রামসাই (বাঁ দিকে) ও জলদাপাডায় (ডান দিকে) পর্যটকদের হাতি সাফারি। ফাইল চিত্র।
কোথাও মাহুতের ইশারায় পর্যটকদের শুঁড় উচিয়ে ‘স্যালুট’ জানায় কিরণরাজ, মতিরানি, কাবেরী, তিস্তারা। কোথাও আবার গভীর জঙ্গলে গন্ডার কিংবা বাইসন দেখেও থমকে না গিয়ে অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে যায় লক্ষ্মী, উর্বশী, মধুমালারা।
ফি বছর ওই হাতিদের পিঠে চড়ে জঙ্গল দেখার টানে উত্তরবঙ্গে ভিড় জমান পর্যটকেরা। পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠনের অভিযোগ, অথচ পর্যটকদের সত্তর শতাংশই হাতি সাফারির সুযোগ না পেয়ে আক্ষেপ নিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। তার পরেও হাতি সাফারির সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে না। এমনকী, চালুর পরেও ডুয়ার্সের কুঞ্জনগরে হাতির ‘জয় রাইডিং’ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই ঘটনায় গরমের ছুটির মরসুমে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। হাতি সাফারির সুযোগ কেন বাড়ানো হচ্ছে না সে প্রশ্নও উঠেছে।
বন দফতর ও পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের জলদাপাড়া ও গরুমারা জঙ্গলকে কেন্দ্র করে মূলত হাতি সাফারির ওই সুযোগ রয়েছে। জলদাপাড়ার হলং ও বড়ডাবরি এলাকায় সাফারির সুযোগ রয়েছে। হলংয়ে বন দফতরের বাংলোয় রাত্রিবাস করছেন এমন পর্যটকরা সেখানে হাতি সাফারিতে অগ্রাধিকার পান। বেসরকারি ট্যুরিস্ট লজ কিংবা সাধারণ পর্যটকদের একাংশও ওই সুযোগ পান। মাথাপিছু খরচ পড়ে ৬০০ টাকা। ভোরবেলায় গড়ে চারটি কুনকি হাতিতে তিন দফায় পালা করে বড়জোর ৪৮ জন ওই সুযোগ পান।
অন্য দিকে গরুমারা জঙ্গলকে কেন্দ্র করে হাতি সাফারির সুযোগ রয়েছে কালীপুর, ধূপঝোরা ও রামসাই এলাকায়। বন দফতরের বাংলোয় রাত্রিবাসের প্যাকেজে থাকা পর্যটকদেরই অবশ্য সেখানে হাতি সাফারি করান হয়। দৈনিক মাথাপিছু প্যাকেজ খরচ প্রায় ২ হাজার টাকা। দিনে ভ্রমণকারী, বেসরকারি বাংলোয় রাত্রিবাস করছেন এমন পর্যটকদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি হলেও তাঁরা সেই সুযোগ পান না। গরমের ছুটির মরসুমে ইতিমধ্যে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। অনেকেই হাতির পিঠে বেড়ানোর সুযোগ না পেয়ে আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। কলকাতার বেহালার বাসিন্দা মিহিরেন্দু ঘোষ বলেন, “পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে ডুয়ার্সে এসেছি। বেসরকারি হোটেলে থাকায় গরুমারায় হাতির পিঠে বেড়ানোর সুযোগ পেলাম না। বৈষম্য না রেখে সব পর্যটকদের ওই সুযোগ দেওয়া দরকার।”
ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট স্যানাল বলেন, “ফি বছর উত্তরবঙ্গে ৫০ হাজারের বেশি পর্যটক আসেন। তাঁদের মধ্যে খুব বেশি হলে তিরিশ শতাংশ হাতি সাফারির সুযোগ পান। এখন ডুয়ার্সে যা চাহিদা রয়েছে তাতেও ওই এক ঘটনা হচ্ছে। অথচ পর্যটকদের ওই আক্ষেপ ঘোচানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে না। অথচ হাতির পিঠে চড়ার অভিজ্ঞতার আকর্ষণ কম নয়। জঙ্গলের কোর এলাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ওই সুযোগ ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।”
ময়নাগুড়ি এলাকার এক পর্যটন ব্যবসায়ী উজ্জ্বল শীল বলেন, “গরুমারা কেন্দ্রিক তিনটি এলাকায় শুধু বন দফতরের বাংলোয় রাত্রিবাসের সুযোগ থাকলে হাতি সাফারির সুযোগ মিলছে। অথচ অনেক বেশি পর্যটক বাইরে থাকেন। বিদেশিদের থেকে প্রবেশ মূল্য বেশি নেওয়া হলেও তাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন না।” এই পরিস্থিতিতে পর্যটক চাহিদা মাথায় রেখে উত্তরবঙ্গে হাতি সাফারির সুযোগ বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বনমন্ত্রী।
কবে ওই সুযোগ মিলবে তা অবশ্য স্পষ্ট হয়নি তাঁর বক্তব্যেও। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “বনাঞ্চল পাহারায় কাজেই মূলত কুনকি হাতিদের কাজে লাগান হয়। ওই কুনকিদের সংখ্যাও যথেষ্ট নয়। তার ওপর সেগুলির মধ্যে বেশ কিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাই চাহিদার কথা জানলেও ইচ্ছে করলেই হাতি সাফারির সুযোগ বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে এটাও ঠিক আমরা কিছু নতুন এলাকায় ওই সুযোগ চালুর ব্যাপারে পরিকল্পনা নিয়েছি। তাতে একটু সময় লাগবে।”
বনমন্ত্রী জানান, মূর্তি, চাপড়ামারি, খয়েরবাড়ি, পাতলাখাওয়া, রসিকবিল এলাকা তালিকায় আছে। উত্তরবঙ্গের বনপাল (বন্যপ্রাণ) তাপস দাস বলেন, “রিসর্ট, ট্যুরিস্ট বেড়েছে, কিন্তু কুনকি হাতির সংখ্যা সীমিত। উত্তরবঙ্গের মোট কুনকির অর্ধেক অপ্রাপ্তবয়স্কও।”
বন দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে মোট ৮০টি কুনকি হাতি রয়েছে। তার মধ্যে ৪০টিই অপ্রাপ্তবয়স্ক। কিরণরাজ, মোতিরানি, কাবেরী, তিস্তারা গরুমারার কুনকি হাতি। লক্ষ্মী, উর্বশী, মধুমালারা জলদাপাড়ার। সৌজন্য ও সাহসের জন্য সাফারির কাজে ও রকম কিছু কুনকির চাহিদা বেশি। কোচবিহারের ডিএফও ভাস্কর জেভি বলেন, “কুঞ্জনগরে রাইডিং দ্রুত চালুর চেষ্টা হচ্ছে।” গরুমারার ডিএফও সুমিতা ঘটক বলেন, “পর্যাপ্ত কুনকি হাতি নেই বলে ওই সমস্যা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy