মৃত স্বামীর পাওনা আদায়ে সমর্থ হলেন পার্বতী। প্রতীকী ছবি
প্রায় ২২ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। কিন্তু আইনের চোখে তা প্রমাণ করতে পারেননি বৃদ্ধা স্ত্রী। আবার প্রমাণ করতে না পারায় এত দিন চাকরি সূত্রে স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি আদায় করতেও ব্যর্থ হন। তবে লড়াই থেকে পিছু হঠেননি তিনি। সংস্থার বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখেছিলেন নিজের পাওনা বুঝে নিতে। অবশেষে তা সম্পন্ন হল। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে এত বছর পর ফিরে পেতে চলেছেন স্বামীর রেখে যাওয়া চাকরির টাকা। অবাক করার মতো এমনই ঘটনা ঘটল পার্বতী দাস নামে এক ৬৪ বছরের বৃদ্ধার জীবনে।
হুগলির বৈদ্যবাটির বাসিন্দা পার্বতী। তাঁর স্বামী শঙ্কর দাস হুগলির একটি জুটমিলে কাজ করতেন। পরিবারের দাবি, ২০০০ সালের মে মাসে গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে যান শঙ্কর। এর পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। অনেক খুঁজেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। প্রায় দু’মাস পর থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন শঙ্করের স্ত্রী পার্বতী। কিন্তু তার পরেও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি শঙ্করের। আট বছর পর চাকরি সূত্রে স্বামীর ইডিএলআই-এর জমানো টাকা তুলতে চেয়ে জুটমিল সংস্থার কাছে আবেদন করেন। সংস্থাটি তখন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ছিল। তারা জানায়, স্বামীর মৃত্যুর প্রমাণ দেখাতে হবে পার্বতীকে। অথচ আইন মোতাবেক যদি পরিবার দাবি করে, কোনও ব্যক্তি টানা আট বছর নিখোঁজ থাকলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জুটমিল সংস্থাটি তা মানতে চায়নি। এর পর চন্দননগর মহকুমা আদালতের দ্বারস্থ হন পার্বতী। তাঁর আবেদন, তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। আবার আইন অনুযায়ী তা বৈধ। তার পরেও কোনও বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিচ্ছে না সংস্থাটি।
২০০৯ সালে মহকুমা আদালত নির্দেশ দেয়, দেওয়ানি আইন মোতাবেক পার্বতীর স্বামী মৃত। ফলে এখন স্বামীর সম্পত্তির উপর স্ত্রী অধিকার জানাতেই পারে। আদালতের ওই নির্দেশ মেনে নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সংস্থাটি। তারা ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। প্রায় আট বছর ধরে উচ্চ আদালতে চলে ওই মামলার শুনানি। মামলাটি একক বেঞ্চ হয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। তাঁর স্বামী যে প্রয়াত হয়েছেন সর্বত্র তাই-ই প্রমাণ করতে হয় পার্বতীকে। অবশেষে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখে। বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও হিরণময় ভট্টাচার্য নির্দেশ দেন, সমস্ত পাওনা টাকা মিটিয়ে দিতে হবে ওই বৃদ্ধাকে। আদালতের এই রায়ের ফলে ১১ বছরের লড়াই শেষ হল তাঁর। তিনি জয়ী হলেন। এবং মৃত স্বামীর পাওনা আদায়ে সমর্থ হলেন।
এই মামলায় ওই বৃদ্ধার হয়ে উচ্চ আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কল্লোল বসু এবং নীলাঞ্জন পাল। কল্লোল বলেন, ‘‘প্রথমে ওই বৃদ্ধাকে নিজের স্বামীর মৃত্যুর প্রমাণ দিতে হয়েছে। তার পর চাকরি থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে এত দিন লড়াই করেছেন। তিনি যে মিথ্যা দাবি করেননি আদালতের হস্তক্ষেপে অবশেষে তা প্রমাণিত হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy