কিছু দিন আগেও ভাবা যায়নি। ভিন্ দেশি পর্যটক টানার তালিকায় কেরল, গোয়া, রাজস্থান, কর্নাটকের মতো তারকা রাজ্যকে টেক্কা দিয়ে উপরে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নাম। সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, গত বছর দেশীয় পর্যটকের সংখ্যার বিচারে তামিলনাড়ু প্রথম, আর এ রাজ্য ছিল অষ্টম স্থানে। তালিকায় এই জায়গাটি দখল করতে রাজস্থান ও গুজরাতকেও পিছনে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৫-য় বাংলায় আসা ভিন্ রাজ্যের পর্যটকের সংখ্যা ৭০ লক্ষের বেশি। আর ওই দুই রাজ্যে গিয়েছেন এর প্রায় অর্ধেক পর্যটক।
আর কেন্দ্রের ওই রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫-য় বিদেশি পর্যটকের সংখ্যার বিচারে পশ্চিমবঙ্গ পাঁচ নম্বরে। ছয়ে রাজস্থান, সাতে কেরল। কর্নাটক ও গোয়ার স্থান যথাক্রমে নয় ও দশে। এ ক্ষেত্রেও প্রথম স্থান ধরে রেখেছে তামিলনাড়ুই। তার পরে ক্রম অনুযায়ী মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লি। গত বছর পশ্চিমবঙ্গে বেড়াতে এসেছেন প্রায় ১৫ লক্ষ বিদেশি।
কিন্তু হঠাৎ এটা হলো কোন ম্যাজিকে?
রাজ্যের পর্যটন কর্তারা বলছেন, দার্জিলিং থেকে সুন্দরবন— দর্শনীয় যা কিছু, আগের মতোই রয়েছে। ফারাক হয়েছে দৃষ্টিভঙ্গিতে। পর্যটক টানাটাই প্রধান কাজ, সেই পেশাদারি ভাবনা এখন গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই কলকাতায় হোর্ডিং ঝুলিয়েই কাজ ফুরোচ্ছে না। দিল্লির মেট্রো রেলের কামরাতেও চোখে পড়ছে: ‘এক্সপিরিয়েন্স বেঙ্গল— দ্য সুইটেস্ট পার্ট অব ইন্ডিয়া।’ দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু জুড়েও হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। প্রচার করা হচ্ছে আমদাবাদ, সুরাত, নাগপুর, কোচি, কোয়ম্বত্তূর, বিজয়ওয়াড়া, ভুবনেশ্বরেও। বিজ্ঞাপনী জিংগল শোনা যাচ্ছে স্থানীয় এফএম চ্যানেলে। পশ্চিমবঙ্গের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও খাবারের বিপুল বৈচিত্রের কথা বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, ‘‘এই সব শহর থেকে বহু মানুষ এ রাজ্যে আসছেন। আরও বেশি পর্যটক চাই আমরা।’’
আবার এক-একটি রাজ্যের পর্যটকদের এক-এক রকম চাহিদা। সেই অনুযায়ী পর্যটন দফতর তাদের বিপণনের ডালি সাজাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের মানুষের কাছে এই রাজ্যের মন্দির ও স্থাপত্যের আকর্ষণ বেশি। সেখানে রাজ্য নিজেকে সেই ভাবে তুলে ধরছে। আবার বেঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দফতর মূলত প্রচার করছে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস-এর। দক্ষিণ ভারতের উপকূলবর্তী জায়গায় প্রচার করা হচ্ছে দার্জিলিং পাহাড়ের। বাংলাদেশের পর্যটকদের আবার পছন্দ নবাবি মুর্শিদাবাদ।
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ভাল মানের কিছু বেসরকারি হোটেল-রিসর্ট ছিলই। সুন্দরবনে আসা বিদেশি অতিথিরা মূলত থাকেন তিনটি বেসরকারি রিসর্টে। সেই সঙ্গে পরিষেবার মান বেড়েছে সরকারি লজগুলোয়। গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা। মূর্তি নদীর কাছে পর্যটন উন্নয়ন নিগম রিসর্ট চালু হলেও খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ছিল। অভিযোগ খতিয়ে দেখে রেস্তোরাঁর দায়িত্বে থাকা সংস্থার চুক্তি বাতিল করেছে নিগম।
বিদেশিদের নিয়ে আসেন, রাজ্যের এমন এক ট্যুর অপারেটর বলেন, ‘‘মন্দির ও টেরাকোটা শিল্পের বিষ্ণুপুরে ভিন্ রাজ্যের পর্যটকদের চেয়েও বেশি সমাগম বিদেশিদের। অথচ থাকার ভাল জায়গা বলতে শুধু সরকারি ট্যুরিস্ট লজ। এটিকে সম্প্রতি ঢেলে সাজা হয়েছে।’’ ওই ব্যবসায়ী জানান, এতে বিদেশি ট্যুরিস্টের সংখ্যা বেড়েছে। বছরে অন্তত ১০০ পশ্চিমি পর্যটক বিষ্ণুপুরের ট্যুরিস্ট লজে থাকেন। কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুর ঘুরে সে দিনই ফিরে আসেন এর অন্তত ১০ গুণ বিদেশি।
শুধু বিষ্ণুপুর নয়, সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে বলে নামজাদা কিছু সংস্থা হোটেল-রিসর্ট তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে।
পর্যটক টানতে নাছোড় প্রচারেই ভরসা করছেন দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি জানান, প্রচারের জন্য পর্যটন দফতর এ বছর খরচ করবে ৩০ কোটি টাকা। এই বাজেট বাড়ানোও হতে পারে।
পর্যটন উন্নয়ন নিগমের এক কর্তার কথায়, ‘‘এপ্রিল-মে-জুন, এই তিন মাসে গত বছর নিগমের লাভ ছিল এক কোটি টাকা। এ বছর সেটা দু’কোটির বেশি। গোটা বছরে নিগম ১০ কোটি টাকা লাভ করবে বলে আশা করছি আমরা।’’
পর্যটনমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন আমরা টক্কর দিচ্ছি মধ্যপ্রদেশ, কেরল ও গোয়ার সঙ্গে। রাজ্যের পর্যটকেরা তো আছেনই। বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে অন্য রাজ্য ও অন্য দেশ থেকে পর্যটক টানতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy