পথ আটকে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির সামনে বিক্ষোভ বাম সমর্থকদের। —নিজস্ব চিত্র।
দাবি ছিল, বিধাননগর, আসানসোল ও বালির পুরভোট পুরোপুরি বাতিল করে নতুন নির্বাচন করাতে হবে। কিন্তু অস্থায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশনার আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলেন, বিধাননগরের ৯টি ও আসানসোলের দু’টি মাত্র বুথে পুনর্নির্বাচন হবে আজ, শুক্রবার। তিন বিরোধী পক্ষ বামফ্রন্ট, বিজেপি এবং কংগ্রেসও পত্রপাঠ জানিয়ে দিল, এই প্রহসনের পুনর্নির্বাচন তারা বয়কট করছে। মূল তিনটি বিরোধী দলই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, এমন ঘটনা সাম্প্রতিক কালে নজিরবিহীন!
শুধু ভোট বয়কট করাই নয়। অস্থায়ী কমিশনার আলাপনবাবুর উপরে চাপ বাড়াতে আরও এক ধাপ এগিয়েছে বামেরা। দু’বার চেষ্টা করেও বামেরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সম্মতি পায়নি। কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে তৃণমূল এ দিন ধর্না তুলে নেওয়ার পরেই মাত্র ১১টি বুথে পুনর্নিবার্চনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে সন্ধ্যায় অসীম দাশগুপ্ত, রমলা চক্রবর্তী-সহ বিধাননগরের অধিকাংশ প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে আলাপনবাবুর দফতরে চলে যান সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। বাইরে যখন বামেদের প্রবল বিক্ষোভ, ভিতরে আলাপনবাবুর সঙ্গে কথা বলতে যান গৌতমবাবুরা। তাতে অবশ্য কমিশনের সিদ্ধান্তের নড়চড় হয়নি। তখন আলাপনবাবুর বেরনোর পথ আটকে বিক্ষোভ শুরু করে বামেরা। মিনিটদশেক বিক্ষোভ অবরুদ্ধ হয়ে থাকে আলাপনবাবুর গাড়ি। পুলিশ তাঁকে বার করতে হিমশিম খায়। গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ চালাতে থাকেন বাম প্রার্থী-কর্মীরা। পুলিশই শেষমেশ নেপালদেব ভট্টাচার্য, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, স্বপন বসুর মতো বাম নেতাদের হঠিয়ে কমিশনারকে বার করে দেয়।
বস্তুত, এ দিনের ঘটনাপ্রবাহের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিযুক্ত অস্থায়ী নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সরাসরিই সংঘাত শুরু হয়ে গেল বিরোধীদের। তাঁর ভূমিকা নিয়ে এক দিকে যেমন প্রকাশ্যেই তোপ দেগেছেন বিজেপি ও কংগ্রেস নেতারা, তেমনই রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বামেরা। দায়িত্ব নিয়ে বুধবার আলাপনবাবু বলেছিলেন, বুথে ওয়েব ক্যাম বা ভিডিও ক্যামেরার ফুটেজ দেখতেই হবে, তার কোনও মানে নেই। তা ছাড়া, দু’হাজার ঘণ্টার ফুটেজ দেখতেও সময় লাগে! অথচ এক দিনের মধ্যেই তিনি কী করে ফুটেজ-সহ সব তথ্য দেখে মাত্র ১১টি বুথে পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা করলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী নেতারা। ভোটের নামে প্রহসন এবং তার পরে প্রিসাইডিং অফিসারদের ডায়েরি, রিপোর্ট শাসক দলের নেতাদের হাতে চলে যাওয়া নিয়েই এ দিন আলাপনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন রাজ্য বামফ্রন্টের নেতারা। কিন্তু তিনি সময় না দেওয়ায় সন্ধ্যায় রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কাছে গিয়ে অভিযোগ জানান তাঁরা। রাজভবন থেকে বেরিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, ‘‘অস্থায়ী কমিশনার বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি তৃণমূলের মুখপাত্র হিসাবে কাজ করতে এসেছেন! রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি, আইনের শাসন বাঁচাতে আপনি হস্তক্ষেপ করুন।’’
তাঁরা যে পুনর্নির্বাচন বয়কট করছেন, রাজ্যপালকেই তা জানিয়ে এসেছেন রবীনবাবুরা। আর কমিশনে গিয়ে বাম প্রার্থী অসীমবাবু বলেছেন, ‘‘বিধাননগরে ভোট লুঠ হয়েছে। সেখানে ৪১টি ওয়ার্ডে গড়ে ১০টি বুথে নতুন করে ভোট হলেও তো ৪১০টা বুথ হয়! কমিশন কী ভাবে ৯টি বুথে পুনর্নির্বাচনের আদেশ দিল? আমাদের এবং বিধাননগরের মানুষের কাছেও এই সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়!’’ একই সুরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁরাও আজ পুনর্নির্বাচন বয়কট করছেন। বিজেপি সেই সঙ্গে শনিবারের গণনাও বয়কট করছে। রাহুলবাবুর কটাক্ষ, ‘‘কষ্ট করে ওই ক’টা বুথে পুনর্নির্বাচন করে কী হবে? গণনারই বা দরকার কী? এমনিই বরং কমিশন তৃণমূলকে জয়ের শংসাপত্র দিয়ে দিক!’’ অস্থায়ী কমিশনারকে ‘তৃণমূলের নতুন দালাল’ বলেও কটাক্ষ করেছেন রাহুলবাবু। আর কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মানস ভুঁইয়া বলেছেন, ‘‘তিনটি বিরোধী দলই ভোট বয়কট করছে, স্বাধীনতার পরে বাংলায় এমন ঘটনা ঘটেনি। কমিশনের গালে সজোর থাপ্পড় পড়ল! সজ্জন মানুষ হয়েও আলাপনবাবু এই সরকারের অন্যায়ে জড়িয়ে পড়লেন!’’
পুর-নিগমের ভোটে সন্ত্রাস ও ভোট লুঠ থেকে শুরু করে কৃষক আত্মহত্যা, রাজ্যের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার অবনতি-সহ নানা প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চেয়ে রবিবার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা মিছিলও করবে বিজেপি। সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যে দলের সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ প্রমুখের থাকার কথা। রাহুলবাবুর বক্তব্য, ‘‘জয়প্রকাশ নারায়ণ গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য স্বৈরাচারী ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে স্বৈরাচারী মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে জয়প্রকাশের জন্মদিন থেকে আন্দোলন শুরু করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy