনের সদস্যরা একযোগে জানান, পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যের ৩৮ হাজার গ্রামে তাঁদের সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ। অন্য দিকে, রাজ্যে নথিভুক্ত চিকিত্সক ৪০ হাজার। ফলে চিকিৎসকের ঘাটতি কতটা প্রবল, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তার পরেও সরকারের এমন টালবাহানা কেন?
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। কাউন্সিল-কর্তারা জানান, পাঠ্যক্রম তৈরি হচ্ছে। মাস কয়েকের মধ্যেই প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যাবে। হাতুড়েদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সরকার সহানুভূতিশীল বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
হাতুড়ে ডাক্তারদের দাবিদাওয়া নিয়ে এ দিন বৈঠক হয় স্বাস্থ্য ভবনেও। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, দেশে পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম হাতুড়ে ডাক্তারদের সরকারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ এ বিষয়ে কিছু দূর এগোলেও শেষ পর্যন্ত কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ফলে প্রকল্পটি মাঝপথে মুখ থুবড়ে পড়ে। এ রাজ্যেও পরিকল্পনা চূড়ান্ত হতে না হতেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এর একটি শাখা ইতিমধ্যেই এর বিরুদ্ধে পথে নেমেছে। সংগঠনের তরফে রামদয়াল দুবে বলেন, ‘‘চিকিৎসা পেশাটার কাছেই মূর্তিমান বিপদ এই হাতুড়ে ডাক্তাররা। যে ভাবেই হোক, এঁদের মূল স্রোতে আনার চেষ্টা ঠেকাতে হবে। কারণ এর সঙ্গে সাধারণ গরিব মানুষের বাঁচা-মরার প্রশ্ন জড়িত।’’
যদিও গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় হাতুড়েদের সরাসরি কাজে লাগানোর উদ্যোগ নতুন নয়। স্বাস্থ্য দফতরের টাকায় বীরভূমের গ্রামে হাতুড়ে ডাক্তারদের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছিল একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লিভার ফাউন্ডেশন’। আর প্রশিক্ষণ পেয়ে আদৌ কতটা লাভ হচ্ছে, তা নির্ণয়ের কাজে হাত দেয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ‘লিভার ফাউন্ডেশন’-এর সেই প্রকল্পের সূত্র ধরেই রাজ্যে এই নয়া পরিকল্পনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy