রতন টাটা। —ফাইল চিত্র।
রতন টাটার মৃত্যুতে যেন একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। টাটাদের একদা ‘ঘনিষ্ঠ’ শাপুরজি পালনজি (এসপি) গোষ্ঠীর সঙ্গে এ বার সম্পর্ক ফের স্বাভাবিক হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ, বৃহস্পতিবার দুপুরেই এসপি-র কর্ণধার শাপুর মিস্ত্রি এক শোকবার্তায় বলেছেন, ‘‘রতন টাটার আকস্মিক এই মৃত্যু একটি যুগের অবসান। টাটা গোষ্ঠীকে এক অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পিছনে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর পরিবারের সদস্য, গুণগ্রাহী এবং টাটা গোষ্ঠীর সব কর্মীকে সমবেদনা জানাই। টাটার আত্মার শান্তি কামনা করি।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শাপুরজি গোষ্ঠীর তরফে এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ২০১৬-এ টাটা সন্সের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাইরাস মিস্ত্রির অপসারণের পরে তাকে ঘিরে ইতিহাসের অন্যতম তিক্ত এবং দীর্ঘ কর্পোরেট লড়াই দেখেছিল গোটা দেশ। তর্কে-বিতর্কে মামলা-মোকদ্দমায় দু’পক্ষের সম্পর্ক শীতল থেকে শীতলতর হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে পালনজি মিস্ত্রি এবং সেপ্টেম্বরে পথ দুর্ঘটনায় সাইরাসের মৃত্যুর পরে টাটা সন্সের পক্ষ থেকে শোকবার্তা প্রকাশ করা হলেও, রতন টাটা নীরব ছিলেন। অথচ ২০১১ সালে এই সাইরাসকে টাটা সন্সে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি নিজেই। তবে পরিচালনায় নজরদারি করতে টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের পদ নিজের হাতে রেখেছিলেন। এ দিন টাটার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা শাপুর মিস্ত্রি শাপুরজি পালনজি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান। পালনজি মিস্ত্রির বড় ছেলে এবং সাইরাসের দাদা। তাঁর দিদি আলু মিস্ত্রির সঙ্গেই বিয়ে হয়েছে রতন টাটার সৎ ভাই নোয়েল টাটার।
টাটা সন্সের ১৮.৩ শতাংশের অংশীদারি এখনও শাপুরজি পালনজিদের হাতে। টাটাদের পরে তারাই দ্বিতীয় বৃহৎ অংশীদার। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, রতন টাটার মৃত্যুতে শাপুরজিদের তরফে শোকবার্তার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ টাটা ও শাপুরজি গোষ্ঠীর মধ্যে চূড়ান্ত মতবিরোধ, এমনকি আইনি লড়াই যে দুই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে, সেই দু’জনই, রতন টাটা এবং সাইরাস মিস্ত্রি আজ প্রয়াত। ১৯৯১-এ টাটা গোষ্ঠীর দায়িত্ব রতন টাটা হাতে নেওয়ার সময় তাঁর সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন পালনজি। তাঁর জামাই নোয়েল কিংবা আলু-নোয়েলের তিন ছেলেমেয়ের কেউ রতন টাটার উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব হাতে নেবেন বলেই বিভিন্ন সূত্রে দাবি। তাই সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এ বার টাটা গোষ্ঠীতে শাপুরজিদের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়তে পারে। বৃত্তও সম্পূর্ণ হতে পারে এ বারে।
তবে শুধু শাপুরজি গোষ্ঠী নয়, দেশের তাবড় শিল্পপতি এবং বণিকসভার সকলেই রতন টাটার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গুগ্লের সিইও সুন্দর পিচাই বলেন, “রতন টাটার সঙ্গে আমার শেষ বৈঠক স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শিল্প ক্ষেত্রে ভারতের সামগ্রিক উন্নয়ন কী করে হবে, তা তাঁর কথায় সব সময় প্রকাশ পেত।” টিভিএস-এর কর্ণধার বেণু শ্রীনিবাসন বলেন, “দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নকেও তিনি সমান গুরুত্ব এবং সময় দিয়েছিলেন।” অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীর কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়া বলেছেন, “ভারতকে বিশ্বের দরবারে বার বার চিনিয়ে দেওয়ার জন্যই রতন টাটা সকলের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।” বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বারের সভাপতি অর্ণব বসুর কথায়, “সমাজকে কী ভাবে উপকার ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ রতন টাটা।” প্যাটন গোষ্ঠীর কর্ণধার সঞ্জয় বুধিয়ার কথায়, “কোনও দিনই তাঁকে বিদায় জানানো সম্ভব নয়। কারণ, তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে থেকে যাবেন।”
বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের সভাপতি অমিত সারোগির বার্তা, “টেট্লি, কোরাস, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের মতো বিদেশি সংস্থা অধিগ্রহণ করে বিশ্বের দরবারেও নিজের সংস্থাগুলিকে প্রথম সারিতে বসিয়েছেন তিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy