Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
RG Kar Medical College Hospital Incident

কোথায় অচল, কোথাও সচল! আরজি কর-কাণ্ডের দু’দিন পরেও প্রভাব সরকারি হাসপাতালের পরিষেবায়

শনিবারের মতো রবিবারও বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তবে জরুরি পরিষেবা মিলছে। রবিবার ছুটির দিন বলে এমনিতেই হাসপাতালের বহির্বিভাগ বা আউটডোর বন্ধ।

Burdwan Medical College

রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৪ ১৫:৪১
Share: Save:

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের পর দু’দিন কেটে গিয়েছে। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে জেরা করে একের পর এক তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। তার মধ্যে রবিবারই আরজি করের সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠকে সরানো হয়েছে। ওই পদে বুলবুল মুখোপাধ্যায়কে এনেছে স্বাস্থ্য দফতর। অন্য দিকে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রবিবারও কর্মবিরতি পালন করছেন। আরজি কর তো বটেই, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কর্মবিরতি চলছে। কোথাও কোথাও পরিষেবা খানিক স্বাভাবিক হলেও তা বিক্ষোভ, আন্দোলনের আঁচ রয়েছে রবিবারেও।

শনিবারের মতো রবিবারও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তবে জরুরি পরিষেবা চলছে। রবিবার ছুটির দিন বলে এমনিতেই হাসপাতালের বহির্বিভাগ বা আউটডোর বন্ধ। সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনে রোগীদের চাপ বাড়বে বলে ধরে নেওয়াই যায়। যদিও পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ওই দিনও। বর্ধমান জেলা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্যতম ভরসার জায়গা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পিজিটি থেকে জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘‘আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য মূল দোষীকে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক এবং কঠোর শান্তি দিতে হবে।’’ তাঁদের বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের কোথাও যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে।’’ পাশাপাশি, রাজ্যের প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবিতে অটল রয়েছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের কথায়, ‘‘গোটা রাজ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও কর্মবিরতি চলবে। তবে জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হবে না।’’ তাঁরা জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সদর্থক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, ‘মূল ইস্যু’র সমাধান না-হওয়া অবধি আন্দোলন চলবে। সোমবার পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাক্তার তাপস ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সব পরিষেবাই স্বাভাবিক। ওয়ার্ডে রাউন্ড থেকে চিকিৎসা সব চলছে। আজ আউটডোর (বহির্বিভাগ) বন্ধ। ইন্ডোরে সব পরিষেবা চলছে।’’

আরজি কর-কাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত বীরভূমের রামপুরহাট সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। শনিবার আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে সরকারি হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ওই দাবিতে শনিবারও মিছিল করেছিলেন তাঁরা। হাসপাতালের মূল প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হলেও জরুরি বিভাগের প্রবেশপথ খোলা। সেখান দিয়েই যাতায়াত করতে হয়েছে সমস্ত রোগী এবং রোগী পরিবারকে। জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানান, আরজি করে মহিলা চিকিৎসক খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হলে তবেই আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন তাঁরা।

একই ছবি দেখা গিয়েছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজেও। রবিবারও সেখানে কর্মবিরতি চলছে। জরুরি পরিষেবা বাদ দিয়ে ইন্ডোর পরিষেবায় যুক্ত হননি হাসপাতালে কর্মরত কোনও ইন্টার্ন, কর্মী এবং পিজিটি চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার সিংহভাগই জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটেছে। হাসপাতালের মূল ভবনের সামনে মঞ্চ তৈরি করে শনিবার রাতভর জুনিয়র চিকিৎসকেরা অবস্থান বিক্ষোভের পর রবিবার সকাল থেকে আবার আন্দোলন জোরদার করেছেন। এ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের সুপার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আন্দোলনকারীরা আরজি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ‘অন ডিউটি রেসিডেন্স রুম’, সিসি ক্যামেরার সংখ্যাবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবি রেখেছেন। আমরা ইতিমধ্যে হাসপাতাল চত্বরে সিসি ক্যামেরার সংখ্যাবৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে হাসপাতাল চত্বরে বেশ কিছু আলোকস্তম্ভ বসানোর পরিকল্পনা করেছি। নিরাপত্তাতেও জোর দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি স্বীকার করে নেন, ‘‘এত সংখ্যক জুনিয়র চিকিৎসক একসঙ্গে কর্মবিরতি শুরু করায় পরিষেবায় স্বাভাবিক কারণেই প্রভাব পড়েছে। তার পরেও সিনিয়র চিকিৎসকেরা যতটা সম্ভব পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’’

তবে শনিবার বিক্ষোভের পর পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে হুগলি ইমামবাড়া জেলা হাসপাতাল এবং আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে। তবে বিকেল ৫টায় হাওড়া এবং হুগলি জেলার সরকারি চিকিৎসকেরা মিলিত ভাবে একটি শান্তিপূর্ণ অরাজনৈতিক মিছিলের আয়োজন করেছেন। রাজনৈতিক দল, পেশা, ধর্মনির্বিশেষে সকলকে ওই মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। উত্তরপাড়ার শখেরবাজারে মহামায়া হাসপাতালের সামনে থেকে ওই পদযাত্রা শুরু হবে। পদযাত্রাটি জিটি রোড ধরে এগিয়ে যাবে। শেষ হবে বালি শ্রীকৃষ্ণ সিনেমার সামনে। ভদ্রেশ্বরের বাবুবাজার থেকে চন্দননগর স্ট্যান্ড পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করবেন যুবকেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়-সহ অন্যান্য হাসপাতালেও পরিষেবা সচল রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Students junior doctors Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy