Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Dev

মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে দেবের বৈঠকের পরেই ঘাটালে সাংগঠনিক বদল, পদ গেল প্রাক্তন বিধায়কের

সাংসদ দেব আবার ঘাটাল থেকে প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। সেই আবহে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হল প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দলুইকে।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেব।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেব। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা ও ঘাটাল শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৪
Share: Save:

আসন্ন লোকসভা ভোটে তৃণমূল সাংসদ দেব (দীপক অধিকারী) আবার ঘাটাল থেকে প্রার্থী হবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা অব্যাহত। সেই আবহে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হলে প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দলুইকে। ঘটনাচক্রে, শনিবারই তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন দেব। তার পরেই ঘাটালে এই বদল। শঙ্করের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হল ডেবরার প্রাক্তন বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতিকে। রাধাকান্ত আগে ডেবরা ব্লক সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন।

ঘাটালে তিনটি প্রশাসনিক পদ থেকে দেব ইস্তফা দেওয়ার পরেই জল্পনা শুরু হয়, অভিনেতা-সাংসদ কি আসন্ন লোকসভা ভোটে আর প্রার্থী হতে চাইছেন না? অনেকের দাবি ছিল, মূলত শঙ্করের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে আর ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন না সাংসদ। তবে শঙ্কর বা দেব কেউই এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কখনও কিছু বলেননি। তবে আলোচনা চলছিলই। সংসদে বাজেট অধিবেশনের জন্য দিল্লি গিয়ে দেবের কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে সেই জল্পনা আরও বাড়ে। তার মধ্যেই গত বুধবার একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসে। সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সেই অডিয়ো ক্লিপে দেবের বিরুদ্ধে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। দাবি, অডিয়ো ক্লিপে শঙ্করের কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে। শঙ্কর অবশ্য তা অস্বীকার করেছেন। দেবও এ ব্যাপারের বলেছিলেন, ‘‘দিদিই উত্তর দেবেন।’’ সে সব নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্কের মধ্যেই শনিবার মমতা-অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেন দেব। ঠিক তার পরেই শঙ্করকে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।

পদ যাওয়ার পর শঙ্কর বলেন, ‘‘দল ভাল মনে করেই রাধাকান্ত মাইতিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে বলার কিছু নেই।’’ প্রাক্তন বিধায়কের বক্তব্য, তাঁর সঙ্গে দেবের কোনও গোলমাল নেই। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সাংগঠনিক পদে রদবদলের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি শঙ্কর। ঘটনাচক্রে, গত নভেম্বর মাসেই ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।

গত কিছু দিন ধরেই দলের হয়ে ভোটে না লড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন দেব। দিন কয়েক আগে ঘাটালের তিনটি প্রশাসনিক পদ— ঘাটাল কলেজ, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফাও দেন সাংসদ। তার পরেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে দেব লিখেছিলেন, ‘‘সংসদে আমার শেষ দিন।” এতেই অনেকের মনে হয়েছিল, ঘাটাল থেকে আসন্ন লোকসভায় দেব যে আর দাঁড়াতে চাইছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদিও সরাসরি এ ব্যাপারে কখনওই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানাননি দেব। অন্য দিকে, দলনেত্রী বরাবরই বুঝিয়ে এসেছেন, তিনি দেবকে দলের সাংসদ হিসাবে দেখতে আগ্রহী। সম্প্রতি একটি প্রশাসনিক বৈঠকে দেবকে ‘দলের সম্পদ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর মধ্যেই শনিবার বিকেলে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন দেব। তবে মমতা বা অভিষেকের সঙ্গে দেবের কী আলোচনা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। মমতা, অভিষেক বা দেব কেউই সে ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে জোড়া বৈঠক সেরে দেবের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “আমি ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি আমাকে ছাড়বে না!”

দলের একটি অংশের মত, দেবকে নিয়ে যত টানাপড়েনের মূলে ছিল সাংসদের সঙ্গে শঙ্করের ‘শীতল সম্পর্ক’। যা আরও স্পষ্ট হয়ে যায় গত বুধবারের অডিয়ো ক্লিপকাণ্ডে। তাতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, দেব নাকি তাঁর কাছ থেকে এমপি ল্যাড (সাংসদ তহবিল)-এর ৩০ শতাংশ কমিশন চেয়েছেন। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘আমি দিদিকে এমন কথা বলেছি যে, দেব আমার কাছ থেকে তাঁর এমপি ল্যাড থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন চাইছেন। দিদি বলেছেন, ‘ছেড়ে দে। ওর কাজটা করিস না।’ কিন্তু আমি তো দিদিকে বলেছি। দিদি জানে। সব দেখেও তো ওকে সাপোর্ট করেছেন। কেন করেছেন? ওকে আবার রাজনীতিতে প্রয়োজন। কাজেই ভালমন্দ, এখানে সততা বলে কিছু নেই। সততার মূল্য নেই। যে যত চুরি জোচ্চুরি-বাটপাড়ি করতে পারবে, তারাই গিয়ে ওই...।’’ বিরোধীদের দাবি, অডিয়ো ক্লিপের কণ্ঠস্বর যাঁর, তিনি আর কেউ নন, ঘাটালের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দলুই। শঙ্কর অবশ্য দাবি করেছেন, ওই কণ্ঠস্বর তাঁর নয়।

ওই অডিয়ো ক্লিপ প্রসঙ্গে দেবের বক্তব্য ছিল, যে হেতু ওই ব্যক্তির সঙ্গে দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা হয়েছে, তাই যা উত্তর দেওয়ার দিদিই দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার উপর কিছু নির্ভর করে নেই। আমার যা করার, যা বলার, তা আমি দলকে বলে দিয়েছি। যে অডিয়ো ক্লিপটি বেরিয়েছে, সেই মতো দেখলে, দিদি আর ওর মধ্যে কিছু কথা হয়েছ। দিদিই উত্তরটা দেবেন। আমার কিছু বলার নেই।’’

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, শঙ্করের সঙ্গে বিবাদের কারণে দেব যে রাজনীতি নিয়ে খানিক ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়েছিলেন অনেক দিন ধরে, তা নেতৃত্বের অজানা নয়। সম্প্রতি ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার কমিটি গঠন নিয়ে ওই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। তা-ও শীর্ষ নেতৃত্বের কানে পৌঁছেছিল। এ সবের মধ্যেই গত জানুয়ারি মাসে কালীঘাটে দলনেত্রী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই তিনি ইঙ্গিত দেন, এ বারের লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেবকেই প্রার্থী করতে চান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই দেব-বিরোধী নেতারাই বৈঠকে খানিকটা চাপে পড়েছিলেন। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা নেতৃত্বের প্রতি মমতার এমন রুষ্ট হওয়ার ঘটনাতেই লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন উপস্থিত নেতারা। তার পরেও তিনটি সরকারি পদ থেকে দেবের ইস্তফা এবং পরে অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার ঘটনায় নেতৃত্ব যে খুব একটা খুশি নন, তা-ই স্পষ্ট হয়ে গেল শঙ্করকে দলীয় পদ থেকে সরানোর ঘটনায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Dev Mamata Banerjee Abhishek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy