জল্পনা উড়িয়েছেন লকেট, সৌমিত্র, অনুপমরা। ফাইল চিত্র
দু’বারের বিজেপি সাংসদ ছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি এখন তৃণমূলের বিধায়ক। সেই ঘা শুকোতে না শুকোতেই পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলবাসী হয়েছেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। জল্পনা মিলিয়েই পর পর দুই সাংসদ শাসকশিবিরে গিয়েছেন। আর তাতেই স্বস্তি নেই গেরুয়া শিবিরে। কারণ, দলের অন্দরে এখনও জল্পনা রয়ে গিয়েছে তিন নেতাকে নিয়ে। তৃণমূলের তরফেও বিভিন্ন সময়ে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা নাকি নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
ওঁরা কারা? ওঁরা লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ এবং অনুপম হাজরা।
প্রথম দু’জন হুগলি ও বিষ্ণুপুরের সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি রাজ্যে সাংগঠনিক পদেও রয়েছেন। লকেট রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এবং সৌমিত্র সহ-সভাপতি। দু’জনেই অতীতে দুই শাখা সংগঠন মহিলা মোর্চা এবং যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অনুপম জনপ্রতিনিধি না হলেও বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় সম্পাদক এবং বিহারের সহ-পর্যবেক্ষক।
এই তিন নেতাকে নিয়ে দল যে ‘অস্বস্তিতে’, তা প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার না করলেও জল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে গেরুয়া শিবিরে কান পাতলেই। তাঁরা নাকি তৃণমূলের সঙ্গে তলে-তলে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যদিও তিনজনেই তা সপাটে অস্বীকার করেছেন। তিনজনেই বলেছেন, দলবদলের কোনও ভাবনাই নেই তাঁদের মনে। কিন্তু জল্পনাকারীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন অর্জুনের কথা। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলেও তার আগের দিন পর্যন্ত যিনি সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
লকেটকে নিয়ে জল্পনা অবশ্য নতুন নয়। ‘বাবুল-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত লকেট দলবদল করতে পারেন বলে শোনা গিয়েছিল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সময় থেকেই। তবে রাজ্যে বিজেপিতে গুরুত্ব সে ভাবে কমেনি হুগলির সাংসদের। দিলীপ ঘোষ জমানার রাজ্য সংগঠনে অনেক বদল এনেছেন নতুন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু লকেটের পদ একই থেকে গিয়েছে। অনেকে বলেন, লকেট বরাবরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পছন্দের। সেই সূত্রেই উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব পান। তবে রাজ্য বিজেপিতে নিজে পদ পেলেও বাদ-পড়া সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদার, রীতেশ তিওয়ারিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন লকেট। সাংগঠনিক বৈঠকেও সরব হন। তাতেই ফের দলবদলের জল্পনায় এসে যান। মাঝে কিছুদিন সে ভাবে সাংগঠনিক কাজে তিনি অংশ নিচ্ছিলেন না বলেও অভিযোগ ওঠে।
লকেট এখন আবার রাজ্যে সক্রিয়। কিন্তু নতুন করে জল্পনার কেন্দ্রে অর্জুনের দলবদলের পর। লকেট অবশ্য অর্জুনের মতোই বলছেন সবটাই ‘গুজব’। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল আমাদের দুর্বল করতেই এ সব রটাচ্ছে। বিজেপি আমায় যে সম্মান দিয়েছে, তার পরে দলবদল করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’ যাঁরা ইতিমধ্যেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন তাঁরা অসম্মানের সঙ্গেই রয়েছেন বলেও দাবি লকেটের। তাঁর কথায়, ‘‘বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে গিয়ে কী পেয়েছেন? এখনও দ্বিতীয় একাদশেই রয়ে গিয়েছেন। আর আমি যাবই বা কেন?’’
লকেটের মতোই ঘোর জল্পনা সৌমিত্রকে নিয়েও। তাঁকে দলে ধরে রাখতে সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতায় বৈঠকও করেন। অর্জুন, সৌমিত্রকে একসঙ্গে বোঝানোর দায়িত্ব নাকি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই দিয়েছিলেন শুভেন্দুকে। অর্জুনকে ধরে রাখা যায়নি। এখন বিষ্ণুপুরের সাংসদকে ‘বশে’ রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। সৌমিত্রও অবশ্য লকেটের সুরেই বলছেন সব ‘গুজব’। তিনি বলেন, ‘‘আমার যা রাজনৈতিক খিদে, তা কোনও দিন তৃণমূল মেটাতে পারবে না। এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি। বিজেপিতে থেকে আমি সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।’’
কিন্তু মাঝে মাঝেই তিনি দলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন? ক’দিন আগেই রাজ্য নেতৃত্বকে ‘অপরিণত’ বলে মন্তব্য করেছেন। সেটা কিসের ইঙ্গিত? জবাবে সৌমিত্র বলেন, ‘‘নিজের দলের ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া মানে কি অন্য দলে চলে যাওয়া? আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, সৌমিত্র কোনও দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে থেকে কাজ করতে পারবে না।’’
জল্পনার তৃতীয় চরিত্র অনুপম কথায়-কথায় দলের বিরুদ্ধে সরব হন নেটমাধ্যমে। রাজ্যে বা বিহারে দলীয় কর্মসূচিতেও দেখা যায় না তাঁকে। বারংবার বিজেপির অস্বস্তি বাড়ানো অনুপম অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি কোনও দিন ‘দলবদলু’ হতে পারবেন না। অনুপমের কথায়, ‘‘আমি কিন্তু তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসিনি। আমায় তৃণমূল সাসপেন্ড করেছিল সোজা কথা সোজা ভাষায় বলার জন্য। এর পর বেশ কিছুদিন রাজনীতিই করিনি। ইচ্ছেও ছিল না। পরে বিজেপিতে যোগ দিই।’’ কিন্তু এখন যে শোনা যাচ্ছে, তিনি শীঘ্রই তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন? অনুপমের জবাব, ‘‘যাঁরা এটা বলেন, তাঁদের জন্য বলছি, যে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেবেন, সে দিন আমি তৃণমূলে যাব।’’
তিন নেতার এমন অস্বীকারমূলক বক্তব্যও কি রাজ্যের গেরুয়া শিবিরকে স্বস্তি দেবে? সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখলে, না। বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাঁরা তৃণমূল থেকে এসেছিলেন, সেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সব্যসাচী দত্তদের ক্ষেত্রে জল্পনা সত্যি হয়েছে। বড় ধাক্কা দিয়ে চলে গিয়েছেন মুকুল রায়ও। এর পরে যে যে বিধায়ককে নিয়ে রাজনৈতিক মহলে দলবদলের আলোচনা শুরু হয়েছিল, তার প্রতিটিই সত্যি হয়েছে। যার শেষতম উদাহরণ সাংসদ অর্জুন সিংহ।
গেরুয়া শিবিরে তাই স্বস্তি নেই।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy