মুক্তি কখন? অপেক্ষায় অবরুদ্ধ শহর। সোমবার, মধ্য কলকাতায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কাজের দিনে হৃদ্রোগে আক্রান্ত মহানগরী! শরীরের প্রধান ধমনী-শিরার অনেকগুলিই আক্রান্ত। সৌজন্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিল। কলকাতা পুলিশ অবশ্য এ দিন বাইপাস সার্জারির মতো করে অলিগলি দিয়ে যানবাহন চালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি বললেই চলে। এর জেরে ভরদুপুরে পথে বেরোনো নাগরিকেরা নাকাল হয়েছেন।
পুলিশের অনেকেই বলছেন, এমন রোগ নতুন নয় বরং শুরু হল বলা চলে। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দলের শিল্পী-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের নির্দেশ দেন আগামিকাল, বুধবার ফের রাজপথে মিছিল করতে। আগামী সোমবারও মুখ্যমন্ত্রীর একটি মিছিলের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই দিনগুলিতেও পুলিশকে ফের ‘বাইপাস সার্জারির’ পরীক্ষা দিতে হবে বলেই একাংশের ধারণা।
পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে মমতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কাজের দিনে মহানগরে মিছিল-সমাবেশ বন্ধ করবেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, শাসক দলই সেই রীতি বার বার ভেঙেছে। রাজ্যে বিরোধীর ভূমিকায় থাকার সময়ে মমতা বারবার কাজের দিনে মিছিল করেছেন। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেও তিনি সেই একই কাজ করলেন। অবশ্য এ জন্য এ দিন তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমাও চেয়ে নেন। পাশাপাশি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে প্রয়োজন হলে ফের এ পথেই হাঁটবেন তাঁরা। মিছিলের পরে বিরোধী দলগুলির অনেক নেতা বলছেন, “নিজের প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘোষণাই ভাঙলেন।”
কী ছিল এ দিনের অবস্থা? দুপুর থেকেই কলেজ স্কোয়ারের সামনে মঞ্চে জমায়েত হতে শুরু করেছিলেন শাসক দলের নেতারা। তখন যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করলেও পুলিশ ওই এলাকা পুরোপুরি বন্ধ করেনি। বেলা একটা নাগাদ মঞ্চ থেকে এক পুলিশকর্তাকে হাতের ইশারায় ডাকেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। তিনি যানবাহন চলা নিয়ে কিছু বলেন পুলিশকে। তার পরেই ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে পুলিশ।
এর পরে বেলা যত গড়িয়েছে ততই যানজট বেড়েছে উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। এক দিকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অন্য দিকে এপিসি রোড। শিয়ালদহ থেকে বড়বাজার সর্বত্র যানজট। কলেজ স্ট্রিট অবরুদ্ধ থাকায় যানজট হয়েছে উত্তর কলকাতার একাংশেও। বেলা দু’টো নাগাদ শিয়ালদহ উড়ালপুলের প্রায় পুরোটাই যানজটে অবরুদ্ধ ছিল। প্রথমে ঠিক ছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে ওয়েলিংটন হয়ে ধর্মতলায় পৌঁছবে মিছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ওয়েলিংটনে হকারদের একটি মিছিল থাকায় শাসক দলের মিছিলকে সূর্য সেন স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে ধর্মতলায় পাঠানো হয়।
শুধু রাস্তায় গাড়ি নয়, মিছিলের ভিড় ও উৎসাহী জনতার ভিড়ে এ দিন বহু জায়গায় ফুটপাথও আটকে গিয়েছিল। বেলা তিনটে নাগাদ সূর্য সেন স্ট্রিট দিয়ে এসে মিছিল পড়েছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর বৃত্তে ঢুকলেন অভিনেতা দেব। ব্যস! তাঁকে দেখতে মিছিল ছেড়ে ফুটপাথে উঠে পড়লেন বহু সমাবেশকারী। অনেকেই মোবাইল বাগিয়ে ছবিও তুলতে লাগলেন। ফুটপাথে তখন পা ফেলার জো নেই!
নেতা-অভিনেতাদের উৎসাহ যেমন ছিল, তেমনই ছিল মিছিল ঘিরে নাকাল হওয়ার চিত্র। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে মেডিক্যালে এসেছিলেন হাওড়া কদমতলার বাসিন্দা সুপ্রতিম তরফদার। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাওড়ার বাস পাননি। হেঁটেই বড়বাজারে যেতে হয় তাঁদের। নাকাল হয়েছে স্কুল ফেরত পড়ুয়ারাও। দু’টো নাগাদ বৌবাজারে ঠায় দাঁড়িয়েছিল একটি স্কুলবাস। ভিতরে খুদে পড়ুয়ারা। কেউ কেউ ভিড় দেখে জানলা দিয়ে মুখ বের করে পথচলতি ‘কাকু’দের সঙ্গে কথাও বলেছে।
কাজের দিনে এমন নাকাল হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ নাগরিকদের একটা বড় অংশ। বেলা আড়াইটে নাগাদ কলেজ স্ট্রিট ও সূর্য সেন স্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলা। কিন্তু ভিড়ের দাপটে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলেন না। পাশের এক পরিচিত যুবককে প্রশ্ন করলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এমন মিছিল করছেন। বিরোধীরা করলে তখন উনি জনস্বার্থের কথা বলেন।” স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অভিনেতার ছবি তুলতে গিয়ে তাঁকে ধাক্কা মেরে প্রায় ফেলেই দিচ্ছিলেন কয়েক জন মিছিলকারী। প্রতিবাদ করায় ওই ব্যক্তির কপালে জুটল গালাগাল!
সভা শেষে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন মঞ্চ থেকেই বলেন, ‘‘আমি বলেই দিয়েছিলাম কাজের দিনে মিটিং-মিছিল করব না, কিন্তু আজ বাধ্য হয়েছি বলেই করছি। বাধ্য হলে আবারও করব।”
তবে এমন মিছিল নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট পুলিশের একাংশ। মিছিলের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ অফিসারের মন্তব্য, “প্রতারণার মামলায় অভিযুক্তদের ধরলে মুখ্যমন্ত্রী মিছিল করছেন। পুলিশ হয়ে এটাও দেখতে হবে!” ওই পুলিশ অফিসার তখনও জানতেন না, তাঁর মন্তব্যের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফের এমন মিছিলের নির্দেশ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy