সকাল থেকে শুরু হওয়া সৌজন্য পর্ব আচমকাই বদলে গেল অনুযোগ, পাল্টা অনুযোগে। ফাইল চিত্র।
নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে চায়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন যিনি, মমতার কথায় তাঁকে তিনি ‘ভাইয়ের মতো স্নেহ’ করতেন, সেই শুভেন্দু অধিকারীও সাড়া দিয়েছিলেন ডাকে। চা খাননি, সে কথা আলাদা— তবে ভিতরে বেশ কয়েক মিনিট ছিলেন তিনি। মমতার সৌজন্যের পাল্টা সৌজন্য দেখিয়ে ভিতরে কী কথা হল তা প্রকাশও করেননি বাইরে। কিন্তু মমতা-শুভেন্দু তথা ‘প্রাক্তন’ দিদি এবং ভাইয়ের সেই বিধানসভা-‘সৌজন্য’ খুব বেশি ক্ষণ স্থায়ী হল না।
শুক্রবার বিধানসভা অধিবেশনে হাজির ছিলেন মমতা এবং শুভেন্দু দু’জনেই। সংবিধান দিবস উপলক্ষে দু’জনেই বক্তৃতা দেন বিধানসভায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা সেখানেও সৌজন্য দেখান। বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু যখন বক্তৃতা দিতে উঠছেন, তখন তৃণমূলের বিধায়কদের আসন থেকে নানা মন্তব্য উড়ে আসতে শুরু করেছিল। মমতা তাঁদের থামিয়ে দেন। উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘কেউ বাধা দেবে না। সবাই চুপ করে থাকো।’’ মমতার এই সৌজন্যবোধ বজায় ছিল শুভেন্দুর বক্তৃতার পরও। গণতন্ত্র নিয়ে বক্তৃতা দিতে উঠে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন শুভেন্দু। গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র— ‘মানুষের জন্য, মানুষের দ্বারা, মানুষের সরকার’-এর অনুকরণে শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, এই সরকার চলে ‘অফ দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, ফর দ্য পার্টি’। মমতা কিন্তু তেমন জোরালো প্রতিবাদ জানাননি। বরং এর পরই মার্শালকে দিয়ে শুভেন্দুকে ডেকে পাঠান। বিরোধী দলনেতার সেই ডাকে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যানও। কিন্তু তাল কাটল ঠিক তার পরই।
বিরতির পর মমতা আক্রমণ করলেন। একদা তৃণমূলে তাঁর সহকর্মী এবং বর্তমানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে পুরনো সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভরা অধিবেশন কক্ষে বললেন, ‘‘যাকে ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম সে এ কথা বলল। তা হলে আমি কী বলব, কেন্দ্রীয় সরকার কী করে চলে অফ দ্য এজেন্সি, বাই দ্য এজেন্সি ফর দ্য এজেন্সি।’’ কেন্দ্র যে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে ব্যবহার বিরোধী দলগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করছে, তা বরাবরই বলেন মমতা। শুভেন্দুর বক্তৃতার সমালোচনা করে ফের সেই প্রসঙ্গই টেনে আনেন তিনি। এ দিকে, বিধানসভার বাইরে এসে শুভেন্দু একের পর এক ইস্যুতে আক্রমণ শুরু করেন রাজ্য সরকারকে।
শুভেন্দু প্রথমেই দুর্নীতি, মহার্ঘ্য ভাতা ইস্যুতে সরব হন। বিজেপি বিধায়কদের মমতার সরকার অসম্মান করে বলেও মন্তব্য করেন। তার পরই সোজাসাপটা জানিয়ে দেন, বিধানসভায় যদি তাঁর দলের নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে কিছু বলা হয় তবে নীতিগত ভাবেই তার প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ পর্বের পর মমতা বলেছিলেন, বিরোধীদের প্রশাসনিক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও তাঁরা আসেন না। এমনকি, মমতা এমনও অনুযোগ করেন যে, ‘‘রাজ্যপালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিরোধী দলনেতাকে। কিন্তু তিনি আসেননি।’’ বিধানসভার বাইরে সে কথারও জবাব দেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে যে ভাবে শাসকদলের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, সেই একই সম্মান কি বিজেপির বিধায়কদেরও দেয় সরকার?’’ বিরোধীরা আসেন না এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমরা তো যেতে চাই। উনি যদি সত্যিই চান যে বিজেপির বিধায়কেরা আসুন তা হলে কার্ডে নাম ছাপিয়ে আমন্ত্রণ জানান। আমরা যাব।’’
শুভেন্দু এর পরও থামেননি। মমতার সরকার যে শাসকদলের বিধায়ক এবং বিজেপির বিধায়কদের মধ্যে স্পষ্টতই অন্তর করেন, তা জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সম্প্রতি বিধানসভা থেকে একটি কার্ড ছাপানো হয়েছে। অথচ সেখানে বিরোধী দলনেতার নাম নেই। ১৯৫৬ সালের পর এই প্রথম ঘটল এমন ঘটনা। একে কী বলব তাহলে?’’ এ দিকে বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে যখন সরকারি অনুষ্ঠানে বিরোধীদের আমন্ত্রণের ধরন নিয়ে একের পর অভিযোগ করছেন শুভেন্দু, তখন মমতা ব্যস্ত ছিলেন বিধানসভার প্ল্যাটিনাম স্মারক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। সেই মঞ্চে মমতাও আবার টেনে আনেন বিরোধীদের আমন্ত্রণের প্রসঙ্গ। বলেন, ‘‘আজও এখানে বিরোধীদের আসতে বলেছিলাম, এলে ভাল হত। ওঁরা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতেন। কিন্তু এখানেও আবার ওঁরা আসেননি।’’
কথায় বলে, শেষ ভাল যার সব ভাল। শুক্রবার সকালে সৌজন্য দিয়ে যে রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তার শেষটাও সৌজন্য দিয়ে হলে তা বিরোধী রাজনীতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকতে পারত। কিন্তু দেখা গেল, শেষ পর্যন্ত আর কোনও পক্ষই তাঁদের অনুযোগ ভুলে সৌজন্যের বেড়ায় আটকে থাকতে পারলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy